ছোটদের পোশাক

নতুন পোশাক পরে বেড়ানোর মধ্যে সব থেকে আনন্দ খুঁজে পায় শিশুরা। তাই ঈদের সময় ছোটদের জমা-কাপড়ের আয়োজনে থাকে ভিন্নতা।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 11:05 AM
Updated : 25 June 2016, 11:05 AM

নতুন পোশাক নিয়ে শিশুদের পাশাপাশি তাদের মায়েদের আনন্দ উচ্ছ্বাসেরও শেষ নেই। ছোট্ট এরহান বয়স মাত্র ১৪ মাস। মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছে গুলশান-১ আড়ং-এ। অসম্ভব ভীড়ের মধ্যে নানা আর নানুকে হারিয়ে মা-ছেলে এক কোনায় বসে আছেন।

এরহানের মা দিলশাদ কামাল বলেন, “এরহান এখনও শপিংয়ের কিছু বোঝে না তবে, ওকে কোনো পোশাক দেখিয়ে, ‘আব্বু এটা নিবে?’ বললে খুব খুশি হয়। হাত পা নেড়ে সায় দায়, সেটা দেখতে খুবই ভালো লাগে।

একটু বড় শিশুরা অবশ্য হাত-পা নেড়েই খুশি না। তারা রীতিমতো মতামত দিচ্ছে তাদের কী রংঢংয়ের পোশাক চাই। কেউ কেউ নিজে থেকেই পোশাক নিয়ে আয়নায় দেখে নিচ্ছে তাকে মানাবে কি-না।

সাদাকালোর ছোটদের পোশাক।

রাজধানীর সবগুলো বিপণী বিতানেই বাবা মায়েদের সঙ্গে শিশুদের ঘোরাফেরা লক্ষণীয় মাত্রায় দেখা যাচ্ছে। পোশাক নিয়ে বড়দের মতো তাদেরও বাছ বিচারের শেষ নেই। কেউ কেউ রীতিমতো বিক্রেতাদের পোশাক নিয়ে পরামর্শও দিচ্ছে ঠিক বিশেষজ্ঞদের মতোই।

সাদাকালো’র ডিজাইনার তাহসীনা শাহীন জানান, ছোটরা সব সময় বড়দের সাজসজ্জা লক্ষ করে। বাবা মায়ের পোশাক জামার সঙ্গে মিলিয়ে তারাও পোশাক পরতে চায়। এই কথা মাথায় রেখে সাদাকালো ২০০৪ সাল থেকে বাবা মায়ের পোশাকের সঙ্গে মিল করে সন্তানের জন্য ‘তুমি আমি এক চিমটি’ শিরোনামে পোশাক করে আসছে।

“এগুলো মূলত বড়দের পোশাকেরই ছোট মাপ” বললেন শাহীন।

রংয়ের বাধ্যবাধকতা থাকায় সাদাকালোতে পোশাকে সব ধরনের কাজই পাওয়া যাবে। এমব্রয়ডারি, প্যাচ ওয়ার্ক, সুতার কাজ, ব্লক, টাই-ডাই, সব ধরনের কাজের পোশাকের সন্ধানই মিলবে সাদাকালোর কালেকশনে, জানালেন শাহীন।

কে ক্রাফটের ছোটদের পোশাক।

বিশ্বরঙ’য়ের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, “ছোটদের ঈদের পোশাকে যেমন উৎসবের ছোঁয়া চাই তেমনি চাই আরামও। এ বছর ঈদ বর্ষায় হওয়ায় স্যাঁতস্যাঁতে গরম এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতার মাথায় রেখে পোশাকের ডিজাইন করা হয়েছে।”

বিপ্লব সাহার মতে, উৎসবের পোশাক মানেই জাঁকজমক কাজ নয়, তাই বিশ্বরঙ’য়ের পোশাকের নকশায় কিছু কাজের মধ্যে কিছু নকশা ছাড়া প্লেইন কাপড়ও রাখা হয়েছে। বিশ্বরঙে মেয়ে শিশুদের জন্য রয়েছে, স্কার্ট-টপস, ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ এবং শাড়িও। ছেলে শিশুদের জন্য রয়েছে শুধু পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবি-পায়জামার সেট এবং টি-শার্ট।

