ফেইসবুকে রায়নার স্ট্যাটাস দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সূর্যর। রায়না আর অভ্র কোনো এক কফিশপে বসে আড্ডা দিচ্ছে তার ছবি পোস্ট করেছে। আবার কমেন্টে লিখেছে ‘গোয়িং স্টেডি’। রায়না আর অভ্রর মধ্যে নতুন একটা সম্পর্ক হচ্ছে খুবই ভালো কথা, তবে সেটা কি সূর্যকে আগে জানানো যেত না? রায়নার সঙ্গে সূর্যর বন্ধুত্ব সেই স্কুলজীবন থেকে। সে-ই অভ্রকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে রায়নার সঙ্গে। তাহলে ওরা দুজন এই কথাটা ওকে আগে জানালো না কেন?
সূর্যর মতো অনেকেই বন্ধুর অনেক ব্যবহারে এমন আঘাত পেয়ে থাকেন। কারণ বন্ধুর কাছ থেকে, বিশেষ করে ঘনিষ্ট বন্ধুর কাছ থেকে প্রত্যাশা থাকে একটু বেশি। জীবনের আনন্দ-বেদনার সংবাদ কাছের বন্ধুরা সবচেয়ে আগে জানবে এমনটিই থাকে প্রত্যাশিত। এর ব্যতিক্রম ঘটলে দুঃখ পাওয়াই স্বাভাবিক।
সম্পর্কটা বন্ধুত্বে থেকে যেতে পারে কিংবা গড়াতে পারে প্রেমে।
আবার বন্ধু যে সবসময় সহপাঠি বা সহকর্মী হবে তাও নয়। বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক কিংবা অন্য কেউও হতে পারে সেরা বন্ধু। অসমবয়সীরাও বন্ধু হতে পারে। এমনকি এমন মানুষও বন্ধু হতে পারে যার সঙ্গে সরাসরি কখনও দেখা হয়নি। হয়তো বন্ধুত্ব হয়েছে ফেইসবুকে, দেখা হয়েছে স্কাইপে।
ধরন যাই হোক না কেনো বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত হল একজন অন্যজনকে বুঝবে, তার সুখে সুখী হবে আর দুঃখে দুঃখী। দুজনের পছন্দ অপছন্দে মিল থাকবে আর মিল থাকবে রুচিতে। বন্ধুত্বে প্রতিযোগিতাও থাকতে পারে তবে তা খুব কুৎসিত আকার কখনও ধারণ করবে না, করলে আর সেটি বন্ধুত্বের পর্যায়ে থাকবে না।
কথা হচ্ছিল স্কলাসটিকার সিনিয়র শিক্ষক আয়শা শর্মিনের সঙ্গে। স্বামী ফেরদৌস তার সেরা বন্ধু। সেই স্কুল জীবন থেকেই তারা পরষ্পরের বন্ধু। বন্ধুত্ব একসময় প্রেমে রূপ নেয়। তারা বিয়ে করেন। এখনও সেই বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে।
তিনি বললেন, “আমাদের সম্পর্কের মূল সুর গাঁথা আছে বন্ধুত্বের মধ্যে। আমার যে কোনো সমস্যায় তাকেই সবচেয়ে কাছে পাই|”
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রূপা এবং জলি ছিলেন পরষ্পরের সেরা বন্ধু। এখন রূপা ঢাকায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে চাকরি করছেন। আর জলি বাস করছেন কানাডায়। তবে দুজনের বন্ধুত্ব এখনও রয়েছে। ঢাকায় এলেই মেতে ওঠেন আড্ডায়। আর যোগাযোগ রাখেন ফেইসবুকের মাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাদেরই আরেক বান্ধবী ছিলেন নদী। তিনিও কানাডায় আছেন। নদী দাম্পত্য জীবনে একবার চরম সংকটে পড়লে জলি এগিয়ে যান তার সাহায্যে।
অসুস্থ বন্ধুকে বাঁচাতে চ্যারিটি শো বা কনসার্টের আয়োজন করতে অন্য বন্ধুদের এগিয়ে আসার ঘটনা বিরল নয়। বরং অত্যন্ত স্বাভাবিক। বন্ধুদের সহায়তায় অনেকেই এভাবে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা শিকদার বলেন, “বন্ধুত্ব আমাদের মনে নির্ভরতার অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষ একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা ও বিষন্নতার অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।”
আবার বন্ধু বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুটা সতর্কতা প্রয়োজন। বিশেষ করে ফেইসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাহায্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সেখানে প্রকৃত বন্ধু কতজন তা প্রশ্নসাপেক্ষ| একেবারে অজানা অচেনা মানুষকে বন্ধু ভেবে চটজলদি তাকে বিশ্বাস না করাই ভালো। তাতে প্রতারিত হওয়ার ভয় থাকে না।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণে বহুদিন পর ফিরে পাওয়া যাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের। জানা হচ্ছে তাদের সাম্প্রতিক খবরাখবর, গড়ে উঠছে নানারকম ফ্রেন্ডস গ্রুপ। এটা অবশ্যই ইতিবাচক একটি দিক।
আমরা পৃথিবী নামের ছোট্ট একটি গ্রহের বাসিন্দা। মহাবিশ্বে আমরা হয়তো একা নই। ভিনগ্রহীদের সঙ্গে সুদূর ভবিষ্যতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার আশা অমূলক নয়। তবে তার অনেক আগে প্রয়োজন এই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’য়ের বাসিন্দাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও প্রীতি। জয়তু বন্ধুদিবস।
ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক।
মডেল: আখি, রুপক, লিমা, হামিদ, নুসরাত, দিপ্ত, তারেক, অনন্যা, ইমু, আরাফাত, রনি, মুন, প্রমা, হাসান, মামুন, তমাল, লিটন, তনু, সোহাগ, মানিতা, সানিকা ও রাইদা।