কালচিত্রের বাহাস

রাজধানীর ধানমণ্ডির অলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে শিল্পী হারুন অর রশীদ টুটুলের ‘কালচিত্রের বাহাস’ শিরোনামের তার এই প্রদর্শনী।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2015, 03:22 PM
Updated : 31 July 2015, 03:22 PM

“অনেক ভালো হয়েছে, অভিনন্দন তোমাকে। তবে অবাক হলাম প্রদর্শনী এখনো চলছে দেখে। আমার মনে আছে, ২০০৪ সালে আমার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো।”

ঢাকার অলিয়াস ফ্রসেজের ক্যাফেটেরিয়ায় কথা হচ্ছিল শিল্পী হারুন অর রশীদ টুটুলের সঙ্গে। কথার মাঝেই যেন অনাহুত অতিথির মতই হাজির হলেন এই বক্তা। তবে ব্যাহত হওয়ার চেয়ে বরঞ্চ আলোচনা আরও প্রাণ পেল, শিল্পী সদরুল হাসান রাফির এই কথার পর।

নিজের অক্ষেপ জড়ানো ভালো লাগার কথা বলে, তিনি বিস্মিত করবার চেয়েও বেশি অনুপ্রেরণার রেণু ছড়িয়ে গেলেন বাতাসে।

যার কাজ নিয়ে এই কথা, তিনি হারুন অর রশীদ টুটূল। শিল্পী হিসেবে এর আগে বিভিন্ন দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করলেও, নিজের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন সম্প্রতি।

প্রদর্শনীতে জায়গা পাওয়া ২৬টি শিল্পকর্মে অক্রেলিক আর মিশ্র মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী টুটুল। রং আর ক্যানভাসের ব্যবহারে নিজের ব্যক্তি জীবনের বিশ্বাসকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন শিল্পী, এমনটাই মনে হয়েছে। একই সঙ্গে কাজের বিষয়বস্তুর কথা বিবেচনা করলে, সমকালীন যাপিত জীবনের ঘটনাই যে তার মূল উপজীব্য তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয়না। সমাজের নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে আকাঙ্ক্ষিত জীবন আর ঘটমান কিংবা দৃশ্যমান বাস্তবতার যে বৈপরিত্য তার ক্যানভাসে উঠে এসেছে নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত শক্তিশালী।

“দুবছর আগে আমার মা ক্যান্সারে মারা যান। সময়টা আমার জন্য খুব সহজ ছিল না। একে তো খাবারের বিষ আর চারপাশের নোংরা বাস্তবতায় মায়ের এই অসুস্থতার চাপ, তার উপর চিকিৎসা সেবা নামের এই চূড়ান্ত প্রহসন মূলক অর্থনৈতিক আচরণে আমি বিপর্যস্তও ছিলাম কিছুটা। সব মিলিয়ে এই ঘটনাটা আমার জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই প্রগতিশীল নানান রাজনৈতিক ও সাংস্কতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, এখনও আছি। এগুলো সবই হয়তো আমার কাজে প্রভাব রেখেছে।” নিজের কাজের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে এমন ভাবনার কথাই বলেন শিল্পী টুটুল।
‘ট্রেইল অব ডেসট্রাকশন’, ‘টাইম অ্যান্ড রিয়েলিটি’, ‘এক্সপ্লোডিং সিটি’, ‘কনজিউমার রিয়েলিটি’, ‘পিয়ার্সিং ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামগুলোও জানান দেয় শিল্পীর কাজে সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা কতটা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। নিজের মনের ভাব প্রকাশে কিংবা সত্যিকার অর্থেই চারপাশের মানুষের না বলা কথা কিংবা অভিব্যক্তি জানাতে কোনো বিমূর্ত ধারণাকে আশ্রয় করতে হয়নি তাকে। বরং প্রতিদিন নিজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি টেলিভিশন, খবরের কাগজ কিংবা ইন্টারনেটে দেখা-শোনা অথবা অনুভব করা বিষয়গুলো যেন শৈল্পিক আকার পেয়েছে তার ক্যানভাসে।

যেখানে মূল্যবোধহীন রাজনীতি, লক্ষ্যহীন ও বাণিজ্যিক শিক্ষাব্যবস্থা, গলা টিপে ধরা চিকিৎসা ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিপর্যন্ত পরিবেশ মাতা, বিষধর খাবার, চাকচিক্যে ভরা কর্পোরেট বাস্তবতা, সম্পদ আহরণের নামে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এমনই সব বিষয় হাজির হয়েছে কোলাজের মধ্য দিয়ে।

উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলায় ১৯৭৬ সালে জন্ম শিল্পী টুটুলের। সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বর্তমানে শিল্পচর্চার পাশাপাশি একই বিভাগে সহকারি অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।

২৭ জুলাই শুরু হওয়া তার এই প্রদর্শনী চলবে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত এই আয়োজন, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ।

অলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ঠিকানা: ২৬, মিরপুর রোড (ধানমণ্ডি সড়ক ৩ এর পাশে)। ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫।

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ ।