অংকের মজা: একশ’ নিয়ে এক শো

শূন্য ছাড়া নয়টি অংককে ধারাবাহিক বসাও। এই যেমন: ১২৩৪৫৬৭৮৯। এবার এদের মধ্যে কেবল যোগ (+) আর বিয়োগ (-) চিহ্ন এমনভাবে বসাও যেন ফলাফল হয় ১০০।

>> জাহাঙ্গীর সুরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2014, 08:49 AM
Updated : 26 June 2014, 08:49 AM

যেমন ধর, ১ + ২ + ৩ - ৪ + ৫ + ৬ + ৭৮ + ৯ = ১০০।

এ রকম ঠিক কত উপায়ে তুমি ১০০ পেতে পার? মিলিয়ে নাও তোমার উত্তর। 

সুযোগ পেলেই ইন্টারনেট ঘাঁটা আমার অভ্যাস। তবে এমন অভ্যাসের সুবাদেই অংক নিয়ে মজার এই হিসেবটা শিখেছি। তারপর থেকেই ভাবছিলাম, শিশু-কিশোর বন্ধুদের কাছে এ নিয়ে গল্প করব, অবশ্যই লেখার মধ্য দিয়ে। বিস্ময়কর, রোমাঞ্চকর কিছু জানলেই লিখতে ইচ্ছে করে-- আমার যত অর্থহীন অভ্যাস, এটা তার একটা।

একদিন পড়ন্ত বিকেলে অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় বিজয় স্মরণী উড়ালসেতু দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আর ভাবছিলাম, নয়টা অংক দিয়ে যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে ১০০ বানানোর খেলাটা। বিজয় স্মরণী পুলিশ বাক্সের ওখানে এসে শরীরটা জুড়ানোর জন্য বসে পড়লাম রাস্তার ধারে। তখনই মনে হল, আচ্ছা সুমনকে তো খেলাটার কথা জানাতে হয়। ও পারে নাকি, জানা যাক।

ইনজামামুল হক সুমন আমার ছোট ভাই। নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্র। বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার মোবাইলটা ওই ব্যবহার করে। পুলিশ বক্সের পাশে বসে বাবার নাম্বারে একটা খুদে বার্তা পাঠালাম, ইংরেজিতে।

কিছুক্ষণ পরই সুমনের ফোন, “দাদা, এসএমএসটা পেলাম। কিন্তু...”

বুঝলাম, জিনিসটা ও বোঝেনি। আমি উপরের উদাহরণটা ওকে লিখে পাঠালাম। এরপর সুমন আবার ফোন দিল, “এবার বুঝেছি। আমি দেখছি পারি নাকি।”

পারলে যে ওকে পুরস্কার দিতে চেয়েছি, সেটা সুমন এড়িয়ে গেল, ও বড়ই লাজুক। কিন্তু মাকে ঠিকই বলে রাখল, কমপক্ষে আরও ১০টা সম্ভাব্য সমাধান নাকি হতে পারে এই ধাঁধাটার। দেখি কয়টা পুরস্কার পাই! আসলে পুরস্কার কে না চাই বল?

মিনিট কয়েকের মধ্যেই সুমনের এসএমএস--

‘১ + ২ + ৩৪ - ৫ + ৬৭ - ৮ + ৯ = ১০০’।

হিসেব করে দেখ, একদম ঠিক।

আমি রিপ্লাই দিলাম, “কারেক্ট! দেখি আরও পার নাকি।”

এই ফাঁকে একইভাবে আফিফার সঙ্গেও খেলাটা আমি এসএমএস-এ খেলতে শুরু করেছি।

আফিফা খাতুন আমাদের বিজ্ঞান সংগঠন আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের একজন বিজ্ঞানকর্মী। পড়ে একাদশ শ্রেণিতে, বিজ্ঞান বিভাগে। সেও ক্ষণিকের মধ্যেই এসএমএস করল--

১ + ২৩ - ৪ + ৫৬ + ৭ + ৮ + ৯ = ১০০।

সত্যিই কে। ভুলচুক হয়নি এটুকু। তুমি মিলিয়ে নিতে পার।

কিছুক্ষণ পর আমার ইনবক্সে সুমনের আরেকটি এসএমএস--

‘১ + ২৩ - ৪ + ৫ + ৬ + ৭৮ - ৯ = ১০০’।

উত্তর দিলাম, ‘দার“ণ। আরো চেষ্টা করো।’

