সংসারের বৈদ্যুতিক আসবাব

এই সময়ের দরদাম ও প্রপ্তিস্থানের খোঁজখবর।

তানভীর মাহমুদ নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2016, 11:26 AM
Updated : 13 Jan 2016, 11:26 AM

বিনোদন থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া, নাস্তা তৈরি, রান্নাবান্না সব কাজের জন্যই বাজারে পাওয়া যায় কোনো না কোনো যন্ত্রপাতি। রাজধানীসহ সারাদেশেই বেস্ট ইলেক্ট্রনিক্স, বেস্ট বাই, সিঙ্গার প্লাস, ট্রান্সকম ইত্যাদির বিক্রয়কেন্দ্রে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক পণ্য পাওয়া যাবে।

একটু দামি ব্র্যান্ডের কিনতে চাইলে যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটি। এছাড়াও অন্যান্য কমদামি ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক পণ্য পাওয়া যাবে স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলিস্তান ও যেকোনো শপিং মলে। জেনে নিন এরকম কিছু বৈদ্যুতিক আসবাবের দরদাম ও ব্র্যান্ড।

টেলিভিশন: বর্তমানে অধিকাংশ টেলিভিশনই এলইডি। এছাড়াও আছে কার্ভড টিভি, এইচডি টিভি, স্মার্ট টিভি ইত্যাদি।

সনি ব্রাভিয়া ২৪ থেকে ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত দাম ২৫ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্যানাসনিক ৩২ থেকে ৫৫ ইঞ্চি পর্যন্ত দাম ৩৮ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা। স্যামসাং ২৩ থেকে ৫৫ ইঞ্চি পর্যন্ত দাম ২৬ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। ফিলিপস ৪৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়াও আছে এলজি, টিসিএল, তোসিবা, সিঙ্গার ইত্যাদি।

দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে কনকা, মাইওয়ান ইত্যাদি। তবে ওয়ালটন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ওয়াল্টনের বিভিন্ন সাইজের এলইডি টিভি পাওয়া যাবে ৯ হাজার থেকে শুরু করে ৮৬ হাজার টাকার মধ্যে।

ফ্রিজ:
সাধারণ ফ্রিজগুলোকে বলা হয় রেফ্রিজারেটর। অন্য দিকে ‘ডিপ ফ্রিজ’-এর অপর নাম ফ্রিজার।

রাজধানীর চামেলিবাগে অবস্থিত সিঙ্গার প্লাস শোরুমের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ জোসেফ বলেন, “এখনও অনেক ক্রেতা ফ্রিজের ধারণ ক্ষমতা হিসেব করেন সিএফটিতে, যা ঠিক নয়। সিএফটি’র হিসাব দেখিয়ে অনেক বিক্রেতা ঠকানোর সুযোগ পান।”

দেখতে হবে ফ্রিজের ধারণ ক্ষমতা বা কত লিটার। কারণ তার মতে, লিটারে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়।

জোসেফ আরও বলেন, “এখন শীতকাল হওয়ায় বাজারে তাজা শাকসবজি ফলমূল পাওয়া যাচ্ছে, তাই ফ্রিজের চাহিদা একটু কম। কোরবানির ঈদের সময়ে ফ্রিজের চাহিদা বেড়ে যায়।”

সাধারণ ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরের মধ্যে বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ আছে- হিটাচি, শার্প, সিঙ্গার, এলজি, হায়ার, স্যামসাং, প্যানাসনিক, কেলভিনেটর, হোয়ার্লপুল, কনিওন ইত্যাদি।

দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে ওয়াল্টনের চাহিদাই বেশি।

এলজি ১৭২ থেকে ২০৫ লিটারের দাম সাড়ে ৩১ হাজার থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। মিতশুবিশি ১৮০ থেকে ৫১০ লিটার দাম ৩৮ হাজার থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তোশিবা ১৮৫ থেকে ৫৬৮ লিটারের দাম ৪৭ হাজার ৪শ’ থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪শ’ টাকা।

