ওজন কমানোর খাবার

পেটও ভরবে, ওজনও কমবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2016, 10:54 AM
Updated : 16 Feb 2016, 11:03 AM

বেইকড (খোসাসহ) এবং সিদ্ধ আলু: প্রথম কথা হল, খাবার হিসেবে আলু অধম নয়। বরং এটি ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং আরও অনেক পুষ্টির উৎস, যা রক্তচাপ কমাতে এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। সবচাইতে পেট ভরা রাখার খাবার বিষয়ক এক জরিপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সিদ্ধ আলু। এমন কি টপকে গেছে লালচালের ভাতকেও। আলুর খোসা আঁশে ভরপুর, যা নিজেই বেশ পুষ্টিকর। আরও সুস্বাদু করতে লতা-গুল্ম ও সালসা সস যোগ করতে পারেন।

হাড় ও চর্বিহীন গরুর মাংস: স্বাদের পাশাপাশি ডায়েট প্ল্যান হিসেবে এই মাংস উত্তম। কারণ এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, লৌহ এবং ভিটামিন বি। গরুর মাংস দীর্ঘসময় ক্ষুধা নিবারণ করতে সক্ষম, মাংসপেশির গঠনেও বেশ কার্যকরী। গবেষণা অনুযায়ী, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এর সহায়ক ভূমিকা রয়েছে।

সিদ্ধ ডিম: দুইটি পুরোপুরি সিদ্ধ বা কুসুম শক্ত সিদ্ধ ডিমে থাকে ১৩০ ক্যালরি ও ১২ গ্রাম আমিষ। শরীর যে নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড নিজে তৈরি করতে পারে না তার সবগুলোই মিলবে এই সিদ্ধ ডিমে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’র ক্লিভল্যান শহরের অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিকস বলছে, অ্যামিনো অ্যাসিডের এই মিশ্রনই মূলত ক্ষুধা নিবারণ করে। এক জরিপে দেখা গেছে, যারা সকালের নাস্তায় সিদ্ধ ডিম খান, তারা সারাদিন ক্ষুধা অনুভব করেন কম। ফলে দিনে প্রায় ৩৩০ ক্যালরি কম খাওয়া হয়। সিদ্ধ ডিম পছন্দ না হলে ঝুরি করে নিতে পারেন। কুসুম বাদ দেওয়া উচিৎ নয়, কারণ একটি ডিমের অর্ধেক আমিষই থাকে কুসুমে।

শাকসবজি:
সবজি, বিশেষত সবুজ পাতাযুক্ত সবজিতে প্রচুর আঁশ থাকে, যা হজমে সহায়ক। আঁশ শুধু উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারেই পাওয়া যায়। আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া মানেই ক্যালরি কম ভিটামিন বেশি। তাই ক্ষুধা পেলেই সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

সুপ: যেসব খাবারে এনার্জির ঘনত্ব কম, তাতে ক্যালরিও কম। যেমন: ফল ও শাকসবজি, এতে পানিও থাকে প্রচুর। তবে সালাদ খেয়ে যারা ক্লান্ত, তারা সুপ খেতে পারেন। গবেষণা অনুযায়ী, সাধারণত যে পরিমাণ সবজি বা মাংস খান সেই পরিমাণ খাবার দিয়েই তৈরি সুপ খেলে পেট বেশি ভরা মনে হবে। শুঁটিজাতীয় খাবারে আঁশ থাকে এবং শরীরের শর্করার নিঃসরণ মন্থরকারী উপাদান থাকায় এগুলো দিয়ে তৈরি সুপ খাওয়া উত্তম।    

দই: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্যানুসারে— দই ওজন কমানোর সবচাইতে উত্তম খাবার। ২০ বছর ধরে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণের পর এই সিদ্ধান্তে আসেন গবেষকরা। দই রক্তে শর্করার পরিমাণ ও খাওয়ার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমিষ বেশি থাকে এমন দই বেছে নিতে হবে কারণ এতে ক্যালরি কম থাকে। দুগ্ধজাত আমিষ পেট ভরা ভাব বাড়ায়। চাইলে কিছু ফলও যোগ করতে পারেন।

ওটস: সকালের নাস্তার ওটসের গুণাবলী সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন, এবার মেনে চলা করুন। এত প্রচুর আঁশ থাকে, তাই স্ন্যাকস হিসেবে আদর্শ। এটি খাবারের পানি শুষে নেয়। ফলে পেট ভরা থাকবে, খাবেন কম, ক্যালরি গ্রহণ করবেন কম। এটা শরীরে ভাঙতেও সময় লাগে বেশি।

পপকর্ন: ছবি দেখতে গিয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন স্ট্রিপসের বদলে পপকর্ন খাওয়া উচিত। শষ্যভিত্তিক এই স্ন্যাকসে থাকে আঁশ ও আমিষ। তাই পেটে জায়গা দখল করে বেশি। ক্ষুধা কমাতে পপকর্নে অল্প মসলা ছিটিয়ে নিতে পারেন।

কাঠবাদাম: গবেষণায় দেখা গেছে, স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম খেলে সারাদিন ক্ষুধা অনুভব হয় কম। মাত্র ২২টি কাঠবাদামেই মেলে তিন গ্রাম আঁশ আর ছয় গ্রাম আমিষ। আরও আছে ভিটামিন ই, যা চুল, নখ এবং ত্বকের জন্য অথ্যন্ত প্রয়োজনীয়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও কাঠবাদাম সহায়ক। খাওয়ার পর রক্তে শর্করার পরিমাণের অকস্মিক তারতম্যের ঝুঁকিও কমায় এটি।

আপেল:
গবেষণা অনুযায়ী, আপেলে থাকে ‘পেক্টিন’ যা হজমক্রিয়া মন্থর করে। ‘প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তার থেকে দূরে রাখে’ কথাটি প্রচলিত হওয়ার একটি কারণ আছে। সব ক্যালরিই এক নয় আর আপেলের রস খাওয়ার চাইতে সরাসরি আপেল আপনাকে বেশি সময় পেট ভরা অনুভব দেবে। কারণ ফলটি খেতে সময় লাগে, শরীরে ভাঙতেও সময় লাগে।

মুরগির বুকের মাংস: আমিষ থাকে প্রচুর, যা সবচাইতে ভালো ক্ষুধা কমানো পুষ্টি উপাদান। আমিষে ভরপুর খাবার, খাবারের প্রতি আসক্তিকে কমায় প্রায় ৬০ শতাংশ। 

তরমুজ: পানিতে ভরা খাবারের কথা বলতে গেলে সবার আগে আসবে তরমুজের কথা। এর ৯২ শতাংশই পানি। দুই কাপ পরিমাণ তরমুজে থাকে মাত্র ১শ’ ক্যালরি। তবে খেয়ে মনে হবে আগামি দুই দিন কিছু খাওয়ার জায়গা নেই। পাশাপাশি আছে ভিটামিন সি, শরীরের দৈনিক চাহিদার প্রায় অর্ধেক।

ছবি: রয়টার্স।