‘২০তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৬

১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে প্রতি দু’বছর পর পর এই জাতীয় আয়োজন করে আসছে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি।

ফায়হাম ইবনে শরীফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2016, 10:12 AM
Updated : 28 May 2016, 10:12 AM

তবে এবারই প্রথম শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে চারুকলার নতুন ধারার শিল্প মাধ্যম ‘স্থাপনা শিল্প’ থেকে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ঢাকার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে পুরষ্কার বিতরনীর মধ্য দিয়ে দেশের নবীন চারুশিল্পীদের নিয়ে পক্ষাকালব্যাপী এই জাতীয় আয়োজন শুরু হয়।

সকল মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি ‘নবীন চারুকলা পুরষ্কার ২০১৬’ জিতেছেন শিল্পী সৈয়দ তারেক রহমান। রুপান্তর শিরোনামে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ মানুষের অবয়ব নিয়ে করা তার শিল্পকর্ম।

এছাড়া তিন মাধ্যম ‘উড কাট’য়ে মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম আলমগীর, ‘মিশ্র মাধ্যম’য়ে সনদ কুমার বিশ্বাস ও ‘তেলরং’য়ে মো. তানভীর জালাল শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পেয়েছেন। আর সম্মানসূচক পুরষ্কার জিতেছেন নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মো. জয়নুল আবেদীন, জুগনি দেওয়ান ও আখিনুর বিনতে আলী।

পুরষ্কার প্রাপ্ত শিল্পীদের সনদপত্র, ক্রেস্ট ও অর্থ পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করে শিল্পকলা একাডেমি।

অবশ্য বাছাই করা নবীন শিল্পীদের কাজে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন প্রদর্শনী ঘুরে দেখা দর্শনার্থীরা। যাদের মাঝে আছেন দেশের প্রবীন শিল্পী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিদেশী পর্যটক ও শিল্পীরাও।

চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী অবশ্য প্রদর্শনী নিয়ে তাঁর নতুন ভাবনার কথা জানান। 

তিনি বলেন, “নবীন শিল্পী বলে এখন আর কাউকে আলাদা করার প্রয়োজন নেই। একসময় ছিল, তখন নবীনদের জন্য এই আয়োজন শুরু হয়েছিল। এখন নবীনরা প্রযুক্তি, চিন্তা-ভাবনা, সমাজ-সংসারের অন্যান্য জায়গায় অংশগ্রহণের দিক থেকে প্রবীনদের মতোই কাজ করছে।”   

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় যে প্রদর্শনী হয় সেখানে প্রবীণরা খুব একটা অংশ নেন না। সুতরাং নবীন ও প্রবীণদের জন্য আলাদা আয়োজন না করে, একসঙ্গে বড় কলেবরে কোনো আয়োজন করা যেতে পারে।”

অবশ্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ নবীন-প্রবীণদের নিয়ে একটি মিলিত প্রদর্শনীর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেও, নবীনদের নিয়ে এই জাতীয় আয়োজন চালু রাখার পক্ষে মতামত দেন।

তিনি বলেন  “প্রবীণদের দায়িত্ব হল নবীনদের এগিয়ে নেওয়া। আমরাও সে লক্ষ্যেই কাজ করতে চাই। তবে নবীন-প্রবীণ সব শিল্পীদের নিয়ে একসঙ্গে কোনো আয়োজন করা গেলে সেটিও ভালো হবে।”

এছাড়া আয়োজনে উপস্থিত অতিথিদের মধ্য থেকে শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর শিল্পকলা একাডেমির একটি আধুনিক আর্কাইভ তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

এবারের আয়োজনের জন্য ৪৬৪ জন শিল্পীর মোট ১,০২০টি শিল্পকর্ম জমা পড়ে। এখান থেকে শিল্পী ড. মোহাম্মদ ইকবাল, শিল্পী আতিয়া ইসলাম অ্যানি ও শিল্পী নাসিমুন খবীরকে নিয়ে গড়া বিচারকমণ্ডলী বাছাই করেন ১৮৮ জন শিল্পীর কাজ।

এরপর শিল্পী নাইমা হক, শিল্পী রনজিৎ দাস, শিল্পী গোলাম ফারুক বেবুল ও শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া নেতৃত্ব দেন।

এবারের প্রদর্শনীতে কাজের ধরন, মাধ্যম, বিষয়বস্তুর দিক থেকে যে বৈচিত্র্য রয়েছে তা বিশেষভাবে চোখে পড়বার মতো। শিল্পীরা জাতীয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়াবলী নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছেন নিজেদের শিল্পচর্চার মধ্য দিয়ে। যুদ্ধ বিগ্রহ, আত্মরতি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ব্যাংক জালিয়াতি, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা সব কিছুরই দেখা মিলবে শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে।   

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নিজের ভাবনার শিল্পীত রূপের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছে শিল্পী জুগনি দেওয়ান।

প্রদর্শনীতে ১৮৮ জন শিল্পীর দু’টি ‘পারফর্মিং আর্ট’, ৩০ টি ভাষ্কর্য, ৮টি স্থাপনাশিল্প (ইনস্টলেশন), ৭টি ভিডিও স্থাপনাশিল্প (ভিডিও ইনস্টলেশন) ও ১৮০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।

এই প্রদর্শনী চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজন। আর শুক্রবার খোলা থাকবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

রমজানে অবশ্য বন্ধ হওয়ার সময় সন্ধ্যা ৬টা। আর প্রদর্শিত শিল্পকর্মগুলো দেখা যাবে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনের দুই, তিন, পাঁচ ও ছয় নম্বর গ্যালারিতে।

ছবি: লেখক।