স্যামসাং ২১৬ থেকে ৫৫৫ লিটারের দাম ৪৭ হাজার থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্যানাসনিক ১৯৬ থেকে ৩৩৩ লিটারের দাম ৪০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা। শার্প ২১২ থেকে ৬০৫ লিটারের দাম ৩৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। হায়ার ২০৭ থেকে ২৭৪ লিটারের দাম ৪১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। হিটাচি ১৬৮ থেকে ৪৫০ লিটারের দাম ৩৭ হাজার থেকে সাড়ে ৯৭ হাজার টাকা। কেলভিনেটর ২৩০ থেকে ৩০০ লিটারের দাম ৩৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। কনিওন ১৪২ থেকে ২৯৮ লিটারের দাম ২৪ হাজার ২শ’ থেকে ৪৩ হাজার টাকা।

ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজের মধ্যে আছে সিঙ্গার, হায়ার, কেলভিনেটর, কনিওন, স্যামসাং, এলজি, শার্প ইত্যাদি ব্র্যান্ড।

কনিওন ১৩১ থেকে ৪২৩ লিটারের দাম ২১ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এলজি ১৩০ থেকে ৩২০ লিটারের দাম ২৬ হাজার ৩শ’ থেকে ৪২ হাজার টাকা। স্যামসাং ১৭৬ থেকে ৩০৬ লিটারের দাম ৩৭ হাজার থেকে ৪৭ হাজার টাকা। শার্প ১৫৫ থেকে ৩১৫ লিটারের দাম সাড়ে ২৭ হাজার থেকে সাড়ে ৪৭ হাজার টাকা। সিঙ্গার ১৩২ থেকে ২৯৫ লিটারের দাম ২২ হাজার থেকে ৩৪ হাজার টাকা।

ওয়াশিং মেশিন:
দুই ধরণের ওয়াশিং মেশিন বাজারে পাওয়া যায়। সেমি অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে সাধারণত একপাশে কাপড় ধোয়া হয়, তারপর কাপড় বের করে আরেক পাশে শুকানো হয়।

আর অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে একপাশেই কাপড় ধোয়া ও শুকানো যায়।

ওয়াশিং মেশিনের ধারণ ক্ষমতা কেজিতে হিসাব করা হয়। সাধারণত ৬ থেকে ৮ কেজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন বাজারে পাওয়া যায় বেশি। সর্বোচ্চ ১৩ কেজি পর্যন্তও হতে পারে।

ওয়াশিং মেশিনের ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে সিঙ্গার, গোডরেজ, সিমেন্স, বেকো, প্যানাসনিক, হয়ার্লপুল, হিটাচি ইত্যাদি। দাম ৮ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৭৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে সিঙ্গার, প্যানাসনিক, ফিলিপস, স্যামসাং, ইত্যাদি। ধারণক্ষমতা ১৭ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত। দাম ৬ হাজার ৬শ’ থেকে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রাইস কুকার:
রাইস কুকারের ধারণ ক্ষমতা ১.৮ থেকে ৪.২ লিটার পর্যন্ত হতে পারে। রাইস কুকার প্রধাণত দুই প্রকার। সাধারণ রাইস কুকারে শুধু ভাত রান্না করা যায়। মাল্টি কুকারে ভাত ছাড়া খিচুড়ি, পোলাও ইত্যাদিও রান্না করা যায়।

একটু দামি ব্র্যান্ডের সাধারণ রাইস কুকারের মধ্যে আছে সিঙ্গার, সেবেক, প্যানাসনিক, ফিলিপস ইত্যাদি। দাম ৪ হাজার ৪শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব ব্র্যান্ডের মাল্টি কুকারের দাম পড়বে ৩ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত।

একটু কম দামি ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে নোভা, মিয়াকো, ডর্লিনি, সানজি ইত্যাদি। এসব ব্র্যান্ডের সাধারণ কুকারের দাম দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর মাল্টি কুকারের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮শ’ টাকা।

ব্লেন্ডার ও গ্রাইন্ডার: ব্লেন্ডারের সঙ্গে গ্রাইন্ডারের পার্থক্য হল: গ্রাইন্ডারে ফলের রস থেকে শুরু করে শুকনা মসলা পর্যন্ত গুঁড়া করা যায়।