বিশ্বরঙেও বাবা-মায়েদের মিলিয়ে ছেলে-মেয়েদের পোশাক বানানো হয়েছে।

আড়াই থেকে ১২ বছরের শিশুদের পোশাক পাওয়া যাবে যাবে বিশ্বরঙ-এ। দাম ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকার মধ্যে।

সাদাকালো এবং বিশ্বরঙ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ফ্যাশন হাউজেই পাওয়া যাবে শিশুদের পোশাক। যাত্রা, কে-ক্রাফট, অঞ্জনস, দেশাল, লা রিভসহ প্রভৃতি ফ্যাশন হাউজে নানান বিষয়বস্তু মাথায় রেখে ছোটদের উৎসবের পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে। সাধারণত দুই থেকে ১২ বছরের শিশুদের পোশাক এসব ফ্যাশন হাউজগুলোতে পাওয়া যাবে।

লা রিভের ছোটদের পোশাক।

একদম নবজাতক থেকে সব বয়সের ছেলে এবং মেয়ে শিশুদের পোশাক পাওয়া যাবে আড়ং-এর সবগুলো আউটলেটে।

শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে অনেকেই এখন পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক বা ফিউশন ধর্মী পোশাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ ধরনের পোশাক পাওয়া যাবে ওয়েসটেক্স, আর্টিসান, টেক্সট মার্ট, জেন্টেল পার্ক এবং ইয়োলোর আউটলেটে।

বেইলী রোডে আর্টিসানের আউটলেটে আসা একজন ক্রেতা শারমিন রহমান বলেন, “বাচ্চাদের পোশাক ঝলমলে হলে সেটা দেখতে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু এ ধরনের পোশাক শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরানো যায়। ঈদ সারাদিনের উৎসব। তাই গেঞ্জির কাপড়ের ওয়েস্টার্ন পোশাক পরালে আরামও হবে আর দেখতেও বেশ ভালো দেখাবে।”

এবারের ঈদের মূল আকর্ষণ মেয়ে শিশুদের জন্য তৈরি করা ‘রেডিমেইড’ শাড়ি। স্কার্টের মতো ইলাস্টিক বা ফিতা দিয়ে বানানো কুঁচি বসানো এই শাড়ি পাওয়া যাবে আড়ং, বিশ্বরঙ এবং সাদাকালোর আউটলেটগুলোতে।

তবে তুলনামূলক বড় বয়সি মেয়ে শিশুদের জন্য সাধারণ শাড়িও রয়েছে। দাম শুরু ১ হাজার টাকা থেকে।

লা রিভের ছোটদের পোশাক।

শিশুদের সাজ শুধু পোশাকেই থেমে থাকে না। বড়দের মতো তারাও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে জুতার খোঁজ করে। ছোটদের পছন্দ এবং মাপ মতো জুতা পেতে হলে এলিফ্যান্ট রোডের গফুর ম্যানশন, চৌরঙ্গী প্রভৃতি মার্কেটে যেতে হবে। এ ছাড়াও বাটা, এপেক্স, বে প্রভৃতি ব্র্যান্ডের দোকানে মিলবে শিশুদের উপযোগী জুতা।

তবে চামড়ার জুতা বাছাই না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বর্ষার মৌসুমে চামড়া ভিজে ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে, এগুলো শিশুদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হবে।

ঈদে সব শিশুই বড়দের কাছ থেকে আদর ও ভালোবাসার সঙ্গে পাবে ঈদি। সেই ঈদি রাখার জন্য চাই ছোট্ট ব্যাগ বা বটুয়া। প্রায় সব ফ্যাশন হাউজেই এইসব বটুয়া পাওয়া যাবে। আকার অনুযায়ী দাম শুরু ২শ’ টাকা থেকে।