মানুষকে রক্ষা করে পাখিরাও

কাক এবং শিকারি বাজেরা পোষা হাঁস-মুরগির ছানা নিয়ে যায়। এছাড়া পাখি মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। বরং পাখিরা যুগ যুগ ধরে মানুষের উপকার করে আসছে।

>> সামিন ইয়াসারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2014, 08:16 AM
Updated : 14 July 2014, 08:16 AM

পাখিরা যদি সাহায্য না করত, তাহলে এই পৃথিবীতে মানুষের বসবাস করাটাই দায় হয়ে পড়ত।

ক্ষেতখামার, বনজঙ্গল, ফল ও ফুলের বাগানে অসংখ্য ছোটবড় নানান জাতের পোকামাকড় আছে। তারা গাছপালা খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। অবশ্য পোকামাকড়রা যে শুধু ক্ষতি করে তা নয়, উপকারও করে। কিন্তু তারা সংখ্যায় তাড়াতাড়ি বাড়ে। এভাবে বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। এভাবে বাড়তে থাকলে ওরা গাছপালা খেয়ে উজার করে দেবে। হারিয়ে যাবে সমস্ত সবুজ। মরুভূমি হয়ে যাবে পুরো বিশ্ব। এসব পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখে পাখিরা।

কীটপতঙ্গ শিকার করতে আবাবিল ও বাতাসি পাখির জুড়ি নেই। শূন্যে উড়ে উড়ে বিচিত্র রকম ভঙ্গি করে ওরা উড়ন্ত পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ ধরে ধরে খায়। ওরা অল্পসময়ের মধ্যে অনেক পোকা ধরে খেয়ে ফেলতে পারে। একটি ছোট পাখি ঘণ্টায় প্রায় ১২শ’ পোকা ধরে খেতে পারে।

কাঠঠোকরারাও পোকাখেকো পাখি। ওরা গাছের ডাল এবং গুঁড়ি থেকে পোকা খুঁটে খুঁটে খায়। আবার ঘরের আশপাশে থাকে যেসব বিষধর পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ, তাদের ধরে ধরে খায় চড়ুই এবং দোয়েলরা।

কৃষক যখন জমিতে লাঙল দেয় তখন গো-বক, ছোট সাদা বক, গো-শালিক, ফিঙে ইত্যাদি পাখি নানাবিধ পোকামাকড় খেয়ে হালের গরুকে পোকার জ্বালাতন থেকে রক্ষা করে। গরু এবং ছাগল মাঠে ঘাস খাওয়ার সময় জোঁকসহ নানাবিধ পোকা আক্রমণ করে। ফিঙে এবং শালিকের দল সে আক্রমণ থেকে রক্ষা করে গরু-ছাগলকে। গরু ও ছাগলের লোমের ভেতর এক ধরনের পোকা বাসা বাঁধে। পাখিরা সেসব পোকাও খুঁটে খুঁটে খায়।

চিল, ঈগল, বাজ এবং অন্যান্য শিকারি পাখিকে মানুষ পছন্দ করে না পোষা হাঁস-মুরগির ছানা খেয়ে ফেলে বলে। কিন্তু এ কথাও সত্য, তারা মেঠো ইঁদুর, নেংটি ইঁদুর ইত্যাদি শিকার করে ফসলের ক্ষেতের দারুণ উপকারও করে। পাখির ডিম-বাচ্চা খেয়ে ফেলে এমন সাপ ও অন্যান্য প্রাণীকেও ওরা শিকার করে। ফণা-তোলা বিষধর সাপটি যদি নজরে পড়ে ঈগলের, তাহলে রক্ষা নেই সেই সাপের।

মশামাছি, কীটপতঙ্গ বিষাক্ত জীবাণু ছড়িয়ে দেয় মানুষের মধ্যে। এসব মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গের হাত থেকে বিপন্ন মানুষকে রক্ষা করে পাখিরা।

ভুবনচিল, শঙ্খচিল আর কাকেরা শহর পরিচ্ছন্ন রাখে ময়লা খেয়ে। মরা জন্তু ও অন্যান্য ময়লা খেয়ে গ্রামাঞ্চলের পথঘাট আর মাঠ পরিষ্কার রাখে শকুনরা। দেশে দুর্ভিক্ষ হলে, বন্যা হলে শকুনেরা ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসে নিচে। চারপাশে ছড়ানো মরা জন্তুদের খেয়ে ফেলে অল্পসময়ের মধ্যে। শকুনেরা এত তাড়াতাড়ি খাবার গিলতে পারে যে দেখলে চমকে উঠতে হয়।

নানা রংয়ের ফল ও ফুলে ভরা গাছপালায় পাখিরা ভিড় করে সবসময়। কারণ কী? কারণ হচ্ছে খাদ্য সংগ্রহ। ওদের এই খাদ্য সংগ্রহ গাছের এবং মানুষের জন্য বিস্ময়করভাবে উপকারী। পাখিরা পাকা ফল খাওয়ার সময় বীজটিও খেয়ে ফেলে। পরে সেই বীজ তার পায়ুপথ দিয়ে পায়খানা হয়ে বেরিয়ে যায়। এতে দেখা যায়, একটি গাছের বীজ নানা স্থানে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই বীজগুলো যদি পাখিরা না খেত, তাহলে কী হত? সমস্ত বীজ বড় গাছের নিচে পড়ত। হাজার হাজার গাছ জন্মাত। এসব গাছ না পেত আলো, না পেত বাতাস, না পেত জল এবং না পেত বেড়ে ওঠার জন্যে প্রয়োজনমতো জায়গা। ফলে শুকিয়ে মরে যেত। বীজ ভালোভাবে ছড়িয়ে দিতে এবং গাছকে ভালোভাবে বড় করে তুলতে পাখিরাই সবচেয়ে যোগ্য। শুধু তাই নয়, অনেক ছোট ছোট বীজ পাখিদের কাদামাখা পায়ে অথবা পালকে আটকে যায়। এভাবে দূর দেশে পাখির সঙ্গে চলে যায় গাছের বীজ। আমাদের দেশে এমন অনেক বিদেশি গাছ আছে, যা অতিথি পাখিরা নিয়ে এসেছিল বীজ অবস্থায়। আমাদের দেশের অনেক গাছের বীজ ওরা নিয়ে গেছে বিদেশে। এভাবে একটি গাছের বীজ শুধু কয়েক মাইলের মধ্যে নয়, কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
ফুলের পরাগ সংমিশ্রণেও পাখিরা সবচেয়ে সক্রিয়। নানান রকম মৌটুসি, দুর্গা-টুনটুনি, ফুলঝুরি ইত্যাদি পাখি ফুলের ভেতর থেকে মধু বার করে খায়। মধু খাবার সময় ফুলের কিছু রেণু ওদের মাথায় কিংবা পালকে কিংবা ঠোঁটের চারপাশে আটকে যায়। শরীরে রেণুমাখা পাখিটি যখন অন্য ফুলে গিয়ে বসে, তখন তার বয়ে আনা রেণু অন্য ফুলের রেণুর সঙ্গে মিশে ফল ফলাবার কাজে লাগে।

আলোকচিত্র: যুগল তেওয়ারি