খেজুররসের দেশে

রসের মৌসুমে রসিয়া বন্ধু হতে চাইলে যেতে হবে যশোরে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2016, 07:16 AM
Updated : 15 Jan 2016, 07:44 AM

শীতের সকালে কুয়াশা ঢাকা গ্রামের মেঠোপথে হাঁটতে হাঁটতে রসের হাঁড়িতে চুমুক দিতে কার না ভালোলাগে! দিনে দিনে খেজুরগাছ হারিয়ে যেতে বসলেও এখনও যশোর অঞ্চলে কোনো কমতি নেই। যশোরের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায় প্রচুর খেজুরগাছ।

আর এখন চলছে রসের ভরা মৌসুম।

যশোর শহরের কাছাকাছি বিভিন্ন গ্রামে গেলেই পাওয়া যাবে খেজুর গাছের রাজ্য। শহরের একপ্রান্তে নিউমার্কেট ছেড়ে মাগুরাগামী রাস্তা ধরে সামনে প্রায় তিন কিলোমিটার গেলে হাতের ডান দিকের মেঠোপথটি চলে গেছে বাহাদুরপুর গ্রামের দিকে। এই সড়কের দুইপাশেই খেজুরগাছ।

গ্রামের ভেতরে ধানক্ষেতের আশপাশেও প্রচুর খেজুরগাছ। মাগুরা সড়ক ধরে আরও সামনে গেলে খাজুরা। এ গ্রাম নিয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। নামেই তার স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়।

খাজুরার আগে হাতের বাঁয়ের যে কোনো সড়কে চললে যাওয়া যাবে হৈবতপুর কিংবা ওসমানপুর। সব গ্রামই যেন খেজুরগাছের বাগিচা।

যশোর শহরের কাছাকাছি খেজুররসের রাজ্য যশোর-মাগুরা সড়কের দুপাশের গ্রামগুলো। সব গ্রামেই এখন চলছে রস নিয়ে নানান ব্যস্ততা।

যশোরের অভয়নগরের বাঘুটিয়া এলাকায় হাঁড়ি বসানোর জন্য খেজুর গাছ কাটছেন গাছি।

যশোরের অভয়নগরের শ্রীধরপুরে খেজুর গাছে হাঁড়ি বসাতে যাচ্ছেন গাছি।

বিকেলে গাছিদের গাছকাটা, সূর্য ওঠার আগে গাছ থেকে রসপারা, ভোরের আলতো রোদে বিশেষ চুলায় নারীদের রস থেকে গুড় তৈরি। 

যশোরশহর থেকে একটু দূরে গেলে খেজুরগাছের বিস্ময়কর এক জগত অভয়নগর। এখানকার গ্রামগুলোর সবখানেই খেজুরগাছের বাগান।

যশোর শহর থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অভয়নগর। এই উপজেলার বুড়িভৈরব নদী পেরিয়ে ওপাড় গিয়ে যে কোনো গ্রামের পথে গেলেই চলবে। তবে খেজুরগাছের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি ভাটপাড়া, বাঘুটিয়া, শ্রীধরপুর, সিঙ্গারি প্রভৃতি গ্রামে।

যশোরের এসব গ্রামে সাধারণত দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ কেটে হাঁড়ি বসান গাছিরা। সারারাত সেসব হাঁড়ি রসে পূর্ণ হয়। পরের দিন সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে সব হাঁড়ি নামিয়ে আনা হয়। এরপরে দুপুর পর্যনত্ম বাড়ি বাড়ি চলে গুড় তৈরির কাজ।

প্রয়োজনীয় তথ্য: যশোরের আশপাশের গ্রামগুলোতে ঘুড়ে বেড়ানোর জন্য ব্যাটারি চালিত রিকশা পাওয়া যায়। খেজুরবাগানে গাছিদের কর্মব্যস্ততা দেখতে হলে যেতে হবে খুব সকালে আর বিকালে।

তবে গাছে থেকে নামানো রস খেতে হলে যেতে হবে সূর্য ওঠার আগে। খেজুরের রস থেকে নিপা ভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা থাকে। তাই কোনো বাড়িতে গিয়ে ফুটানো রস খেতে পারেন। কিংবা আগের দিন কোনো গাছিকে বলে ব্যবস্থা নিতে পারেন। রসের হাঁড়িটি ভালোভাবে কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে ফেললে বাদুড় বসতে পারবেনা। সে রস খাওয়া নিরাপদ। 

কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে যশোর শহরে। সড়ক, রেল ও আকাশপথে যাওয়া যায়।

ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান থেকে গ্রীনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, একে ট্রাভেলস ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাস  যশোর যায়। ভাড়া ৯শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। এ ছাড়া এসব পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এপথে, ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা।

শীতের সকালে যশোরের খাজুরায় বাগান থেকে রস নিয়ে ফিরছেন গাছি।

রসের মৌসুম, যশোরের গ্রামে গ্রামে চলছে পিঠা তৈরির ধুম।

ঢাকার কমলাপুর থেকে সপ্তাহের শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন চ্রিত্রা এক্সপ্রেস। শ্রেণি ভেদে ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ১ হাজার ২৬০ টাকা।

ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএসবাংলা এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের বিমান যায় যশোর। একপথের সর্ব নিম্নভাড়া ৩ হাজার ২শ’ টাকা।

কোথায় থাকবেন: যশোর শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের হোটেল হল: কেশবলাল সড়কে হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, এমকে রোডে হোটেল আরএস, গাড়িখানা সড়কে হোটেল ম্যাগপাই, মিউনিসিপ্যাল রোডে হোটেল মিডটাউন, শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে হোটেল মনিহার ইত্যাদি।

এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।