অল্পক্ষণ পরই আফিফার এসএমএস--

১২ + ৩ - ৪ + ৫ + ৬৭ + ৮ + ৯ = ১০০।

‘পাক্কা! পরেরটা কী হবে?’ উৎসাহ দিলাম আফিফাকে।

আমাকে আরেকটা বাড়তি কাজ করতে হচ্ছিল: সুমন যেটা উত্তর পাঠায়, সেটা আমি সঙ্গে সঙ্গে আফিফাকে জানিয়ে দিচ্ছি। আবার আফিফা যে সমাধানটা করে তার খবর সুমনকে জানাচ্ছি। আমি ঠিক জানি না, প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরত্বে দুই ঘরে বসে ওরা দুজন কি পাল্টাপাল্টি দিচ্ছিল কিনা! হতেও পারে, সবাই নাকি প্রথম হতে চাই।

খেলার এই মুহূর্তে ২-২ গোলে জমে উঠেছে। আমি তখন শেওড়াপাড়া পৌঁছে গেছি, পায়ে হেঁটেই। টানটান ম্যাচে বাসে চাপার সময় পেলাম কই!

বাসায় ঢুকার আগে শিশু সাহিত্যিক ইমন চৌধুরী ও কার্টুনিস্ট কাওছার মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদিনই নিয়ম করে রিফাতের দোকানে চা খাই। সময় কাটানোর জন্য এই একটা বদ খাদ্যাভ্যাস আছে আমার। সেদিনও ব্যতিক্রম হয়নি। চায়ে চুমুক দিতেই আরেকটা আরেকবার ইনবক্সে ঢুকতে হল। গোলে সুমনের তৃতীয় শট: ১২৩ - ৪ - ৫ - ৬ - ৭ + ৮ - ৯ = ১০০।

না, অফসাইড তো হয়নি। শতভাগ নিখুঁত গোল!

শোধ করতে সময় নিল না আফিফা। বাসায় ঢুকার আগেই আমার ইনবক্সে ঢুকল তার আরেকটা এসএমএস, ১২ - ৩ - ৪ + ৫ - ৬ + ৭ + ৮৯ = ১০০।

ওই রাতে আর কোনো এসএমএস পাইনি। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখি, চারটা এসএমএস। দুটো সুমনের, দুটো আফিফার। কাকতালীয় এবং রহস্যজনক, কিন্তু সত্যি-- দুজনের দুটো এসএমএস একই! মানে তাদের পাঠানো উত্তর দুটো ছিল একই রকম।

একটা সমাধান ছিল: 

১২৩ + ৪৫ - ৬৭ + ৮ - ৯ = ১০০।

আরেকটা ছিল এ রকম:

১২৩ - ৪৫ - ৬৭ + ৮৯ = ১০০।

দুজনকেই ফোন করে অভিনন্দন জানালাম। সুমনের সঙ্গে কথা বলার সময় শুনতে পেলাম মায়ের কণ্ঠ: “রাতেই একটা উত্তর মিলিয়েছিল ও। তোরা ঘুমিয়ে গেছিস মনে করে এসএমএস দেয়নি।”

সব মিলিয়ে সুমন পাঁচ পাঁচটা উপহারের দাবিদার। কয়েকদিন পর বাড়ি যাওয়ার সময় ওর পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছি।

ও হ্যাঁ, আমাদের খেলাটা কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। ১০০ মেলানোর কমপক্ষে আরও দুটো পথ আছে। একটা হল:

১২ + ৩ + ৪ + ৫ - ৬ - ৭ + ৮৯ = ১০০।

আরেকটা হচ্ছে:

১২৩ + ৪ - ৫ + ৬৭ - ৮৯ = ১০০।

আমি জানি, তুমিও নিশ্চয়ই চেষ্টা করেছ। এই এগারটি উত্তরের সঙ্গে তোমার উত্তর মিলে যায়, তাহলে তো অভিনন্দন।

ভালো কথা, এই এগারটির সঙ্গে তোমার উত্তর না মিললে এবং তোমার উত্তরটা যদি অবশ্যই সঠিক হয়, তাহলে অন্তত আরেকটি উত্তর রয়েছে। বেশ তো, জানিয়ে দাও।