বর্ষাকালে সুন্দরবনে

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ শ্বাসমূলীয় বন তার চূড়ান্ত সৌন্দর্য মেলে ধরে বর্ষাকালেই। এবারের নয় দিনের ঈদের ছুটি ভরা বর্ষায়। বৃষ্টিভেজা সুন্দরবনের রূপ দেখতে তাই এসময়ে চলুন সুন্দরবনে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2016, 11:29 AM
Updated : 24 June 2016, 11:29 AM

দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশাল সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি বাংলাদেশ অংশে। বিশাল এ বনের পরতে পরতে যেমন রোমাঞ্চের হাতছানি তেমনি তার রূপের ঢালি। সকাল-দুপুর, সন্ধ্যা-রাত সবসময়ই সে নানান রূপে ধরা দেয়।

বর্ষায় সুন্দরবনের রূপ নিয়ে কিছু না বললেই নয়। এখানে বর্ষার চরিত্র একটু ভিন্নধর্মী। রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি এখানে খুব বেশি। এই ঝুম বৃষ্টি, আবার ফকফকা রোদ। বৃষ্টির আগে নিকষ কালো মেঘ যেমন আকাশ ঢেকে ফেলে। বৃষ্টির পরে আবার উঁকি মারে ঝকঝকে নীলাকাশ। বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় সুন্দরবনের গাছপালাও সজীব থাকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে।

হারবাড়িয়ার খালে জেলে নৌকা।

বর্ষায় সুন্দরবন ভ্রমণের অন্যতম জায়গা হাড়বাড়িয়া এবং কটকা অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন বনবিভাগের উদ্যোগে হাড়বাড়িয়ায় গড়ে তোলা হয়েছে হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। এটির অবস্থান খুলনা থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে।

হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সামনের খালটিতে কুমিরের আনাগোনা বেশি। তবে বর্ষায় তার দেখা পাওয়া কঠিন। শীতেই এ খালে বেশি কুমির দেখা যায়। এছাড়া হাড়বাড়িয়ায় দেখা যায় সুন্দরনের বিরল মায়া হরিণ। এখানকার ছোট ছোট খালগুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙ্গাসহ নানান পাখি। পৃথিবীর বিপন্ন কালোমুখ প্যারাপাখি বা মাস্ক ফিনফুটও ঢের দেখা মেলে এ এলাকায়।

হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে ঢুকতে শুরুতেই খালের উপর ঝুলন্ত সেতু। একটু সামনেই বিশাল এক পুকুর। এর মাঝখানটায় গোলপাতায় ছাওয়া গোলাকার বিশ্রামাগার।

পুকুরটির উত্তর-পশ্চিম কোনা থেকে শুরু হয়েছে কাঠের তৈরি হাঁটাপথ। ঘন জঙ্গলের ভেতরে এঁকেবেঁকে সে পথ গিয়ে মিলেছে একটি ওয়াচ টাওয়ারে। পুকুরটির পূর্ব-দক্ষিণ কোনের এ ওয়াচ টাওয়ার। পুরো পথটির বেশিরভাগই কাঠের ট্রেইল। যে কোনো এক দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলে অন্যপ্রান্তে এসে শেষ হবে।

হাড়বাড়িয়ার জঙ্গলে সুন্দরী গাছ বেশি। এ জায়গাটিতে বাঘেরও আনাগোনা বেশি। প্রায়ই বাঘের পায়ের তাজা ছাপ দেখা যায় এখানে। এছাড়া চিত্রা হরিণ ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণীও এখানে দেখা যায়।

সাদা ঠোঁট সবুজ বোড়া সাপ। কটকা অভয়ারণ্য থেকে তোলা ছবি।

বর্ষায় সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা কটকা অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের সুন্দরতম জায়গাগুলোর একটি এটি।

এখানে পর্যটক-লঞ্চ নোঙর করে কটকা খালে। বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা কটকার খালকে আসলে খাল বললে ভুল হবে। এটি নদীর থেকে কোনো অংশে কম নয়। কটকা খালের পশ্চিম পাড়ে বন কার্যালয়। এখানে বনের ভেতরে সোজা পশ্চিমে চলে গেছে কাঠের তৈরি ট্রেইল। এর শেষ মাথায় সবসময়ই সুন্দর সূর্যাস্ত দেখা যায়। ট্রেইল থেকে নেমে উত্তরে সামান্য দূরে বনের ভেতর টাইগার ডেন। এ জায়গাটিতে বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে। কটকা খালের পশ্চিম তীরে আকাশ ছোঁয়া দীর্ঘ কেওড়ার বন। এ জায়গায় সবসময়ই দেখা যায় চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, বানর আর নানান পাখি।

কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক বিপরীতে খালের পূর্ব দিকে বয়ে চলা টাওয়ারের খাল। এ খালের সামান্য সামনেই হাতের ডানে ওয়াচ টাওয়ারে যাওয়ার জেটি। এ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য। ওয়াচ টাওয়ারের নিচে বিস্তীর্ণ ঘাসবনে দলে দলে হরিণ দেখা যায়। ওয়াচ টাওয়ারকে পেছনে রেখে দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। তবে এ সৈকত সমুদ্রস্নানের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। 

প্যাকেজ ভ্রমণ

হারবাড়িয়ার জঙ্গলে বানর যুগলের বৃষ্টি বিলাশ।

সুন্দরবনের গহীনে ভ্রমণের জন্য অভিজ্ঞ ভ্রমণ সংস্থার সহায়তা জরুরি। সুন্দরবনে ভ্রমণে শীতকালে নানান প্যাকেজ থাকলেও ঈদের ছুটিতে বর্ষায় সুন্দরবনে বিশেষ প্যাকেজ ভ্রমণের আয়োজন করেছে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস।

এবারের ঈদের ভ্রমণের শুরু ৮ জুলাই থেকে। ভ্রমণসূচিতে থাকছে হাড়বাড়িয়া ও কটকা। খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা, তিন রাত তিন দিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হবে ১০ হাজার টাকা, বিদেশিদের জন্যে ১৫ হাজার।

ভ্রমণ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা যাতায়াত, লঞ্চে দ্বৈত কেবিনে থাকা, খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ মূল্য, নিরাপত্তা কর্মী, গাইড সেবা প্রভৃতি। ফোন: ০২-৫৫০৩৪৩৮৫, ০১৭৭৫১০৫৩৫১।

খুলনা কীভাবে যাবেন

সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যে চিত্রা হরিণ।

ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা যেতে পারেন সড়ক ও রেল পথে।

ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে ঈগল পরিবহন, গ্রীন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন এসি বাস যায় খুলনা। ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা।

এছাড়া ঈগল, সোহাগ, হানিফ, সৌদিয়া, দ্রুতি ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া জনপ্রতি সাড়ে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সপ্তাহের বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টায় আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস যায় খুলনা। ভাড়া ৩৯০ থেকে ১ হাজার ৫৯৯ টাকা।