পায়ের বিশেষ যত্ন

আলোকিত কিংবা বাদল দিনে থাকুক কোমল চরণ তলে।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 10:24 AM
Updated : 19 July 2016, 11:07 AM

সুন্দর মুখ বা চুলের জন্য কতই না কসরত করতে হয়— ফেইশল, হেয়ার ট্রিটমেন্ট, স্পা ইত্যাদি। তবে অবহেলায় থেকে যায় আমাদের পা যুগল।

প্রতিদিনের ধকল আর অযত্নে পায়ের ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ আর মলীন। তাছাড়া বৃষ্টির সময় পায়ের ত্বক এবং নখের ক্ষতি হয় সব থেকে বেশি।

পানি এবং কাদার কারণে পায়ের নখে ফাঙ্গাস সংক্রমণ, চুলকানি, ফুস্কুড়ি ইত্যাদি সমস্যা হতেই পারে।

রাজধানীর মালিবাগ সিটি মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরীয়ার শরীফ বলেন, “বর্ষায় ফাঙ্গাস আক্রমণের কারণেই পায়ের আঙুলের মাঝে ইনফেকশন হয়ে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে পা সব সময় শুকনা রাখার চেষ্টা করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "বর্ষায় পা ভিজে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে এ সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে যদি পায়ের আঙুলের ফাঁকে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখা যায়।”

এরপরও যদি পায়ে ফাঙ্গাস দেখা দেয় তাহলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল বিভিন্ন ধরনের মলম এবং ক্রিম পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। আর বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন ডা. শাহরিয়ার।

তাছাড়া বর্ষায় নিয়মিত পা পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত বাইরে থেকে ঘরে ফিরে হালকা গরম পানি দিয়ে পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখলে যে কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে।

এ বিষয়ে পরামর্শ দেন রেড বিউটি স্যালুনের কর্ণধার আফরোজা পারভিন।

তিনি বলেন, “বৃষ্টির সময় না চাইলেও পায়ে পানি লেগে যায়। তাই পা বন্ধ জুতা পরে ঘর থেকে বের হওয়া যেতে পারে। এটা সম্ভব না হলে, বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই পা ভালোমতো ধুয়ে শুকনা করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতি সপ্তাহে পেডিকিউর করানো গেলে পা পরিষ্কার থাকবে। পেডিকিউর করা হলে পা এবং নখের ভিতর সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়।”

তাছাড়া ঘরোয়া উপায়ে প্রতিদিনই পায়ের বিশেষ যত্ন নিলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

আফরোজা পারভিনের পরামর্শ হচ্ছে, বাইরে থেকে ঘরে ফিরে হাল্কা গরম পানিতে শ্যাম্পু এবং অল্প পরিমাণে খাবার সোডা মিশিয়ে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর আলতোভাবে পা ঘষে ধুয়ে নিয়ে, শুকনা করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। এতে পায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে না।

বর্ষায় পায়ের নখ বড় না রাখাই ভালো। আর যদি বড় রাখাও হয় তাহলে প্রতিদিন খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ নখের ভিতরে কাদা এবং ময়লা পানি জমে থাকলে ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

নখ পরিষ্কার করার জন্য পা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে নেইল ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নখের ভিতরেও ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে যেন কোনো ধরনের ময়লা জমতে না পারে।

সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে এই বর্ষাতেও পায়ের নানান সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে জানান, আফরোজা।

তবে গরমেও পায়ের ত্বকের ক্ষতি হয়ে থাকে।

রোদে পায়ের ত্বক পুড়ে কালচে হয়ে যায়। তাই সব সময়ই ঘর থেকে বের হওয়ার ২০ মিনিট আগে মুখ ও হাতের পাশাপাশি পায়ের ত্বকেও সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন লাগিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া পায়ের রোদে পোড়াভাব দূর করতেও পেডিকিউর বেশ উপকারী। তবে চাইলে ঘরোয়া বিভিন্ন মাস্ক তৈরি করেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

চন্দন, মুলতানি মাটি, দুধ ও পাকাকলা চটকে মিশ্রণ তৈরি করে তা পায়ে লাগালে ত্বক কোমল হবে এবং রোদেপোড়া দাগ কমবে।

তাছাড়া নিয়মিত লেবুর রসে তুলা ভিজিয়ে পায়ে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। লেবুর রস ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই রোদেপোড়া দাগ দূর করতে এটি খুবই সহায়ক।

ছবি: আব্দুল মান্নান।