কেমন অদ্ভুত কথা বল তো! আর তাদের নামটাও ছিল অদ্ভুত-- লিলিপুট। আজব সেই দেশে গালিভার আর লিলিপুটের মধ্যে ঘটেছিল মজার মজার সব ঘটনা। আর সেই গালিভার আর লিলিপুটদের গল্প নিয়েই এই ছবিটা বানানো হয়েছে।
তবেই বোঝ, কেমন মজার মানুষ এই ল্যামুয়েল গালিভার! নাদুস-নুদুস আর কিছুটা বোকাসোকা গালিভারকে অফিসের সবাই খুব পছন্দ করে। সেও অফিসের সবাইকে খুবই পছন্দ করে। তবে এদের সবার মাঝে একজনকে সে একটু বেশিই পছন্দ করে। নাম তার ডরসি। ও পত্রিকাটির ভ্রমণবিষয়ক সংবাদ লেখিকা। তো এই ডরসি একদিন গালিভারকে একটা ভ্রমণকাহিনি লিখতে দিল।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও একটা লাইনও লিখতে পারল না বেচারা গালিভার। ও তো কখনও ঘুরতেই যায়নি, ও ভ্রমণ কাহিনি লিখবে কী করে! ও তখন এক বুদ্ধি বের করল। নানা জায়গা থেকে তথ্য জোগাড় করে সেগুলো জোড়াতালি দিয়ে ফেঁদে বসল এক জম্পেশ ভ্রমণকাহিনি। আর তাই দেখে ডরসি তো মহাখুশি। খুশির চোটে সে গালিভারকে বলল, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের উপরেও একটি লেখা দিতে।
আচ্ছা, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা তোমরা শুনেছ তো? এটি হচ্ছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি একটি ত্রিভুজাকৃতির জায়গা। এখানে অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে।
কী রকম? বহু জাহাজ আর প্লেন এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে। সেগুলো আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। কেমন অদ্ভুত, তাইনা? এগুলো কোথায় গিয়েছে কেউ বলতেও পারে না। রহস্যময় এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও অনেক গবেষণা করছেন। সেই গল্প না হয় আরেকদিন বলব।
জ্ঞান ফিরতেই গালিভার দেখল কি, তার শরীরজুড়ে দড়ির বাঁধন। আর তারচেয়েও ভয়ংকর কথা কী জান? তার গায়ের উপরে ও চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে শত শত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানুষ। দেখে তো গালিভার পুরোই আঁতকে উঠল। ভাবল, ও বোধহয় স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু ও তো স্বপ্ন দেখছে না, ও যে সত্যি সত্যিই এসে পড়েছে লিলিপুটদের দেশে! এদিকে বেচারা গালিভারকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেল লিলিপুটরা। সেখানে গিয়ে দেখে লিলিপুটদের রাজা, রানি আর রাজকুমারীও আছে। ওরা সবাই মিলে যুক্তি করে গালিভারকে বন্দি করে রাখল বিশাল এক গুহার মধ্যে।
বিশাল সেই গুহার মধ্যে গালিভারের পরিচয় হল এক বন্দি লিলিপুটের সঙ্গে। নাম তার হরেশিও। কী অদ্ভুত নাম, তাই না? ওদের নামগুলোই আসলে এ রকম। এই বেচারা হরেশিওকে বন্দি করা হয়েছে রাজকুমারীকে ভালোবাসার অপরাধে। লিলিপুটদের সেনাপতি এডওয়ার্ড হচ্ছে রাজকুমারীর হবু বর। সে জন্য যেই না সেনাপতির কানে গেছে হরেশিও’র প্রেমের কথা, আর যায় কোথায়, ওকে ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে এই গুহায়। আর এক গুহায় থাকতে থাকতে ওদেরও খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
তো এই ব্লুফিশিয়ানরা আক্রমণ করেছিল রাজকুমারীকে অপহরণ করার জন্য। কিন্তু গালিভার থাকতে কি আর তা হয়? বিপদ সংকেত শুনতে পেয়েই গালিভার ছুটে গেল রাজকুমারীকে বাঁচাতে। গালিভারকে দেখে ব্লুফিশিয়ানরা তো পুরোই হতভম্ব! ইয়া লম্বা এমনতরো মানুষ তো ওরা ওদের বাপ-দাদার জন্মেও দেখেনি।
আর গালিভারও মজা করে ব্যাটাদের ধরে ধরে ফেলে দিতে লাগল পানিতে। কিন্তু ওদিকে তো ততক্ষণে আরেক বিপদ হয়ে গেছে। শত্রুরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে রাজার প্রাসাদে। আর রাজা পড়েছেন তার মাঝে আটকা। রাজপ্রাসাদে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সবাই গালিভারের কাছে অনুরোধ করতে লাগল রাজাকে বাঁচানোর জন্য।
কিন্তু এত আগুন নেভানোর মতো পানি কোথায়? কিন্তু গালিভারের মাথায়ও তো বুদ্ধি কম নেই। সে কিন্তু ঠিকই আগুন নিভিয়ে ফেলল। কীভাবে? তুমিই দেখে নিও।
সেই রোবটের সঙ্গে গালিভারের এক ভীষণ লড়াই হল। কিন্তু তাই কি আর ওই বিশাল রোবোটের সঙ্গে পারে গালিভার! শেষমেশ হেরেই গেল গালিভার। বন্দি করা হল ওকে। লিলিপুটদের গোটা রাজ্যটাই দখল করে নিল ব্লুফিশিয়ানরা। বন্দি করা হল রাজা, রানি আর রাজকুমারীকেও। আর গালিভারকে শেষ পর্যন্ত নির্বাসন দেওয়া হল এক ভয়ংকর নির্জন দ্বীপে, যেখানে একবার কেউ গেলে আর ফিরে আসতে পারে না।
কী আশ্চর্য! এর কয়েকদিন পরেই গালিভারকে খুঁজতে খুঁজতে ডরসিও এসে পড়ল লিলিপুটদের দেশে। কিন্তু ততদিনে তো গালিভারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে সেই ভয়ংকর দ্বীপে। এখন তাহলে উপায়? সেই ভয়ংকর দ্বীপ থেকে তো কেউ আর ফিরেও আসতে পারে না। গালিভার কী ফিরে আসতে পারবে? নাকি ডরসিকে ফিরে যেতে হবে ভাঙা মন নিয়ে, আর লিলিপুটদের ব্লুফিশিয়ানদের অধীনেই থাকতে হবে? জানতে হলে, শিগগিরই দেখে নাও চমৎকার এই ছবিটা।