দামি ব্র্যান্ডের ব্লেন্ডারের মধ্যে আছে প্রিথি, সেবেক, প্যানাসনিক, ফিলিপস ইত্যাদি। দাম ২ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। সস্তা ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে মিয়াকো, রিকো, দর্লিন, সানজি। দাম দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

গ্রাইন্ডারের মধ্যে আছে সিবেক, ফিলিপস, প্যানাসনিক ইত্যাদি। দাম ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

মিক্সার:
ফিলিপস ও প্যানাসনিকের মিক্সারের দাম পড়বে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ৬শ’ টাকা। সস্তা ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে মিকো, মিয়াকো ইত্যাদি। দাম ১ থেকে ২ হাজার টাকা।

জুসার মেশিন: জুস তৈরিতে এই মেশিন ব্যবহৃত হয়। ফিলিপস ও প্যানাসনিক ব্র্যান্ডের জুসারের দাম পড়বে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা।

ইস্ত্রি: ভালো ব্র্যান্ড আছে সিঙ্গার, সিবেক, ফিলিপস, প্যানাসিয়া ইত্যাদি। সক্ষমতা ও ধরণ ভেদে এগুলোর দাম ৮শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বৈদ্যুতিক কেটলি: বৈদ্যুতিক কেটলির ধারণ ক্ষমতা ১ লিটার থেকে ৪.৫ লিটার পর্যন্ত হতে পারে। ফিলিপস, প্যানাসনিক ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক কেটলির দাম পড়বে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কম দামি ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে মিয়াকো, দাম আড়াই হাজার টাকা।

কফি মেশিন: ঘরে ব্যবহার করা যায় এমন কফি মেইকার বা কফি মেশিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ড হচ্ছে ফিলিপস ও সেইকো। দাম সাড়ে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার ৪শ’ টাকা।

টোস্টার: ভালো ব্র্যান্ডের টোস্টারের মধ্যে প্যানাসনিক, ফিলিপস, গ্রুন্ডিগ ইত্যাদির দাম পড়বে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। সস্তা ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে কমেট, মিয়াকো। যা পাওয়া যাবে ৯শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকার মধ্যে।

ওয়াটার পিউরিফায়ার: এই ব্যস্ত আধুনিক যুগে পানি ফুটিয়ে খাওয়া সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই। তাই বিভিন্ন রকম ওয়াটার পিউরিফায়ারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

ওয়াটার পিউরিফায়ার প্রধানত দুই প্রকার- অনলাইন ও অফলাইন। অনলাইন ওয়াটার পিউরিফায়ার দেয়ালের সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে, পানি পরিশোধনের জন্য প্রযোজন বিদ্যুত সংযোগ। অফলাইন ওয়াটার পিউরিফায়ারে বিদ্যুত সংযোগ প্রয়োজন নেই।

অনলাইন ওয়াটার পিউরিফায়ারের মধ্যে আছে পিউরইট, কেন্ট, ইউনিলিভার-আল্টিমা ইত্যাদি। দাম ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

অফলাইন ওয়াটার পিউরিফায়ারের মধ্যে আছে, কেন্ট, পিউরইট, লিভপিউর। দাম ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা।

আরএফএল বাজারে এনেছে একটি নতুন অফলাইন পিউরিফায়ার যা দামে বেশ সাশ্রয়ী। মাত্র ২ হাজার ৭শ’ টাকা।

অটোমেইটিক গ্যাস স্টোভ:
মিয়াকো, আরএফএল ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ডাবল বার্নার গ্যাস স্টোভের দাম ২ হাজার ৬শ’ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।

বৈদ্যুতিক চুলা: ফিলিপসের ইলেকট্রিক চুলার দাম সাড়ে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা।

ননস্টিকি ফ্রাইপ্যান: ননস্টিকি ফ্রাইপ্যান ৭শ’ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়কালে দরদাম দেওয়া হল। মার্কেট ভেদে দামের পার্থক্য হতে পারে।

ছবি: আব্দুল মান্নান।