বর্ষায় পাহাড়ের রূপ যেন খাপ খোলা তলোয়ারের মতো। নীল আকাশের নিচে সবুজ ডানাগুলো মেলে ধরে তারা যেন আনন্দে মাতে। পাহাড় দেখতে কাঁধে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ার এই তো সময়।
উদ্দেশ্য কেওক্রাডং। বৃষ্টির ঘোর কেটে গেলেও আকাশে তখনও কালো মেঘের হাতছানি। বান্দরবান শহর থেকে রুমার বাস। সহযাত্রী হিসেবে আরও কিছু অভিযাত্রী। ভিতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে আবার বাসের ছাদে চড়ে বসলো।
রুমার উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে বাস ছুটে চলছে তীব্র গতিতে। ছাদ থেকে খোলা আকাশকে আরও কাছের মনে হয়। রুমাবাজার পৌঁছতে পৌঁছতে সূযর্টা তখন আকাশের মধ্যমনি। রুমার বাজারে সঙ্গী হলেন গাইড শাহজাহান। মধ্যহ্ন ভোজের পবর্টা রুমার বাজারেই সেরে নেওয়া গেল।
আপাত গন্তব্য বগালেকের সিয়াম দি’র কটেজে। পাহাড় বেঁয়ে উঠতে উঠতেই আকাশে চাঁদের আবির্ভাব। তার আলোতেই পুরো পথ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। পাহাড়গুলো কেবল অদ্ভুতই মনে হচ্ছিল এমন ভরা পূর্ণিমায়! আকাশে খচিত হাজারও তারার সঙ্গে পাহাড়ের এমন মিতালী শুধু এখানেই খুঁজে দেখা যায়!
সিয়াম দি’র কটেজে পাহাড় সমান ওজনের ব্যাকপ্যাকটা কাঁধ থেকে নামিয়ে, বগালেকের শীতল জলে ঝাপ। দীর্ঘ পথ হাঁটার ক্লান্তি খুব সহজে ভুলিয়ে দিল লেকের স্বচ্ছ ঠাণ্ডা তরল পরশ! রাতের আকাশ জুড়ে শুধু ছিল চাঁদের আলো।
তারপর বৃষ্টিহীন রাত কাটিয়ে ভোরের স্নিগ্ধ আলোটা গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দখলে।
বৃষ্টির পর পাহাড় জুড়ে আবার মেঘের স্বর্গ। সাদা সাদা মেঘের দল পাহাড়ি পাড়াগুলোর চারপাশে আবরণ তৈরি করেছে। মেঘ আর সবুজের ট্রেইল জুড়ে পাহাড়ের চড়াই উৎড়াই। একপাশে বিশাল শনবন অন্যপাশে গভীর খাদ।
দূর থেকে কেওক্রাডংয়ের চূড়াকে ধোয়াটে মনে হয়। সাদা মেঘে ঢাকা। পৌঁছতেই শুরু হল ঝড়। হওয়ায় ঝাপটায় দাঁড়ানো দায়। বৃষ্টি–বাতাস-মেঘ সময় সময় দখল নিচ্ছে চূড়ার আশপাশ।
গায়ে কাপুনি দেওয়া বৃষ্টি এড়িয়ে দুপুরে আহারের আয়োজন হল মালিক লালা বমের বাসায়। লালা বমের দোতলা কটেজ থেকে পুরো পাহাড়কে মনে হচ্ছিল মায়াবীপুরীর অন্য দেশ। যে দেশে কেবল আছে পাহাড়ের চূড়া, মেঘের দল, বৃষ্টির আনাগোনা আর দূর পাহাড় থেকে বয়ে আসা তীব্র বাতাসের শোঁ শোঁ ধ্বনি!
যেভাবে যাবেন
বিভিন্ন পরিবহনের বাসে ঢাকা/চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বান্দরবানে যাওয়া যায়। সপ্তাহের প্রতিদিন বান্দরবান থেকে রুমার পযর্ন্ত বাস ছাড়ে। বাসে যেতে হয় রুমা বাজার পযর্ন্ত। তাছাড়া বান্দরবান সদর থেকে সরাসরি রিজার্ভ চাঁদের গাড়ি করেও রুমা বাজারে পৌঁছানো যায়। রুমা থেকে গাইড নিয়ে চাঁদের গাড়িতে অথবা পাঁয়ে হেটে বগালেক যাওয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৫৫৬ ৭১০০৪৩, ০১৮১৫ ৮৫৬৪৯৭ নম্বরে।
ছবি: লেখক।