রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পেছন দিকে এই তিন রেস্তোরাঁ মিলছে বাংলাদেশের আঞ্চলিক খাবার। অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে হাতের ডানে কুয়েতি মসজিদ সড়কে পাবেন মেজবান বাড়ি আর চিটাগঙ্গ এক্সপ্রেস, মিলবে চাটগাঁইয়া খাবারের স্বাদ।
যমুনা ফিউচার পার্কের গেট থেকে গ্রামীনফোন অফিসের দিকে যেতে হাতের ডানে গলির ভেতরে পাবেন চইঝাল, এখানকার খাবারে পাবেন খুলনার রান্নাঘরের আবহ।
মেজবান বাড়ি
রেস্তোরাঁর মূল ফটক দিয়ে ঢুকে প্রথমেই চোখ আটকে যাবে রেস্তোরাঁর মাঝখানে একটি তালগাছ আর তার গায়ে লাগানো কাঠের তীরচিহ্নগুলো। আপনি চাটগাঁইয়া না হলে বা চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে পরিচয় না থাকলে তীরচিহ্নের গায়ে লেখা ‘ঠাডাখানা’, ‘বস খানা’, ‘টাট্টি খানা’, ‘পেটি ঘর’ শব্দগুলো দেখে চোখ কুঁচকে যেতে পারে।
ঠাডাখানা হল আড্ডা দেওয়ার জায়গা, টাট্টিখানা মানে শৌচাগার, পেটি ঘর হল ক্যাশ কাউন্টার আর বস খানা মানে রান্নাঘর- জানালেন রেস্তোরাঁর মালিক আবু সায়েদ কবির আহমেদ।
খাবারের তালিকায় আছে মেজবানি গোশত, কালাভুনা, আখনি বিরিয়ানি, চানার ডাল, নলা কাঞ্জি, মুরগি, দুরোস, আর পরাটা।
কবির আহমেদ বলেন, “পুরো গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করে তিন বেলা খাওয়ানোই হল চট্টগ্রামের মেজবানি। ভাত, গরুর মাংস আর চানার ডাল হল এই মেজবানি খাবারের অংশ। কালাভুনা যোগ হয়েছে কিছু বনেদি পরিবারের কল্যাণে।”
এখানে মেজবানি মাংসের দাম ১৬৫ টাকা, কালাভুনা ২৩০ টাকা, চানার ডালের দাম ৮৫ টাকা আর ভাত ২৫ টাকা। আখনি বিরিয়ানি ১৪০ টাকা। মুরগি ১৩০ টাকা।
“দুরোস হল আস্ত মুরগি। জামাই, বাড়িতে আসলে দুরোস পরিবেশন করাটা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। আমাদের এখানে দাম ৫শ’ টাকা। গরুর পায়ের হাড় থেকে তৈরি হয় নলা কাঞ্জি, দাম ৭৫ টাকা। পরোটা ২৫ টাকা। খাবার পরিবেশন করা হয় মাটির বাসনে।” বললেন আহমেদ।
এছাড়াও চট্টগ্রামের তিন নদী শঙ্খ, সাঙ্গু ও কর্নফূলি নামে রয়েছে তিনটি সেট মেন্যু। দাম ২৪০ টাকা থেকে ৩৫৫ টাকা।
ছাত্রদের জন্য আছে দেড়শ টাকার সেট মেন্যু, পাওয়া যাবে আখনি বিরিয়ানি এবং ড্রিংকস। ডেজার্টে আছে ফালুদা, জর্দা পোলাও, ফিরনি, বরফি, নারিকেলের পুডিং, লাচ্ছি ও ড্রিংকস।
দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই রেস্তোরাঁ। ওয়াইফাই আছে।
চিটাগাঙ এক্সপ্রেস
রেস্তোরাঁর মালিক মফিজুর রহমান বলেন, “শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসে। বসার ব্যবস্থা আছে একশ জনের। খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। দুপুর আর রাতের খাবারের সময় চাপ বেশি থাকে।”
মেজবানি গোশত, প্রতি বাটি ৮শ’ টাকা আর প্লেট প্রতি ১৪০ টাকা। মেজবানি ডাল, প্রতি বাটি ৩শ’ টাকা আর প্লেট প্রতি ৬০ টাকা। কালাভুনা এক বাটি ১ হাজার টাকা আর প্লেট হিসেবে ২শ’ টাকা। পায়া প্রতি বাটি ২শ’ টাকা আর প্লেট প্রতি ৬০ টাকা। আখনি বিরিয়ানি ফুল প্লেট ২শ’ টাকা আর হাফ প্লেট ১৪০ টাকা। মুরগির রেজালা প্রতি প্লেট ১শ’ টাকা। পরোটা ১৫ টাকা। নান রুটি ২০ টাকা।
২২০ টাকায় পাওয়া যাবে সেট মেন্যু। থাকবে মেজবানি গোশত, মেজবানি ডাল, পায়া আর ভাত। এছাড়াও ছাত্ররা ১০টি খাবার অর্ডার করলে একটি পদ পাবেন বিনামূল্যে।
মফিজুর রহমান বলেন, “চট্টগ্রামের খাবারের ‘অথেনটিক’ স্বাদ দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।”
ডেজার্টে আছে ফিরনি, দাম ৪০ টাকা। দই ৬০ টাকা।
চইঝাল
মালিক মহিউদ্দিন মহি বলেন, “এই বছরের জুলাই মাস থেকে ছয় সহকর্মী মিলে যাত্রা শুরু করেছি আমরা। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে আমাদের রেস্তোরাঁ। বসার ব্যবস্থা আছে ৩৬ জনের। দুপুর এবং রাতের খাবারের সময়ে ভিড় বেশি হয়। ছাত্র আর চাকরিজীবি ক্রেতাই বেশি আসেন।”
খাবারের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, “আমাদের খাবারের বিশেষত্ব হল মাংস রান্নায় মসলাজাতীয় গাছ চইঝালের ব্যবহার। আসলে খুলনায় রান্নায় এই গাছ ব্যবহার করা হয়। সেই ঐতিহ্যকেই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।”
এখানে গরুর মাংস প্রতি প্লেট ১২০ টাকা। খাসির মাংস ১২০ টাকা। মুরগির মাংস কোয়ার্টার ১৪০ টাকা। ভাত, দই, ফিরনি ৩৫ টাকা।
রেস্তোঁরায় খাবার পরিবেশনের ধরণটা একটু ভিন্ন। ক্রেতার সামনে মাংসের বড় গামলা এনে দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিজের পছন্দ মতো মাংস তুলে নেয় ক্রেতারা।
ছবি: আব্দুল মান্নান দিপ্ত।