বিষয়: ফ্যাটি লিভার

২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিশেষ এই দিনে বিশ্বব্যাপি লিভার রোগ মানে হেপাটাইটিস প্রতিরোধ বা চিকিৎসা সম্বন্ধে গনসচেতনতার মাধ্যমে হেপাটাইটিসের কারণে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে এক বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 10:02 AM
Updated : 28 July 2015, 12:17 PM

লিভার বা যকৃতের অন্যতম একটি সমস্যা হল ‘ফ্যাটি লিভার’। আর এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ এবং লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল)।

ফ্যাটি লিভার কি?

ফ্যাটি লিভার লিভারের একটি খুব সাধারণ রোগ। এ রোগের কথা প্রথম শোনা যায় ১৯৬২ সালে। তবে ১৯৮০ সালে অধ্যাপক লুডউইগ প্রথম এ রোগটিকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেন। ফ্যাটি লিভারের ব্যাপ্তি ব্যাপক। লিভারে সাধারণ চর্বি জমা থেকে শুরু করে ফ্যাটি লিভারের কারণে এসব রোগীদের লিভার সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।

যেসব কারণে ফ্যাটি লিভার হয়

পাশ্চাত্যে ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ অ্যালকোহল। তবে আমাদের মতো দেশগুলোতে মেদভুঁড়ি, ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, হাইপারটেনশন বা অতিরিক্ত রক্তচাপ আর হাইপোথাইরয়েডিজমই ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৩৩ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে। অন্যদিকে শতকরা ৪৯ ভাগ ভারতীয় যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারেও আক্রান্ত। হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস অনেক সময়ই ফ্যাটি লিভার করে থাকে। কর্টিকোস্টেরয়েড, টেমোক্সিফেন ইত্যাদি ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের আরেকটি বড় কারণ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ স্টাইল।

সিডেন্টারি বা আয়েশি জীবন-যাপন আর অতিরিক্ত ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে লিভারে চর্বি জমতেই পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে জনপ্রিয় ’ফাস্ট-ফুড’ সংস্কৃতি ফ্যাটি লিভারের বাড়তি প্রাদুর্ভাবের সম্ভবত একটি বড় কারণ।

রোগের লক্ষণ

অন্যান্য বেশিরভাগ ক্রনিক লিভার ডিজিজ রোগীদের মতো ফ্যাটি লিভারের রোগীদেরও প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না। এদের কেউ কেউ পেটের ডান পাশে উপরের দিকে ব্যাথা, ভার-ভার ভাব বা অস্বস্তি, দুর্বলতা কিংবা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পরার কথা বলে থাকেন।

ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল)

শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব রোগীদের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগের লিভার বড় পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ট্রান্স-এমাইনেজ বেশি থাকতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক থাকলেই যে লিভারে হেপাটাইটিস নেই একথা বলা যায় না।

ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষা হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম, যদিও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের অধিকাংশ রোগীরই রক্তে সুগার, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাটি লিভার সনাক্ত করার উপযোগী পরীক্ষার নাম হচ্ছে ফাইব্রোস্ক্যান।

তবে নিশ্চিত করে ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের পরীক্ষা হচ্ছে লিভার বায়োপসি। এতে একদিকে যেমন নির্ভুলভাবে ফ্যাটি লিভার ডায়াগনোসিস করা যায়, তেমনি পাশাপাশি লিভারে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস, ফাইব্রোসিস এবং সিরোসিসের উপস্থিতি সম্বন্ধেও একমাত্র এই পরীক্ষা মাধ্যমেই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।

ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে লিভারে সিরোসিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা। অতিরিক্ত মেদ কমানো ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার একটি অন্যতম দিক। তবে খুব দ্রুত, অপরিকল্পিতভাবে ওজন কমালে তাতে বরং হিতে-বিপরীত হওয়ার আশংকা থাকে। কারণ এর ফলে লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ওজন কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পিত ডায়েট কন্ট্রোল, এক্সারসাইজ, ওষধ সেবন কিংবা প্রয়োজনে অপারেশন করা যেতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের কারণ নির্ণয় ও তার যথাযথ চিকিৎসাও অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।

আরও কিছু বিষয়

একটা সময় ছিল যখন ধারণা করা হত হার্ট বা মস্তিষ্কে চর্বি জমে হার্ট-অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মত মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করলেও লিভারের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। তবে বিগত দশকে সেই ধারণার আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আজ প্রমাণিত যে ফ্যাটি লিভার, লিভারের অন্যতম প্রধান রোগ।

সঠিক সময়ে এ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও রোগী সবারই ব্যাপক সচেতনার প্রয়োজন। কারণ শুরুতে ব্যবস্থা নিলে এ রোগ অধিকাংশ সময়ই নিরাময় হয়।

লিভারের ছবি: রয়টার্স।