ঘুরে আসুন হোসেনী দালান

যানজট আর ভিড়ের ভয়ে অনেকেই পুরানো ঢাকায় যেতে চান না। তবে যে কোনো ছুটির দিনে যখন যানজটের ভয় নেই, ঘুরে আসতে পারেন হোসেনী দালান থেকে।

শান্তা মারিয়াবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2015, 08:39 AM
Updated : 16 Oct 2015, 08:39 AM

বিশেষ করে যারা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনুরাগী তাদের জন্য খুব আকর্ষণীয় একটি স্থান হোসেনী দালান। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে খুব কাছেই হোসেনী দালান।

নাজিমুদ্দিন রোডে নবাব বাগিচা নামে একটি বাই লেইন রয়েছে। এটি দিয়ে খানিকদূর গেলেই পড়বে হোসেনী দালান।

প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো এই স্থাপনা দেখতে বেশ সুন্দর। প্রবেশ পথ দিয়ে ভিতরে ঢুকলে বড় বাগান, দীঘি ও মূল স্থাপনা চোখে পড়বে। ৯৩৮০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে শিয়া সম্প্রদায়ের এই উপাসনালয়।

তবে প্রবেশ করতে পারেন সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই। হোসেনী দালানের সঠিক নির্মাণকাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মনে করা হয় সপ্তদশ শতকে (১৬৪২ সাল) মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজা এটি নির্মাণ করেছিলেন।

শাহ সুজা নিজে সুন্নি হলেও শিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার খুব হৃদ্যতা ছিল। তাই তার আদেশে সৈয়দ মুরাদ নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেন। আবার সৈয়দ মুরাদ সুলতান মোহাম্মদ আজমেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

কারবালা প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসেনের শাহাদৎবরণকে স্মরণ করার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই হোসেনী দালান। একে ইমামবাড়াও বলা হয়। ইমামবাড়া নির্মাণ শিয়া সম্প্রদায়ের একটি প্রচলিত রীতি। ভারতের ও বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ইমামবাড়া রয়েছে।

প্রথমে এটি ছিল তাজিয়াখানা। পরে অন্যান্য অংশ গড়ে তোলা হয়। ১৮০৭ থেকে ১৮১০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এর অনেক অংশ গড়ে ওঠে। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দালানটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবার নতুন করে অনেক অংশ নির্মাণ করা হয়। ঢাকার নবাব খাজা আহসান উল্লাহ ভবনটি নতুনভাবে গড়ে তুলতে সে সময় লাখ টাকার বেশি ব্যয় করেন।

ঢাকার হোসেনী দালানে গেলে দেখা যায়, পুরো ভবনটি চমৎকার কারুকার্যময়। ভবনের সামনে রয়েছে একটি জলাশয় যা এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে।

দালানটি একটি উঁচু মঞ্চের উপর অবস্থিত। প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে একটি প্রশস্ত সিঁড়ি রয়েছে। দালানের ভিতরে দুটি বড় আকারের হলঘর রয়েছে। বিশাল আকারের এই হলঘরদুটিও খুব সুন্দরভাবে কারুকার্য করা। ক্যালিওগ্রাফির চমৎকার নির্দশন রয়েছে দেওয়ালে। হলঘর দুটির সঙ্গে আরও কয়েকটি কক্ষ রয়েছে।

দক্ষিণ দিকের সামনের অংশে দুপ্রান্তে দুটি তিনতলা বুরুজ আছে। বুরুজগুলোর শীর্ষে রয়েছে গম্বুজ। ভবনের প্যারাপেটে রয়েছে রঙিন নকশা যা পদ্মফুলের আকৃতির। আর এর চার কোণে রয়েছে চারটি ছত্রী।

হোসেনী দালানে আরও রয়েছে শিয়া সম্প্রদায়ের কবরস্থান। আঙিনার শেষ অংশে রয়েছে মোগল আমলে নির্মিত ফটক।

নারী-পুরুষ সবাই এই দালানে প্রবেশ করতে পারেন।

হোসেনী দালানে ঢুকতে কোনো প্রবেশমূল্য লাগে না। তবে ঢাকার এত পুরানো একটি স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরেকটু জোরদার হওয়া উচিত বলে কয়েকজন দর্শনার্থী এই প্রতিবেদকের কাছে মত প্রকাশ করলেন।

প্রতিবছর মহরম মাসের ১ ধেকে ১০ তারিখে আশুরা উপলক্ষ্যে জমজমাট হয়ে ওঠে হোসেনী দালান। তখন এখানে নানা রকম আচার অনুষ্ঠান হয়। এখান থেকেই মহরমের তাজিয়া মিছিল বের হয় এবং শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। সেসময় এ এলাকার চারপাশে মেলাও বসে।

জাতীয় জাদুঘরে হোসেনী দালানের একটি চমৎকার রেপ্লিকা রয়েছে যা পুরোটি রূপা দিয়ে তৈরি।

ছবি: লেখক ও শিহাবুর রহমান।