বর্ষায় দশ যাত্রা

ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে ভ্রমণ গন্তব্য অনেক। একেক ঋতুতে এদেশের ভ্রমণের জায়গাগুলো একেক রূপে ধরা দেয়।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2015, 11:19 AM
Updated : 14 August 2015, 11:19 AM

অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্ষায় ভ্রমণ অনেক উপভোগ্য। প্রকৃতি এ সময়ে সজীবতায় ভরে ওঠে। বাংলাদেশে বর্ষায় ভ্রমণের দশটি গন্তব্য নিয়ে লাইফস্টাইলের এবারের আয়োজন।

সুন্দরবন

ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত বাংলাদেশ সুন্দরবন। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয় এলাকা জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। ‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ দুটি বিভাগের অধীনে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ কার হয়েছে সুন্দরবনকে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। নানান বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ শ্বাসমূলীয় বন। বর্ষায় সুন্দরবন ভ্রমণ হতে পারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। পুরো বন এ সময়টায় যেন সজীব হয়ে ওঠে। বন্যপ্রাণীও দেখা যায় প্রচুর।   

সুন্দরবন

টেকনাফ

টেকনাফ

বর্ষায় ভ্রমণের আরেক গন্তব্য টেকনাফ সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশ মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলা। এখানকার সমুদ্র সৈকত দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সৈকতগুলোর একটি। টেকনাফের বেলাভূমিতে মানুষের আনাগোনা খুবই কম। দেশের অন্যান্য সৈকত থেকে একেবারেই আলাদা এটি। এত বাহারি রঙিন জেলে নৌকা বাংলাদেশের আর কোনো সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় না। যারা নির্জনে সমুদ্র ভ্রমণ ভালোবাসেন তাদের জন্য টেকনাফ আদর্শ জায়গা।

ঝালকাঠী

বর্ষায় ভ্রমণের আকর্ষণীয় আরেক জায়গা দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠী জেলা। এ জেলার ব্যাক ওয়াটার কেরালাকেও হার মানায়। আর এখানকার ভাসমান বাজারগুলোও থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেটের মতো মোটেই মেকি নয়। বর্ষা মৌসুমে ঝালকাঠীর ছোট ছোট খালগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখা যায় এ জনপদের জীবনযাত্রা। আর এসব খালে খালেই এ সময়ে বসে ভাসমান হাট। ঝালকাঠীর ব্যাক ওয়াটার ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হলো সদর উপজেলার ভিমরুলি পেয়ারা বাজার। বর্ষা মৌসুমে এখানে পুরা সপ্তাহই বসে পেয়ারা ও মৌসুমি ফল, সবজির ভাসমান বাজার।  

নীলাচল

ঝালকাঠী

নীলাচল

বান্দরবান শহরের সবচেয়ে কাছে সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬শ’ ফুট উঁচু এ পর্যটন কেন্দ্র। বর্ষায় এ জায়গা থেকে মেঘ ছোঁয়া যায়। বান্দরবান জেলা পরিষদের উদ্যোগে গড়ে তোলা মনোরম এ পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের থাকার জন্য রিসোর্টও আছে।

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়া এলাকায় পাহাড়ের গায়ে গায়ে লাগোয়া জায়গায় পর্যটকদের জন্য আছে নানা ধরণের ব্যবস্থা। শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে। এ পথে প্রায় তিন কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে তাই পৌঁছুতে হয়। মাঝে পথের দুই পাশে ছোট একটি পাড়ায় দেখা যাবে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের বসবাসও।

নীলগিরি

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজর ২শ’ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সেনাবাহিনী পরিচালিত এ পর্যটন কেন্দ্রে থাকার জন্য ভালো মানের কটেজ আছে। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এখানে পর্যটকদের সঙ্গে মেঘের মিতালিও হয়। এখানে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল।

নীলগিরি

সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি

বর্ষায় ভ্রমণের আরেকটি অসাধারণ জায়গা সাজেক ভ্যালি। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় এর অবস্থান। তবে যাওয়ার সহজ পথ খাগড়াছড়ি থেকে। এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য সেনাবাহিনীর উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে সাজেক রিসোর্ট। সাজেক ভ্যালির উপর থেকে চারপাশের সৌন্দর্য খুবই মনোরম। সাজেক ভ্যালির আরও উপরে আছে আদিবাসীদের একটি গ্রাম কংলাকপাড়া। 

নেত্রকোনার হাওর

নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি ও কলমাকান্দা উপজেলা জুড়ে কমবেশি ৫৬টি হাওর ও বিল আছে। শুকনা মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষায় পানিতে পরিপূর্ণ থাকে এসব হাওর-বিল। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। বর্ষাকালে হাওরের গ্রামগুলি একেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়।

এছাড়াও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে বর্ষা মৌসুমে লঞ্চে চড়ে যাওয়া যায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে।

শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল

নেত্রকোনার হাওর

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। আর এ জেলার সবচেয়ে বেশি চা বাগান শ্রীমঙ্গলে। চা বাগানে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। একমাত্র বর্ষাকালেই চাবাগানগুলোতে কর্ম চাঞ্চল্য থাকে। বাগানগুলোও থাকে বেশি সজীব। শ্রীমঙ্গলের চা বাগান ভ্রমণের সঙ্গে অবশ্যই উপভোগ্য হবে বর্ষার লাউয়াছড়া উদ্যান। বর্ষায় এ উদ্যানে ভ্রমণে বেশ উপভোগ্য। 

রাতারগুল

বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন রাতারগুল। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এ বন বছরের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সময়ই ডুবে থাকে। সিলেট বন বিভাগের উত্তর সিলেট রেঞ্জে-২ এর অধীন প্রায় ৩ হাজার ৩২১ একর জায়গা জুড়ে রাতারগুল জলাবনের অবস্থান। এর মধ্যে ৫০৪ একর জায়গায় মূল বন, বাকি জায়গা জলাশয় আর সামান্য কিছু উঁচু জায়গা।

শুধু বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী সময়ে পুরো জঙ্গলই পানিতে ডুবে থাকে। শীতে প্রায় শুকিয়ে যায় রাতারগুল। তখন কেবল জল থাকে বনের ভেতরে খণন করা বড় জলাশয়গুলোতে। রাতারগুলের সৌন্দর্য দেখতে হলে তাই যেতে হবে বর্ষায়।

রাতারগুল

বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি  

বর্তমানে সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। এ জায়গাতেও ভ্রমণের আসল সময় বর্ষাকাল। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রস্তুমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে এই জায়গা। পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাধারা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ।

যেতে হয় পাহাড়ি নদী পিয়াইন ধরে। এ নদী যৌবন পায় কেবল বর্ষায়। তখন ভরা পিয়াইনের বুকে চলতে চলতে এর দুই পাশের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হবেন যে কেউ। পিয়াইনের পরে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারির পায়ের কাছেই পাথর বিছানো বিছনাকান্দি।

ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।