বেশি বয়সের ভিটামিন

বয়স বাড়ার সঙ্গে পরিবর্তিত হয় শরীরের চাহিদা। এই চাহিদা পূরণ করতে না পারলে অল্পতেই কাহিল হয়ে পড়তে হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2016, 11:28 AM
Updated : 19 May 2016, 11:28 AM

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কম বয়সে শরীরকে অনায়াসেই যা মানিয়ে দেওয়া যেত বুড়ো বয়সে তা মানা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। সঙ্গে যোগ হয় অতিরিক্ত ওজন ও ক্লান্তি।

এসবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রায়শই জরুরি কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়।

এই বাদ পড়া পুষ্টিগুলো কী এবং কীভাবে সেগুলো আমাদের শরীরকে রক্ষা করে তাই জানানো ওই প্রতিবেদনে।

ক্যালসিয়াম: শরীরের একটি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান। খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিনের ক্যালসিয়াম চাহিদা পূরণ না করা হলে শরীরের বিপাকীয় পদ্ধতি হাড় থেকে ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করে। ফলে হাড় ক্যালসিয়াম হারিয়ে ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে যায়।

একই কারণে দাঁতেরও ক্ষয় হয়। জানিয়েছেন ‘স্লিম ডাউন: শেড পাউন্ডস অ্যান্ড ইঞ্চেস উইথ রিয়েল ফুড, রিয়েল ফাস্ট’ বইয়ের লেখক এবং পুষ্টি বিজ্ঞানী সিন্থিয়া স্যাশ।

তিনি আরও জানান ৫০ বছরের নিচের মানুষদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা ১০০০ মিলি গ্রাম। বয়স ৫০ পেরুলেই সেই চাহিদা ১২০০ মিলি হয়ে যায়। এতখানি ক্যালসিয়াম প্রতিদিনের খাবারে না খেতে পারলে হাড় ও দাঁত ক্ষয় হতে থাকে। এ রোগের নাম অস্টিওপরসিস।

স্যাশ এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে দৈনিক তিনবার ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হচ্ছে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার। এ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছের হাড়ে ক্যালসিয়াম থাকে।

ভিটামিন ডি: একমাত্র ভিটামিন যা খাদ্যের বাইরের উৎস থেকে সংগ্রহ করা যায়। ভিটামিন ডি’র উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে সূর্যালোক। দেহে যদি সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ডি না থাকে তবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ঠিকঠাক করেও কোনো লাভ নেই। কেননা ভিটামিন ডি না থাকলে দেহ ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না, জানান স্যাশ।

তিনি আরও বলেন, “ভিটামিন ডি বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন, ডায়বেটিক্স, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।”

৫০ ঊর্ধ্ব একজন মানুষের দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন এর থেকে বেশি ভিটামিন ডি খাওয়া উচিত। শরীরে অন্য কোনো ত্রুটি না থাকলে ৪ হাজার ইউনিট পর্যন্ত ভিটামিন ডি খাওয়া যেতে পারে।  

যদিও ভিটামিন ডি’র সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস সূর্যালোক। তবে খাবারের মধ্যেও কিছু পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকতে পারে। যেমন দুধে, স্যামন মাছে, ডিমে, মাশরুমে। তবে শরীরে ভিটামিন ডি’র যে চাহিদা আছে তা শুধু খাদ্য থেকে পূরণ করা কঠিন। এমনই মতামত পুষ্টিবিজ্ঞানী সিন্থিয়া স্যাশের।

তাই খুব অল্প সময় হলেও শরীরকে সূর্যালোকে রাখতে হবে, মাত্র কয়েক মিনিটেই শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। তবে যারা মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করে, যাদের ত্বক গাঢ় রংয়ের এরকম কিছু মানুষের দেহে ভিটামিন ডি’র অভাব থেকে যায়।

স্যাশ পরামর্শ দেন, ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রক্ত পরীক্ষা করে ভিটামিন ডি’র মাত্রা নিরূপণ করা যায়। যদি পরিমাণ বিপদজনক মাত্রায় কম থাকে তবে ভিটামিন ডি’র অসুধ খাওয়া যেতে পারে।

অনেকেই বিজ্ঞাপনের উল্লেখিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের আশ্বাসে বিভ্রান্ত হন। তবে এতে বিষাক্ততা থাকতে পারে যা শরীরের ক্ষতি করে। যোগ করেন স্যাশ।

