মাদাগাস্কার

আচ্ছা, সিংহ দেখলেই কি তোমাদের ভয় করে? মনে হয়, এক্ষুণি হালুম বলে তোমার ঘাড়ে লাফ দিয়ে এসে পড়বে? অ্যালেক্স কিন্তু মোটেও সেরকম নয়।

>> নাবীল অনুসূর্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2014, 10:38 AM
Updated : 19 July 2014, 10:38 AM

ও খুবই ভালো একটা সিংহ। আসলে ওর সারাজীবন নিউ ইয়র্ক সেন্ট্রাল জু’তে কেটেছে কিনা, তাই সিংহ যে কী রকম হিংস্র, সেটা ও জানেই না! ওই চিড়িয়াখানাতে ওর খুব প্রিয় বন্ধু হলো মার্টি নামের এক শাদা-কালো ডোরাকাটা জেব্রা, ম্যালমেন নামের এক উঁচু গলার ভীতু জিরাফ আর গ্লোরিয়া নামের এক ঘুমকাতুরে আলসে আমুদে জলহস্তী। সেদিন ছিলো আবার মার্টির জন্মদিন। আর তাই নিয়ে অ্যালেক্স, ম্যালমেন আর গ্লোরিয়ার সে কী আগ্রহ! ওদিকে মার্টির কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো উৎসাহ নেই। কারণ, ওর খুব আফ্রিকার কথা মনে হচ্ছে। যেখানে ও জন্মেছে, যেখানে ও বড়ো হয়েছে। ও শুধু চিন্তা করছে, কিভাবে চিড়িয়াখানার এই বন্দী জীবন থেকে আফ্রিকার সেই বন্য প্রাণচঞ্চল জীবনে ফিরে যাওয়া যায়। আর সেই চিন্তার কথা শুনে তো অন্যদের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। বলে কি মার্টি! ওরা এই চিড়িয়াখানা ছেড়ে কোথায় যাবে? বাইরে কি কেউ ওদের নিয়মিত খেতে দিবে? ওরা তখন খাবে কী?

কিন্তু কে শোনে কার কথা! মার্টি কাউকে কিছু না বলে চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে গেল, যাবে কানেক্টিকাটে। ওর ধারণা, ওখানে গেলে সে অন্তত আফ্রিকার মতো খোলা জায়গা পাবে, যেখানে ইচ্ছেমতো দৌঁড়াতে পারবে সে। কিন্তু তাই কি আর সম্ভব? ওরা যখন ট্রেনে উঠলো, ট্রেনের সব মানুষ তো ভয়েই শেষ! তুমিই বলো, ট্রেনে যদি তোমার সঙ্গে একটা জেব্রা, একটা জিরাফ, একটা জলহস্তী আর একটা সিংহ ওঠে, তুমি কি ভয় পাবে না? তাই নিয়ে তো বিশাল হুলস্থুল পরে গেল। পরের স্টেশনে রীতিমতো সেনাবাহিনী এসে ওদের ঘেরাও করে অজ্ঞান করে ধরে নিয়ে গেল। আর এই ঘটনার পরে প্রাণী অধিকার নিয়ে যেসব সংগঠন কাজ করে, ওরা তো বিশাল হট্টগোল শুরু করে দিল-- এসব বন্য প্রাণীকে আর চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রাখা যাবে না। ওদেরকে বনে পাঠিয়ে দিতে হবে। আর সরকারও দেখল, কথা তো ভুল নয়। ওরা যদি প্রতিদিন এভাবে চিড়িয়াখানা থেকে পালাতে শুরু করে, তবে তো সমস্যা! সুতরাং, ওদেরকে আফ্রিকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

ওহ্হো! চিড়িয়াখানায় ওদের অন্য সঙ্গীদের কথা তো বলাই হয়নি। সেখানে আরো ছিলো ৪টা খুবই বুদ্ধিমান পেঙ্গুইনের একটা দল। ওদের দলনেতার নামই আবার স্কিপার। ওরা যে কী বুদ্ধিমান, ওদের কাজ-কর্ম না দেখলে তুমি বিশ্বাসই করতে পারবে না! আরো ছিলো দুই শিম্পাঞ্জী। ওরাও কিন্তু কম দুষ্টু না। আর একটা শিম্পাঞ্জী তো পড়তেও পারে। ও আবার কথা বলে না!

তো এই আজব প্রাণীগুলোর সবাইকে একটা জাহাজে করে পাঠানো হলো আফ্রিকায়। কিন্তু পেঙ্গুইনরা কি আর বাক্সে বন্দী হয়ে জাহাজে পরে পরে পঁচবে! তা তো হতেই পারে না! ওরা এক এক করে সবাই বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো। আর তারপর জাহাজের নাবিকদের কাবু করে ওরাই জাহাজ চালাতে শুরু করল। একেবারে পুরো জাহাজই ওদের দখলে। ওরা আবার আফ্রিকায় যাবে কেন বলো তো? ওদের বাড়ি তো অ্যান্টার্কটিকায়! ওরা জাহাজ অ্যান্টার্কটিকার পথে ঘুরিয়ে দিলো।

