অবহেলিত ৬ শারীরিক সমস্যা

জটিলতা বাড়ার আগেই সাবধান হওয়া ভালো।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 10:32 AM
Updated : 24 July 2016, 10:53 AM

পুরুষের অসংখ্য শারীরিক জটিলতার মধ্যে প্রায়ই অবহেলার শিকার হওয়া ছয়টি শারীরিক জটিলতার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েরসাইট। 

বুক ব্যথা: পুরুষরা বুক ব্যথাকে সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে জুড়ে দেন। তবে হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও আরও কয়েকটি রোগ যেমন— ফুসফুসের জটিলতা, নিউমোনিয়া, পালমোনারি এম্বোলিজম, হাঁপানি ইত্যাদির উপসর্গ হিসেবেও নিয়মিত বুক ব্যথা হতে পারে।

পরামর্শদাতা মনোবিজ্ঞানী, ভারতের হেমন্ত মিত্তাল বলেন, “অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে পুরুষদের মধ্যে ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল’ জটিলতা যেমন, অ্যাসিড বিপরীতপ্রবাহ বা পাকস্থলীতে আলসার দেখা দেয় প্রায়শই। এই জটিলতাগুলোর কারণে প্রচণ্ড বুকব্যথা হয় এবং কোনো অবস্থাতেই তা অবহেলা করা উচিৎ নয়।”

শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি: শ্বাসরুদ্ধতা পুরুষদের একটি সাধারণ সমস্যা এবং এটি হৃদযন্ত্রের মারাত্বক জটিলতার লক্ষণ। পাশাপাশি বিভিন্ন ফুসফুসজনিত জটিলতা যেমন, ফুসফুস ক্যান্সার, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), দীর্ঘমেয়াদি ব্রংকাইটিস, এম্ফিসেমা, হাঁপানি, ফুসফুসে উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিরও উপসর্গ হতে পারে এটি। শ্বাসরুদ্ধতা রক্তশূন্যতারও লক্ষণ, যা ইদানিং পুরুষদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়।     

অবসাদ: মারাত্বক ক্লান্তি এবং কর্মচাঞ্চল্যের অভাব পুরুষরা অনুভব করেন প্রায় প্রতিনিয়ত। কারও ক্ষেত্রে তা ডেকে আনে কাজের প্রতি অনাগ্রহ, নেতিবাচকতা, অনিদ্রা।

ভারতীয় ফিজিশিয়ান ডা. প্রাভিন দিহানা বলেন, “গুরুতর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে অবসাদ। ক্যান্সার, ‘কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর’, ডায়বেটিস, আর্থ্রাইটিস, প্রদাহ এবং বুক ও যকৃতের নানান জটিলতার সঙ্গে সম্পর্ক আছে অবসাদের। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কার্যকারীতা নষ্টের ইঙ্গিতও হতে পারে অবসাদ।”

দুশ্চিন্তা: জরিপ বলে, পুরুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ পুরুষের উপর পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন প্রত্যাশার মানসিক চাপ। আর পুরুষের চাপা স্বভাবের কারণে এই মানসিক চাপ বয়ে আনে অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা।

ডা. হেমন্ত মিত্তাল বলেন, “মানসিক চাপের কারণ মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে সেরোটনিন, নোরেপিনফিন, ডোপামিন ইত্যাদি নিউরোকেমিকাল টেনে আনা। অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে মস্তিষ্ক ‘শাটডাউন মোড’য়ে চলে যায়।

“দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় মস্তিষ্ক অনেকগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়ে এই রাসায়নিক উপাদানগুলোকে সঞ্চয় করে। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে, দেখা দেয় আত্নহত্যার প্রবনতা।” বলেন মিত্তাল।

স্মৃতিভ্রম: খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভুলে যাওয়া খুব একটা হালকা বিষয় নয়। ভুলে যাওয়ার এই প্রবণতা পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

ডা. মিত্তাল বলেন, “এজন্য বয়স কিছুটা দায়ি। তবে আল্তছাইমার’স ডিজিস, মস্তিষ্কে টিউমার, মস্তিষ্কে প্রদাহ ইত্যাদিরও লক্ষণ হতে পারে স্মৃতিভ্রম। ভিটামিনের অভাবও স্মৃতিভ্রমের কারণ হতে পারে, যা খুব একটা ভালো ব্যাপার নয়।”

মুত্রনালীর জটিলতা: নারীদের মতো পুরুষদেরও বিভিন্ন জননেন্দ্রিয় বিষয়ক ঝামেলা পোহাতে হয়, যার বেশিরভাগই অবহেলিত রয়ে যায়। প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া বা প্রসাবে জ্বালাপড়ার পুরুষের জন্য বেশ মারাত্বক সমস্যা। কারণ তা হতে পারে বৃক্ক বা যকৃতের সমস্যা লক্ষণ। প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া প্রোস্টেট ক্যান্সার, বৃক্কে পাথর, মুত্রথলিতে প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে।

ডিএনবি ইউরোলজির চিকিৎসক ডা. আনন্দ বিশ্বাস বলেন, “অবহেলা করলে আরও নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষের সাধারণ সমস্যা। তবে পুরুষ এসবের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহেলা করে, ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।”