ভিটামিন বি টুয়েল্ভ: হাভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের মতে, ৫০ বছরের অধিক বয়সে অধিকাংশ মানুষের ভিটামিন বি টুয়েল্ভ শোষণ করতে সমস্যা হয়। এর কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, ৫০ বছর বয়সের পরে পাকস্থলীর পাচক রস নির্গমন হ্রাস পায়। ফলে ভিটামিন বি টুয়েল্ভ খাদ্য থেকে মুক্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট সাহায্য পায় না।

এ বয়সে এসেই অনেকে পেট জ্বালা-পোড়ার সমস্যায় ভোগেন। সেই সমস্যা সমাধানে তাঁরা বিভিন্ন অম্ল নাশক অসুধ যেমন- অ্যান্টাসিড খান। এতে পাচক রস নির্গমন বাধা প্রাপ্ত হয়। ফলে শরীর পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। এমনই মত স্যাশের।

একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দেহে দৈনিক মাত্র ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি টুয়েল্ভে’র চাহিদা থাকে। তবে যদি এই সামান্য চাহিদাও পূরণ করা না হয় তবে স্নায়ু বিকলতা, ক্লান্তি, মানসিক বিভ্রান্তির মতো জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে।

সকল প্রকার প্রাণীজ খাদ্য উৎসে ভিটামিন বি টুয়েল্ভ থাকে। স্যাশ আরও বলেন, মাছ, হাঁস-মুরগি, ডিম ইত্যাদি প্রাণীজ খাদ্যের মজুদ রাখা উচিত।

অম্ল নাশক খাদ্যের জন্য যদি যথেষ্ট বি টুয়েল্ভ নিঃসরণ না  ঘটে তবে অসুধের মাধ্যমে এই অভাব পূরণ করতে হবে।

ম্যাগনেসিয়াম: যদি কোনো একটা পুষ্টি উপাদান অবশ্যই খেতে হয় তবে সেটা হল ম্যাগনেশিয়াম। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে ম্যাগনেশিয়াম কিছুতেই বাদ দেওয়া যাবে না। কেননা দেহের প্রায় ৩শ’টির অধিক কার্যক্রম ম্যাগনেসিয়ামের উপর নির্ভর করে। এটা যদি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ যায় তবে হৃৎস্পন্দনের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, রক্তের শর্করার মাত্রাও বাড়ে, এছাড়াও আরও অনেক ছোট-বড় সমস্যার সূত্রপাত হয়।

একজন নারীকে দৈনিক ৩২০ মিলি গ্রাম এবং একজন পুরুষকে দৈনিক ৪২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণ করতেই হবে।

স্যাশের মতে শুধু যে ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণ করলেই হবে তা না। ম্যাগনেশিয়াম শরীরকে শোষণও করাতে হবে। চিনি ম্যাগনেশিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।

কেউ যদি তার খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের খাবার না রেখে শুধু চিনি নির্ভর খাবার খায় তবে তবে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে।

বাদাম, বীজ, বিট ইত্যাদি খাদ্য ম্যাগনেসিয়ামে পরিপূর্ণ। একমুঠ কাজুবাদাম বা আখরোট খেলে দৈনিক চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়।

জিংক: এই উপাদান খুব সহজেই ঠাণ্ডার সমস্যা রোধ করতে পারে। তবে এর মাত্রা কম বেশি না করা খুবই জরুরি।

অনেকেই মনে করেন জিংক মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে বেশি করে জিংক খেতে থাকেন।

স্যাশ জানান, বেশি জিংক গ্রহণে হিতে বিপরীত হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার বদলে উল্টা হ্রাস পেতে থাকে। তাই দিনে ৪০ মিলি গ্রামের কম বা বেশি জিংক গ্রহণ করা যাবে না যদি না কোনো ডাক্তার বিশেষ অবস্থায় পরামর্শ দেন।

যাদের ডায়বেটিক্স এবং লিভার সংক্রান্ত জটিলতা থাকে তাদের দেহে জিংকের ঘাটতি হতে পারে। এই ঘাটনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। খাবারে অরুচি হয় যা কোনো শল্যচিকিৎসা বা বড় ক্ষত পূরণ করতে সমস্যা সৃষ্টি করে।

গড়ে একজন ৫০ ঊর্ধ্ব মানুষের দৈনিক জিংকের চাহিদা ১০ মিলিগ্রাম। চর্বি বিহীন গরুর মাংস, শিমের দানা এবং শামুকে জিংক থাকে।