পেয়ারার রাজ্যে একদিন

দক্ষিণের জেলা শহর ঝালকাঠী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালে বসে শতবর্ষের পুরনো ঐতিহ্যবাহি ভাসমান হাট। প্রায় সারা বছরই এ হাট বসলেও পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে প্রায় তিন মাস এ হাট জমজমাট থাকে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2015, 10:06 AM
Updated : 19 August 2015, 10:07 AM

সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে ভাসমান এ হাট। ঝালকাঠী থেকে ছোট ছোট খালে ঘুরে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে বেড়িয়ে আসতে পারেন ভাসমান এ হাট থেকে। 

ঝালকাঠী শহর থেকে খুব সকালে ছোট ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে ভিমরুলি। জেলা শহর থেকে সড়ক পথেও ভিমরুলি যাওয়া যায়। তবে এ এলাকার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে নৌকায়।

ভিমরুলি বাজারের ব্যস্ততা থাকে মাত্র ঘণ্টা তিনেক। বেলা এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত এ বাজারে ব্যস্ততা বেশি থাকে। ঝালকাঠী থেকে ভিমরুলি পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বাজার জমে ওঠার আগে তাই ঢুঁ মারতে পারেন এখানকার পেয়ারা বাগানে।

নৌকা ভর্তি পেয়ারা নিয়ে বিক্রির জন্য ভিমরুলি বাজারে যাচ্ছেন এক কৃষক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

ভিমরুলির সর্বত্রই পেয়ারা বাগান। ছোট ছোট নালা কেটে তার দুই পাশে লাগানো হয় পেয়ারার গাছ। এ এলাকায় দিনে দুবার করে জোয়ার ভাটা হয়। বাগানের নালাগুলো তাই সবসময়ই পানিতে পূর্ণ থেকে। সেসব নালায় ছোট ছোট নৌকায় চড়ে পেয়ারা পারেন কৃষকরা। সে নৌকাই আবার বোঝাই করে ভিমরুলির বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। ভিমরুলির পেয়ারা বাগানে কৃষকদের ব্যস্ততা থাকে সকালের দিকে।

খুব সকালে শুরু করে ৯টা থেকে ১০টা মধ্যেই বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে ফেলেন তারা।

বাগান ঘুরে চলে আসুন ভিমরুলি বাজারে। পেয়ারা বোঝাই শত শত ছোট নৌকা ভিমরুলির কৃত্তিপাশা খালে কিলবিল করে। চাষীরা এ খালে নৌকা বোঝাই পেয়ারা নিয়ে খুঁজে ফেরেন ক্রেতা। এ বাজারের ক্রেতাদের বেশিরভাগই পাইকার। বড় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তারা বাজারে আসেন। ছোট ছোট নৌকা থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে চালান করে দেন।

ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি শেষ হয় পেয়ারার মৌসুম। এর পরে মধ্য ভাদ্র থেকে কার্তিকের শুরু পর্যন্ত এ বাজারের প্রধান পন্য আমড়া। পেয়ারা বাগানের পাশাপাশি এ অঞ্চলে আমড়ার চাষও প্রচুর।

আমড়ার সঙ্গে এ বাজারে আসে সুপারিও। বছরের অন্যান্য সময়ে ভিমরুলির বাজারে আসে স্থানীয় সবজি।

ভিমরুলি ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের উপরের ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়। বাজারের ছবি তোলার জন্য এ জায়গাই শ্রেষ্ঠ।

নৌকা ভর্তি পেয়ারা নিয়ে বিক্রির জন্য ভিমরুলি বাজারে যাচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

নৌকা ভর্তি পেয়ারা নিয়ে বিক্রির জন্য ভিমরুলি বাজারে যাচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে ঝালকাঠী যাওয়া যায়। নদী পথে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক যাত্রা হবে প্যাডেল স্টিমারে।

ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টায় বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট-স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’, ‘পিএস অস্ট্রিচ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ন’ ছাড়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ঝালকাঠী স্টেশনে থামে স্টিমারগুলো।

সপ্তাহের দিনগুলোতে পালাক্রমে ছাড়ে স্টিমারগুলো। ভাড়া প্রথম শ্রেণি কেবিন জনপ্রতি ১ হাজার ২৫০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণি কেবিন জনপ্রতি ৭৬০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণি ডেক জনপ্রতি ১৯০ টাকা।

এছাড়া সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘এমভি ফারহান ৮’ এবং ‘এমভি সুন্দরবন ২’ লঞ্চ। ভাড়া দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ টাকা। একক কেবিন ১ হাজার টাকা এবং ডেকে জনপ্রতি ২শ’ টাকা।

ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনের এসি বাসও যায় ঝালকাঠী। ভাড়া ৮শ’ টাকা। এছাড়া, ‘দ্রুতি’, ‘ঈগল’, ‘সুরভী’ ও ‘সাকুরা’ পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।

ঝালকাঠী লঞ্চঘাট কিংবা কাঠপট্টি ঘাটে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। ১০ জনের চলার উপযোগী একটি নৌকার সারাদিনের ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।   

ঝালকাঠীর ভিমরুলি গ্রামে ভাসমান বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করছেন পাইকাররা। এ এলাকায় সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের দর কষাকষির সুযোগ থাকে না। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

কোথায় থাকবেন

ঢাকা থেকে রাতের লঞ্চে গিয়ে পরের দিন ঘুরে আবার রাতের লঞ্চেই ফেরা যায়। তবে থাকতে চাইলে ঝালকাঠী শহরে সাধারণ মানের হোটেল আছে। ভাড়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে বরিশাল শহরে আরও ভালো মানের হোটেল আছে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

ভাসমান বাজারের এ ভ্রমণে সাঁতার জানা না থাকলে সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিতে হবে। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ভিমরুলি বাজারের জনি রেস্তোরাঁ ভালো। খাল বিলের মাছ পাবেন এখানে। রান্নাও চমৎকার। এই রেস্তোরাঁর রসগোল্লা খেতে ভুলবেন না। এ এলাকার মানুষগুলো বেশ ভদ্র ও মার্জিত। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট কিংবা অন্য কোনো অপচনশীল বর্জ্য খালে ফেলবেন না।