বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্যগুলোর একটি সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গাটির অবস্থান। সাজেকের পাহাড়চূড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দৃষ্টিগোচর হয় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে।
খাগড়াছড়ি শহর ছেড়ে সাজেকের পথে কিছুদূর গেলেই পাহাড়ের উচ্চতা বাড়তে থাকে। সামনের দিকে পাহাড়গুলো যেন আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।
চলতে চলতে প্রথমে পথে পড়বে দিঘীনালা। সেখান থেকে আরও চললে বাঘাইহাট বাজার। এখানে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে পর্যটকদের রিপোর্ট করে যেতে হবে।
এর পরে সাজেক ভ্যালির দিকে চলতে হবে উঁচু নিচু পাহাড়ের বুক চিড়ে। ঘন সবুজ পাহাড়ের মাঝে কালো পিচঢালা পথ, সর্পিল আঁকাবাঁকা। কোথাও কোথাও পাহাড়ের উচ্চতা এত বেশি যে উপরে উঠতে গাড়ির ত্রাহি অবস্থা, যেন দম ফুরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
এ পথে চলতে সড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। বিশেষভাবে বাঁশের মাচানের উপর তৈরি করা এসব বাড়িঘর।
সাজেক যাওয়ার পথে পড়বে মাসালং সেনাক্যাম্প। সেখানে রিপোর্ট করে একটু সামনে গেলেই মাচালং বাজার। পাহাড়ি এ বাজার সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার বসে। তবে শুক্রবারে বাজারের অবস্থা থাকে বেশি জমজমাট। দূর দূরান্ত থেকে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষেররা এ বাজারের আসেন বিকিকিনি করতে।
মাসালং বাজার থেকে সাজেকের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। তবে এ পথে পাহাড়ের উচ্চতা আরও বেশি। এখান থেকে কয়েকটা বাঁক ঘুরলে দূরে দেখা যায় সাজেক ভ্যালি।
সাজেক ভ্যালির শুরুতেই রুইলুই পাড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট। এ গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগ ত্রিপুরা ও লুসাই।
রুইলুই পাড়ার শেষ প্রান্তে আছে দেশের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প।
বিজিবি ক্যাম্প থেকে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় আরেক পাহাড়ি গ্রাম কংলাকপাড়া। এ গ্রামেও লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় খালি চোখে দেখা যায়।
এ গ্রামের নিচে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আরও কয়েকটি গ্রাম আছে। তবে এ গ্রামগুলো খুবই দুর্গম। কংলাক পাহাড়ের গোড়ায় নিঃস্বর্গের মাঝে আছে জলবুক কটেজ। সাজেকের অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য জুলবুকের ইকো কটেজগুলোর জুড়ি নেই।
কীভাবে যাবেন
প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি শহরে। ঢাকা থেকে সেন্টমসার্টিন পরিবহনের এসি বাস যায় খাগড়াছড়ি। ভাড়া ৯০০ টাকা।
এছাড়া সেন্টমার্টিন, শান্তি, শ্যামলী, সৌদিয়া ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৫২০ টাকা।
চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে শান্তি পরিবহনের নন এসি বাস সরাসরি খাগড়াছড়ি যায়। ভাড়া ১৬০ টাকা।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার মূল বাহন জিপ। স্থানীয়রা একে বলেন চাঁদের গাড়ি। এ পথে যাওয়া আসার একটি চাঁদের গাড়ির ভাড়া ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা। একটি গাড়িতে ১০ থেকে ১৫ জন চড়তে পারেন।
কোথায় থাকবেন
সাজেকে থাকার জন্য রুইলুই পাড়ার দুই প্রান্তে আছে সর্বাধুনিক ‘সাজেক রিসোর্ট’ আর ‘রুনময় রিসোর্ট’। দুটি রিসোর্টই সেনাবাহিনী পরিচালিত।
সাজেক রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া সাধারণ পর্যটকদের জন্য ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু। রিসোর্ট দুটির বিস্তারিত তথ্য মিলবে এই ওয়েবসাইটে http://rock-sajek.com
জলবুক ইকো কটেজের কক্ষ ভাড়া ২ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে শুরু। যোগাযোগ- ০১৮২০১৮০৭৫০।
এছাড়া সাজেকের রুইলুই পাড়ায় স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বাড়িতেও পর্যটক আবাসের ব্যবস্থা আছে। এসব বাড়িতে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
প্যাকেজ ভ্রমণ
সাজেকে নিয়মিত দুটি প্যাকেজ ভ্রমণ পরিচালনা করে থাকে খাগড়াছড়ি ভিত্তিক বেসরকারি ভ্রমণসংস্থা সিএইচটি ট্রাভেলস।
খাগড়াছড়ি-সাজেক-খাগড়াছড়ি, দুদিন এক রাতের ভ্রমণ মূল্য জনপ্রতি ২ হাজার ৮শ’ টাকা। ভ্রমণ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত চাঁদের গাড়িতে যাতায়াত, ইকো রিসোর্টে এক রাত থাকা, খাবার, পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ মূল্য, গাইডসহ দর্শনীয় স্থানে ঘুড়ে বেড়ানো।
দ্বিতীয় প্যাকেজটিও দুদিন এক রাতের। মূল্য ২ হাজার ৫শ’ টাকা। এ প্যাকেজে উপভোগ করা যাবে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বাড়িতে থাকা। যোগাযোগ ০১৫৫৬৭১০০৪৩, ০১৮১৫৮৫৬৪৯৭।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বর্তমানে পর্যটকদের খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যাওয়ার পথে সেনা নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ মিনিট ও বিকেল ৩ টায় পর্যটকবাহি গাড়ি সেনা নিরপত্তা দিয়ে সাজেকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
একইভাবে সাজেক থেকে বেলা ১১টা ও বিকাল ৩.৩০ মিনিটে সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের নিয়ে আসা হয়।
সাজেকে প্রবেশ পথে পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা ও প্রতিটি গাড়ির জন্য ১০০ টাকা প্রবেশ মূল্য আছে।