মনের মতো পড়ার জায়গা

একটু বুদ্ধি খাটালেই ছোট বাসাও সাজিয়ে নেওয়া যায় মনের মতো। তবে ইচ্ছানুসারে ঘর সাজিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2015, 10:02 AM
Updated : 1 Sept 2015, 06:47 PM

এখন অধিকাংশ ফ্ল্যাটই আকারে ছোট হয়ে থাকে। তাই শোবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর ও খাবার ঘরের ব্যবস্থা করার পর আলাদা করে পড়ার ঘরের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। তবে কিছুটা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে ছোট ঘরেই মনের মতো বসার ঘরের জায়গা করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন বিভাগের প্রধান নাসিমা নাসরীন বলেন, “নিজের মতো পড়ার জন্য পড়ার ঘর নয় প্রয়োজন সামান্য জায়গা। তার চারপাশেই তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে মনের মতো পরিবেশ।”

এর জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করা প্রয়োজন যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারবে। এর জন্য শোবার ঘরের বা বসার ঘরে একপাশের জানালার দিক বেছে নেওয়া যেতে পারে। এতে আলো বাতাস ঠিক মতো চলাচল করবে।

নিজের পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় চেয়ার, টেবিল বা মেঝেতে ম্যাট্রেস পেতে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারবে এরকম জায়গায় পড়ার ঘরের ব্যবস্থা করা উচিত। যেমনটি করেছেন অ্যাকশন এইডে কর্মরত কাশফিয়া ফিরোজ তার নিজের বাসায়।

নাসিমা নাসরীন পড়ার জায়গা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে শেলফের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন। পড়ার জায়গাটি কার জন্য? তা বিবেচনা করে শেলফের আকার নির্ধারণ করতে হবে।

যদি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য হয় তাহলে একটু বড় শেলফ হওয়া ভালো। তবে অবশ্যই তা নাগালের মধ্যে হতে হবে। যদি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের জন্য হয়ে থাকে তবে বুক শেলফের পাশাপাশি কম্পিউটার টেবিলের কথাও মাথায় রাখতে হবে। 

আর যদি অবসরে বই পড়ার জন্য করা হয়ে থাকে তবে একটু নিচু ও ছোট শেলফ হলে ভালো হয়। এটা দৃষ্টি নন্দনও বটে। সেক্ষেত্রে মেঝেতে ডিভাইন বা যেকোনো ম্যাট্র্যাস রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি রং ও আকৃতির মিল রেখে কুশন বা ছোট বালিশ রাখা যায়। যা বই পড়ার সময়কে অনেকটা আরামদায়ক করে তুলবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

পড়ার জায়গায় সাদা রং প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান তিনি। এতে মনের চঞ্চলতা কমে ও মানসিক স্বস্থি বজায় থাকে। তবে নিজের পছন্দসই যেকোনো হালকা রং ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে বই পড়ার অভ্যাস থাকলে হাতের কাছে ল্যাম্পশেইড রাখার পরামর্শ দেন নাসিমা নাসরীন।

পড়ার জায়গার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এতে নানারকমের ছোট, রঙিন কার্পেট, শো-পিস রাখা যেতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের পড়ার ঘরে নানারকমের ছোট খেলনা, পুতুল, রঙিন ছবি, বেলুন বা প্রাকৃতিক দৃশ্য রাখা যেতে পারে। এতে তাদের পড়ার সময়টা বিরক্তিকর বা একঘেঁয়ে লাগবে না। তাছাড়া এতে শিশুর মানসিক বিকাশও সঠিকভাবে হবে।

অবসরে বই পড়ার ব্যবস্থা করা হলে একটু নিচু ও ছোট শেলফ হলে ভালো হয়।

অনেকে বই পড়ার সময় গান শুনতে পছন্দ করেন। তারা পড়ার জায়গায় মিউজিক সিস্টেমের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে শেলফের নিচের অংশে সাউন্ডের ব্যবস্থা করে উপরের অংশ বই রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশে একটি হেডফোন রাখা যেতে পারে, যেন শব্দ অন্যের বিরক্তির কারণ না হয়। তবে এই পদ্ধতি কেবল মাত্র যারা মেঝেতে বসে পড়ার ব্যবস্থা করতে চান তাদের জন্য।

যারা চেয়ার টেবিলে পড়তে এবং গান শুনতেও পছন্দ করেন তারা টেবিল থেকে খানিকটা দূরে মিউজিক সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে চেয়ারে পা ঝুলিয়ে পড়তে অসুবিধা হবে না।

পড়ার জায়গার পাশে যদি গাছ রাখা যায় তবে তা পড়ার পরিবেশকে অনেকটাই প্রাণবন্ত করে তুলবে। এই রকম পড়ার ঘরের পরিকল্পনা বসার ঘর বা শোবার ঘরের একটি কোণায় অনায়াসেই করা যায়।

তবে গৃহিনীদের জন্য শোবার ঘর বেছে নেওয়াই বেশি উপযোগী। কারণ সারাদিন খাটাখাটুনি করে বা কাজের ফাঁকে বই পড়তে চাইলে শোবার ঘরের চেয়ে আরামের জায়গা আর হয় না।

প্রকৃতি প্রেমিক যারা তাদের যদি সুযোগ থাকে তবে বারান্দা অথবা বাগানের কোনো এক অংশ পড়ার জায়গা হিসেবে নির্বাচন করা যেতে পারে। এতে খুব সহজেই মনের খোড়াক যোগানো সম্ভব বলে মনে করেন নাসিমা নাসরীন।