দুটি প্রদর্শনী

শিল্পাঙ্গনে চলছে আব্দুস শাকুর শাহ’র রেট্রোস্পেক্টিভ এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে চলছে সৌরভ চৌধুরীর প্রথম একক প্রদর্শনী।

লাইফস্টাইল ডেস্কফায়হাম ইবনে শরীফ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2016, 09:11 AM
Updated : 6 May 2016, 09:11 AM

আব্দুস শাকুর শাহ’র রেট্রোস্পেক্টিভ

ফয়েজ আহমদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে বাংলাদেশের প্রথম পুর্ণাঙ্গ চিত্রশালা (আর্ট গ্যালারি) শিল্পাঙ্গন আয়োজন করেছে শিল্পী আব্দুস শাকুর শাহ’র একক চিত্র প্রদর্শনী। সাংবাদিক পরিচয়ের পাশাপাশি কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজ আহমদ ছিলেন শিল্পাঙ্গন গ্যালারির স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশে শিল্পচর্চাকে এগিয়ে নিতে একটি সুসংহত বাণিজ্যিক কাঠামো দাঁড়া করাতে অবদান রেখেছেন ফয়েজ আহমেদ।

তাঁর ৮৮ তম জন্মবার্ষিকীতে, পহেলা মে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত।

বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে, নিজের শিল্পচর্চার ভাষার (ফর্ম) সঙ্গে এক সুঁতায় গেঁথেছেন শিল্পী আব্দুস শাকুর। বহু আগে থেকেই বাংলার মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর ঘুরে শিল্পচর্চার অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন তিনি। তুলির ছোঁয়ায় তুলে এনেছেন ময়মনসিংহ গীতিকার চরিত্র, কালীঘাটের পটচিত্র, এখানে ওখানে খুঁজে পাওয়া টেরাকোটা, নকশি কাঁথা।

বাংলাদেশের লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার উপর ভিত্তি করে, চিত্রকলার যে লোকজ বা সনাতন ফর্ম তিনি চর্চা করে চলেছেন তা আজও প্রাসঙ্গি্ক ও সমকালীন।

এবারের প্রদর্শনীর কাজ নিয়ে বলতে গিয়ে চিত্রকলার শিক্ষক ও শিল্পী শাকুর বলেন, “একজন শিক্ষক ও একজন শিল্পীর মধ্যে এক্ষেত্রে পার্থক্য হল, শিক্ষককে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে হয়, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে হয়। কারণ, পাঠদানের জন্য তাঁর শিক্ষার্থীদের সামনে প্রতিদিন তাকে নতুন নতুন কাজ উপস্থাপন করতে হয়। তবে শিল্পীর সামনে এরকম কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে না। তিনি চাইলেই শুধু নিজের জন্যই কাজ করতে পারেন। এখানে প্রদর্শিত কাজগুলোর কোনটি শিল্পী হিসেবে আর কোনটি শিক্ষক হিসেবে করা।”

তিনি আরও বলেন, “এবারের প্রদর্শনীর মাত্র তিনটি কাজ আগে প্রদর্শিত হয়েছে। যেহেতু ফয়েজ আহমদ সাহেবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই আয়োজন, তাই বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলাম।”

“সাধারণত গ্যালারিতে যে ধরনের কাজের প্রদর্শনী হয় এবারেরটা একেবারেই সেরকম কিছু নয়। বিক্রির জন্য এই আয়োজন নয়। বরং আমার এই কাজগুলো দেখে দশজন লোকও যদি কিছু জানতে পারে, অনুপ্রেরণা পায় সেটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার।” বললেন এই শিল্পী।

কথার ফাঁকে তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া আমার বয়সও এখন ৭০ চলছে। তাই একরকম মিল রেখে ৭০টি কাজ প্রদর্শনীতে রেখেছি।‘

১৯৭৬ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি করা, সব রকমের কাজেরই এক ধরনের প্রতিনিধিত্বমুলক প্রদর্শনী এটি। সেখানে ৮৮’ সালে শুধু কালিতে ড্রইং করা পোর্ট্রেট সিরিজ যেমন আছে, তেমনি ৯২’ সালে তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা ও সংকট নিয়ে করা জলরং’য়ের ছোট্ট সিরিজও আছে।

সব মিলিয়ে শিল্পী আব্দুস শাকুর শাহ’র সারা জীবনের কাজের এক ধরনের সরলরৈখিক উপস্থাপনা দেখতে পাওয়া যাবে এই রেট্রোস্পেক্টিভ প্রদর্শনীতে।        

শিল্পাঙ্গন গ্যালারির ঠিকানা: বাসা ১৩ (নতুন), রোড ০৭, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

সৌরভ চৌধুরীর প্রথম একক প্রদর্শনী

ঢাকার আঁলিয়স ফ্রঁসেজের ‘লা গ্যালারি’তে চলছে শিল্পী সৌরভ চৌধুরীর প্রথম একক শিল্প প্রদর্শনী ‘শাশ্বত অস্তিত্ত্ব’ বা ‘এটার্নাল এক্সিসটেন্স’।

২২ এপ্রিল শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ৯ মে পর্যন্ত।

রাজশাহীতে জন্ম নেয়া শিল্পী সৌরভ চৌধুরী চিত্রকলার উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ থেকে। ছাত্রাবস্থা থেকেই সভ্যতা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি।

প্রদর্শিত কাজগুলো নিয়ে বলতে গিয়ে শিল্পী বলেন, “এমনিতেই কল্পনার জগৎ, পৌরাণিক গল্প, প্রাচীন কালের চিত্রকলার চর্চা এসবের উপর বিশেষ আগ্রহ আছে আমার। পাশাপাশি আমাদের এই এলাকার লোকজ মোটিভও বিশেষভাবে টানে আমাকে। সুতরাং কাজ করতে গিয়ে আমি এই দুইয়ের মিশেল ঘটানোর চেষ্ঠা করেছি হয়ত।”

শিল্পী সৌরভ চৌধুরীর প্রথম প্রদর্শনীতে মোট ৩৫টি চিত্রকর্মের পাশাপাশি দুটি ভাস্কর্য প্রদর্শিত হচ্ছে। সৌরভের কাজের লক্ষণীয় ও আকর্ষণীয় দিক হল ছাপচিত্রের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় আগ্রহ।

নবীন শিল্পী হিসেবে উডকাট, রিলিফ প্রসেস কিংবা এচিংয়ের মতো মাধ্যমে কাজ করে এরই মাঝে নিজের পরিপক্কতারও প্রমাণ রেখেছেন এই শিল্পী।       

সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী।

রোববার গ্যালারি বন্ধ থাকবে।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ঠিকানা: ২৬, মিরপুর রোড (ধানমণ্ডি সড়ক তিনের পাশে), ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫।

ছবি: লেখক।