ওদিকে অ্যালেক্স, মার্টি, ম্যালমেন আর গ্লোরিয়ার জ্ঞান আসার পর সবাই কথা বলতে শুরু করলো। ওরা কেউ অবশ্য কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না। কারণ, ওদের সবাইকে আলাদা আলাদা বাক্সে বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছিল যে! তাই বলে কি আর বন্ধুদের ঝগড়া থেমে থাকে! অ্যালেক্স আর মার্টি শুধু শুধুই ঝগড়া শুরু করে দিল। আর ওদের বাক্স রাখা ছিল একেবারে পাশাপাশি। ওরা দুইজন দুইজনের বাক্সে ধাক্কা দিতে শুরু করল। তাতে ওদের কারোরই কিছু হলো না, মাঝখান দিয়ে ওদের বাক্সদুটোর বাঁধন গেল খসে। আর তখনই পেঙ্গুইনের দল জাহাজটাকে অ্যান্টার্কটিকার দিকে ঘুরিয়ে দিল। আর ওদের বাক্সগুলোও ঝাঁকি খেয়ে পরে গেল সমুদ্রে। সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে ওরা বাক্সসমেত গিয়ে পরল মাদাগাস্কারে। কিন্তু একেকজন পরলো একেক জায়গায়। অ্যালেক্স বাক্স থেকে বের হয়ে দেখে, ও একা। মার্টি, ম্যালমেন, গ্লোরিয়া, কেউ নেই আশেপাশে। এখন উপায়? একে তো অচেনা জায়গা, তার উপর বন্ধুদেরও কেউ নেই। ও তো আরেকটু হলে পাগলই হয়ে যাচ্ছিল! এমন সময় দেখা পেলো গ্লোরিয়ার। তারপর ম্যালমেনের। সবার শেষে পেল মার্টিকে। সবাই এখন একসঙ্গে হয়েছে, এবার তো ওদের একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার কথা, তাই না? কিসের কী! অ্যালেক্স তো পারলে মার্টিকে মেরেই ফেলে। ওর জন্যেই না আজকে ওদের এই দূর্দশা!

গ্লোরিয়া তো অনেক কষ্টে অ্যালেক্সকে থামাল। কিন্তু তাতে কী আর ওদের দূর্দশা কমলো? ওরা জানেও না, ওরা কোথায়। ম্যালমেন বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলল, ওরা আছে সান ডিয়াগোতে! বুঝো, কেমন বিজ্ঞ এই ম্যালমেন! মাথা মোটা হলেই কি আর বুদ্ধিমান হয়! এদিকে অ্যালেক্স আবার নিউ ইয়র্কে ফিরে যাবার চেষ্টা করলে কি হবে, মার্টি কিন্তু এরই মধ্যে জঙ্গলে রীতিমতো আসন পেতে বসল। তাদের এই অচেনা দ্বীপে বনবাসকে সে রীতিমতো তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে শুরু করল। আর শেষমেশ অ্যালেক্সও ওদের সঙ্গেই যোগ দিল। কী আর করা! ওদের যে আর সেই প্রিয় চিড়িয়াখানায় ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।

একটু পরে ওদের দেখা হল একদল লেমুরের সঙ্গে। এরা হলো মাদাগাস্কারের বানরের মতো আকারের এক ধরনের আজব প্রাণী। ওদের আবার রাজাও আছে, আর সেই রাজার নামটাও বেশ জাঁকজমকপূর্ণÑ ত্রয়োদশ কিং জুলিয়েন! জুলিয়েন তো ওদের সঙ্গে বেশ ভাবও জমিয়ে ফেলল। কেন জানো? কারণ, ওখানে আবার ফোসা নামের বড়ো আকারের কুকুরের মতো এক ধরনের প্রাণী থাকে, যারা লেমুরদের ধরে ধরে খায়। এখন অ্যালেক্স একটু বকে দিলেই তো ওরা আর লেমুরদের তাড়া করবে না। যেই কথা সেই কাজ। অ্যালেক্স ওদেরকে এমন করে বকে দিলো, ওরা একেবারে ঐ বন থেকেই চলে গেল। কিন্তু নতুন যেই সমস্যা দেখা দিলো, তার সমাধান করবে কে? বনে এসে বনের হাওয়া লাগতেই অ্যালেক্স হয়ে উঠল শিকারী সিংহ। মনের ভুলে তো কয়েকবার ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মার্টিকেই কামড়ে ধরল! বুঝো অবস্থা! উপায় না দেখে অ্যালেক্স বনের এক গহীন জায়গায় গিয়ে চারপাশে ধারালো বর্শা পুঁতে দিলো, যাতে ও মনের ভুলেও ওর কোনো বন্ধুকে কামড়ে না দেয়। ওদিকে তখন ফোসারাও তো খুব মজা পেয়ে গেল। সিংহটা নেই মানে ওদের আটকানোরও কেউ নেই! ওরা এবার ফোসাদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবে? আর যদি বাঁচলোই, ওদের নিউ ইয়র্কের চিড়িয়াখানার বাসাতেই বা কিভাবে ফিরে যাবে, বলো তো দেখি? কি, কোনো সমাধান এলো মাথায়? থাক, আর মাথা চুলকে চুল তুলে টাক হবার দরকার নেই। চট করে মজার এই ছবিটা দেখে নাও, তাহলেই তো সমাধান জেনে যাবে!

ছবি                    : মাদাগাস্কার

পরিচালক             : এরিক ডার্নেল, টম ম্যাকগ্রাথ

ধরন                   : অ্যানিমেশন/ অ্যাডভেঞ্চার/ ফ্যান্টাসি

ভাষা                   : ইংরেজি

প্রকাশ                  : ২০০৫

প্রযোজনা               : ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন, পিডিআই