দেখে আসুন রাসলীলা উৎসব

কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মনিপুরী সম্প্রদায় জাঁকজমক ভাবে এই উৎসব পালন করেন। এবারের মহা রাসলীলা উৎসবের শুরু ২৫ নভেম্বর।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2015, 09:20 AM
Updated : 18 Nov 2015, 09:26 AM

মণিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘মহা রাসলীলা’। মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা কমলগঞ্জ আর আদমপুরে পালিত হয় এ উৎসব।

কমলগঞ্জের মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপে রাসলীলা উৎসবের আয়োজন করেন মহারাসলীলা সেবা সংঘের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা। আর আদমপুরের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মণ্ডপে রাসলীলা উৎসবের আয়োজক মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের রাস উৎসব উদযাপন কমিটি।

মাধবপুরের মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলা এগারোটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে গোপরাস। সন্ধ্যার পরে চলবে মণিপুরী কীর্তন। রাত এগারোটা থেকে ভোর পর্যন্ত চলবে উৎসবের মূল আকর্ষণ মণিপুরী নারীদের অংশগ্রহণে রাসনৃত্য।

আর আদমপুরের সনাঠাকুর মণ্ডপে কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ২৫ নভেম্বর বেলা এগারোটায় রাখাল নৃত্য, রাত বারোটা থেকে ভোর পর্যন্ত রাসনৃত্য।

মহা রাসলীলা উপলক্ষ্যে দুই জায়গাতেই বসে গ্রামীণ মেলা। এ উপলক্ষে এখানকার মণ্ডপগুলো কাগজের কারুকাজে চোখ ধাঁধানো নকশায় সাজানো হয়। এরই মাঝে মণিপুরী তরুণী শিশু নৃত্যশিল্পীরা রংবেরংয়ের পোশাকে সুনিপুন নৃত্যাভিনয় রাতভর মুগ্ধ করে রাখেন ভক্ত আর দর্শনার্থীদের। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ মিলিত হন এ আনন্দ উৎসবে।

রাসলীলার ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো। জানা যায় ১৭৬৯ সালে মনিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নাদেশে রাসলীলার এই নৃত্য-গীতের প্রর্বতন করেছিলেন। মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র বেষ্ণব ধর্মের আচরণীয় শ্রীমদ্ভগবতের রাস পঞ্চাধ্যায় পঠন সেবায় ব্রতী হন বটে কিন্ত ভগবৎকৃত রাসলীলা, গোপী, সখী ও মঞ্জুরীসহ বিরাজমান দৃশ্য চাক্ষুষ দর্শনে অপারগ হয়ে নিজে শ্রীগোবিন্দ জিউর চরণে প্রাণপাত শয়নে গেলেন। তন্দ্রাবস্থায় তিনি দেখতে পান, শ্রীকৃষ্ণ শীরাধা ও গোপীসহ দিব্য রাসলীলা করছেন। এরপরে মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র কয়েকজন কুমারী মেয়ে দিয়ে স্বপ্নের মতো রাসলীলা করালেন। এতে নিজ কন্যা কুমারী বিশ্বাবতীকে শ্রীরাধা এবং মন্দিরের শ্রীগোবিন্দকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাসলীলা করেন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি কমলগঞ্জ যাওয়া যায় ট্রেনে। সিলেটগামী পারাবত ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কমলগঞ্জ (ভানুগাছ) স্টেশনে থামে। এছাড়া অন্যান্য ট্রেনে শ্রীমঙ্গল এসেও সেখান থেকে সহজেই কমলগঞ্জ আসা যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা।

এছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ যাওয়া যায় বাস কিংবা অটো রিকশায়। একইভাবে যাওয়া যাবে আদমপুরেও।

কোথায় থাকবেন

কমলগঞ্জে থাকার তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি থাকার জন্য ব্যবস্থা হল লাউয়াছড়া বনের পাশে বেসরকারি সংস্থা ‘হীড বাংলাদেশ’র বাংলো (০১৭১৩২৭৪৭৪২)। এছাড়া কমলগঞ্জের কাছাকাছি থাকার জন্য আরও একটি ভালো জায়গা ‘সুইজ ভ্যালী’ রিসোর্ট।

শমশেরনগর বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এ রিসোর্টে আছে বেশ কয়েকটি আধুনিক কটেজ। এ রিসোর্টের কটেজগুলোতে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় নানারকম কক্ষ আছে। যোগাযোগ: সুইস ভ্যালী রিসোর্ট, শমশেরনগর, মৌলভীবাজার। ফোন-০১৭৮৬৪৯৩৭০০।