নববধূর নতুন পরিবার

নতুন একটি পরিবারে বউ প্রবেশ করার আগে, পরিবারের রীতিনীতি এবং সদস্যদের সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া ভালো। এতে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2016, 10:21 AM
Updated : 23 Dec 2016, 01:55 PM

পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও উচিত নতুন সদস্যকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করা।

নতুন অপরিচিত একটি পরিবারে কীভাবে নতুন বউ নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে ভারতের সামাজিক সম্পর্ক ও ব্যক্তিত্ব গঠনে পরামর্শদাতা সংস্থা ‘স্টাইলডট ইন’য়ের প্রতিষ্ঠাটা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহা ভারাগভা।

সঠিক অনুসন্ধান: যে পরিবারে মেয়েটি থাকতে যাচ্ছে সে পরিবারটি সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। পরিবারের সদস্যদের পছন্দ এবং অপছন্দ জানা থাকলে সম্পর্ক তৈরি করাটা সহজ হয়।

আয়ত্ত করা, মানিয়ে চলা নয়: কারও হৃদয়ে স্থান করতে চাইলে তাকে মানিয়ে নেওয়া বা সহ্য করার চেষ্টা না করে তাকে মন থেকে ভালোভাবে মেনে নেওয়া উচিত। ভালোবাসা এবং পরিবর্তিত জীবন আয়ত্ত করতে পারলে আর মানিয়ে চলার কষ্ট করতে হয় না।

সম্পর্ক স্থাপন: নতুন পরিবারে স্বামীর পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ শাশুড়ি মা। তার সঙ্গে সম্পর্ক সঠিক রাখতে পারলে জীবন অনেক সহজ এবং সুবিধাজনক হয়।

মূল্যবোধকে মূল্য দিন: নিজের সম্মান তৈরি করতে হলে অন্যের মূল্যবোধকেও সম্মান জানানো জরুরি। প্রতিটি পরিবারের একটা নিজস্ব রীতিনীতি এবং মূল্যবোধ থাকে, যা পরিবারের সবাই পালন করেন। পরিবারের অংশ হতে গেলে রীতিনীতি ও মূল্যবোধকে ধারণ এবং পালন করা অবশ্য কর্তব্য।

সমালোচনা পরিহার:
আমাদের সমাজে একজন মেয়ে শুধু একজন ছেলেকেই বিয়ে করে না তার পুরো পরিবারও মেয়েটির জীবনে অংশ হয়ে যায়। যাদের সঙ্গে জীবনের বাকিটা সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে উদার মনে চিন্তা করা উচিত। আজ হয়ত কোনো বিষয় মনকষ্টের কারণ হয়েছে হতে পারে আগামীতে সেই একই মানুষের পক্ষ থেকে সাহায্য আসতে পারে। তাই চট করে একটা ধারণা না করে, সম্পর্কটাকে সময় দেওয়া উচিত।

সহানুভূতিশীল হওয়া: পরিবারে সদস্যদের মধ্যে নানান রকমের বিরোধ দেখা দিতে পারে। নববধূর উচিত এসব বিরোধ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। কোনো প্রকার বিতর্কে না জড়িয়ে যদি উভয় পক্ষের বিষয়ে সহানুভূতি এবং নিরপেক্ষ মনোভাব দেখান তবে সেটিই হবে তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থান।

আন্তরিকতা বজায় রাখা: নববধূ অবশ্যই নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখবেন। তবে, যেহেতু তিনি একটি নতুন পরিবারে নতুন পরিবেশে আছেন সেখানে থাকা মানুষদের জীবনযাপনে সুবিধা এবং অসুবিধাও তাকে মনে রাখতে হবে। এভাবেই সে সবার সঙ্গে হাসিখুশি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করতে পারবেন।

সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা: কনে তার বাবা-মা এবং শ্বশুর-শাশুড়ি উভয়ের মধ্যে একই রকমের সম্পর্ক রক্ষা করতে, যেখানে কেউ অবহেলিত বোধ করবে না। কেউ যেন নিজেকে কম গুরুত্বপূর্ণ না মনে করে।

নতুন পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব

পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব যে শুধু নববধূর এমনটা ভাবা ঠিক নয়। একটা মেয়ে বিয়ের পরে তার সম্পূর্ণ জীবন পেছনে ফেলে একটা অচেনা অজানা, নতুন পরিবেশে আসে। পরিবেশের প্রতিটা অভ্যাস, প্রতিটা নিয়ম তাকে নতুন করে শিখতে এবং জানতে হয়।

নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মেয়েটি তার পরিবার, মা-বাবা এবং ফেলে আসা বিষয়গুলো নিয়েও কিছুটা মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।

এরকম পরিস্থিতিতে নতুন পরিবারের সদস্যদেরও উচিত মেয়েটিকে যতটা সম্ভব সাহায্য করা।

নতুন বউকে সর্বক্ষণ পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দোষত্রুটি বিবেচনা না করে, পরিবারের অন্য সদস্যদের তাকে আশ্বাস দিতে হবে এটা এখন তারও পরিবার। বাবা মায়ের পরিবারের মতো এ পরিবারও তাকে সাহায্য করবে, ছায়া দেবে এবং রক্ষা করবে।

একটা মানুষ রাতারাতি তার বহুদিনের অভ্যাস বা শিক্ষা বদলে ফেলতে পারে না। বদল হতে যে সময়টা প্রয়োজন সেটাও নববধূকে সহানুভূতির সঙ্গে পার হতে সাহায্য করতে হবে।

বিয়ে মানেই জীবনের বদল নয়। বধূ একজন মানুষ, নতুন কোনো মেশিন নয় যাকে পুরোপুরি নিজেদের মতো করে প্রোগ্রাম করে নেওয়া যায়। বধূকে বদলানোর চায়ে তার জীবনযাপনের সুবিধা অসুবিধায় সাহায্য করার বিষয়ে জোর দিতে হবে বেশি। পরিবারে তার অবস্থান তৈরি করতে হবে এবং যথাযথ সম্মান জানাতে হবে।

যে আজকে বাড়িতে বধূ হয়ে এসেছে সময়ের পরিক্রমায় তিনি একদিন বাড়ির কর্তী হবে, এটা ভুললেও চলবে না।

উভয় পক্ষ থেকেই যদি সহানুভূতি এবং অন্যের জীবনযাপনকে সম্মান জানানোর মনোভাব থাকে তবেই পরিবার হবে শীতল ছায়াবীথি

ছবি সৌজন্যে: মাল্টিশাটার