বুর্বকরাই বেশি মাথা ঘামায়

মাহমুদ সাহেব জীবনের সব সঞ্চয় ব্যয় করে একটা দোতলা বাড়ি করেছেন। বহু দেনদরবার করে বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগও নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ আর আসে না। বিদ্যুৎ অফিসে দৌড়াদৌড়িও কম করেননি। কিন্তু কোথায় যেন একটা গিট্টু লেগে আছে।

>> আহসান হাবীববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2014, 09:43 AM
Updated : 2 July 2014, 09:43 AM

বিদ্যুত আসি আসি করেও আসে না। লাইনে নাকি কী সমস্যা আছে, তাই হচ্ছে না। তিনি মোটামোটি হতাশ। এই হতাশার মধ্যে একদিন আশার একটা এনার্জি বাল্ব জ্বলে উঠল যেন... বিদ্যুৎ ছাড়াই।

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। হ্যাঁ... বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের কথা তার মনে পড়ল তার হঠাৎ একদিন।... যিনি আকাশ থেকে প্রথম বিদ্যুৎ এনেছিলেন এক মেঘলা দিনে ঘুড়ি দিয়ে। সেই যুগে তিনি যদি সাধারণ ঘুড়ি দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে পারেন এই আধুনিক যুগে তিনি পারবেন না কেন?

যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি ছুটলেন বাংলাদেশ কাইট ফেডারেশনে। ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনু ভাইয়ের সঙ্গে তার অল্প-বিস্তর পরিচয় আছে। খুবই মাইডিয়ার মানুষ তার কাছ থেকে একটি বিশাল ড্রাগন ঘুড়ি সংগ্রহ করলেন। সঙ্গে সুতা-লাটাই সব জোগাড় হল। তারপর এবার মেঘলা দিনের অপেক্ষার পালা।

চৈত্রমাসে বৃষ্টি আসবে কোত্থেকে!

তবে মাহমুদ সাহেবের ভাগ্য বলে কথা। হঠাৎ এক সকালে আকাশে মেঘ গুড়গুড় করে উঠল। তিনি ঘুড়ি-লাটাই নিয়ে ছুটলেন ছাদে। সঙ্গে তার ক্লাস ফোরে পড়া মেয়ে। বেঞ্জামিন সাহেব অবশ্য তার সঙ্গে নিয়েছিলেন ছেলেকে, মাহমুদ সাহেব নিলেন মেয়েকে। এই যুগে ছেলেমেয়ে সব সমানে সমান।

ঘুড়ির সুতোয় বাধা হল একটা চাবি, যেমনটা বেঞ্জামিন সাহেব বেঁধেছিলেন। আকাশ থেকে বিদ্যুৎ এসে জমা হবে চাবিতে... তারপর... বাকিটা আর মাহমুদ সাহেব চিন্তা করতে পারেন না। তার মাথার ভেতর বিদ্যুৎ যেন স্পার্ক করতে থাকে।

“বাবা এই আকাশের বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের ঘড়ের লাইট জ্বলবে?” মেয়ের প্রশ্ন।

“কেন নয়?”

“কিন্তু এই গবেষণা তো বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বহু আগেই করে গেছেন। নতুন করে করার দরকার কী?”

“আরে কোনো কনসেপ্ট চুরিতে দোষ নেই, পিকাসো বলে গেছেন। আর আইনস্টাইন তাকে বাতাস দিয়েছেন।”

“কী রকম বাতাস?”

“আইনস্টাইন বলেছেন, যে কোনো আবিষ্কার বা গবেষণা চুরি করা যেতে পারে, যদি শেষ পর্যন্ত তুমি চুরির সূত্রটা গোপন রাখতে পার। তার মানে কি পিকাসোকে বাতাস দেওয়া হল না?”

ঢাকার আকাশের বাতাসেই সাঁইসাঁই করে ড্রাগন ঘুড়ি আকাশে উঠে গেল। কালো মেঘের নিচে উড়ে বেড়াচ্ছে এক লাল-হলুদ ড্রাগন ঘুড়ি তার লম্বা লেজ নিয়ে। অসাধারণ দৃশ্য। বাবা মেয়ে দুজনই মুগ্ধ!

“আচ্ছা বাবা চবির সঙ্গে একটা তালা বাধলে হত না?”

তালা কেন?

তাহলে বিদুৎ এলে তালা চাবি দিয়ে আমরা আটকে ফেলতাম। বুদ্ধি খারাপ না। কিন্তু হঠাৎ ছাদে উঠে এলেন মাহমুদ সাহেবের স্ত্রী-- “ঘুড়ির সূতোয় চাবি বাধা কেন?”

“এই চাবি দিয়েই বিদ্যুৎ আসবে... কেন, তুমি জান না, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সেই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট।”

“আমার জানার দরকার নেই। চাবিটা জলদি খুলে দাও। ওই চাবি দিয়ে আমি তোমার ড্রাগন ঘুড়ি ছাড়াই বিদ্যুৎ আনব।”

“মানে?”

“বোকা কোথাকার।” স্ত্রী মোটামুটি খিচিয়ে উঠেন, “চাবিটা বিদ্যুতের মেইন সুইচের বক্সের। মেইন সুইচ বন্ধ করে রেখে চাবি মেরে রেখেছ তুমি? বিদ্যুৎটা আসবে কোত্থেকে শুনি?”

অবশেষে মাহমুদ সাহেবের বাসায় বিদ্যুৎ এল ওই ঘুড়ির চাবি দিয়েই। তবে মেঘলা আকাশের বজ্রপাত থেকে ঘুড়ি দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে হল না।

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বেঁচে থাকলে হয়ত এ যুগের মাহমুদ ফ্রাঙ্কলিনের বোকামোতে একটা অট্টহাসি দিতেন। কিংবা খুশিও হতেন... তার আবিষ্কার নিয়ে শত বছর পরও কোনো বুর্বক মাথা ঘামাচ্ছে! তবে এটাও ঠিক বুর্বকরাই বেশি মাথা ঘামায়-- বুঝে না বুঝেই ... আর মাথা না ঘামালে ‘মাথার ঘাম পায়ে ফেলে’ এই চিরন্তন বাক্যটাও যে অর্থহীন হয়ে যাবে।