বিশ্বকাপ উত্তেজনায় বিল্লু

গিট্টুর ধারণা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে মনে হয় আর ক্ষুধা লাগে না। তাই তো মা যতই তাকে বুঝাক না কেন, সে মাকে ফাঁকি দিতে দ্বিধা করে না।

>> এমরুল হোসাইনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2014, 10:52 AM
Updated : 12 June 2014, 10:52 AM

মা বারবার বলে, “গিট্টু পড়ালেখা শেষ করে ঘুমানোর আগে এই দুধটুকু খেয়ে নিবে, কেমন? সঙ্গে এই কলা আর আপেলটাও।”

গিট্টু মাথা নাড়ে, “আচ্ছা মা।”

খেতে মন চাইলে গিট্টু এক চুমুক খায়, আবার কখনও-বা পুরোটাই পড়ে থাকে, সকালবেলা মা দেখলে বকা দেবে, তাই দুধটুকু লুকিয়ে রাখে অন্য আরেকটি গ্লাসে। কলা ও আপেলের মধ্যে মাঝেমধ্যে আপেলটা খায়, কলাটা রেখে দেয়।

সকালবেলা মা যখন হাঁটতে বের হয় তখন কায়দা করে বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিল্লুকে তা খেতে দেয়।

বিল্লু তার বন্ধু, দুজনের মাঝে খুব ভাব। বাবা-মাও বেশ আদর করে বিল্লুকে। কিন্তু গিট্টুর আদরটা যেন একটু বেশি বেশিই। তাই তো রাতে না খেয়ে বিল্লুর জন্য দুধ আর কলা রেখে দেওয়া। প্রথম দিকে বিল্লু কলা খেতে চাইত না, গিট্টুর পিড়াপিড়িতে একটু একটু করে অভ্যস্ত হয় উঠেছে।

কিন্তু দুধ বিল্লুর খুবই প্রিয় খাবার। দুধ খেয়ে যখন বিল্লু ঢেকুর তোলে তখন গিট্টু তা দেখে খুব মজা পায়। আদর করে কোলে তুলে নেয়।

বিল্লু মাঝেমধ্যে আদর করে গিট্টুর গাল চেটে দেয়। মা যদি কখনও তা দেখে ফেলে তখন আর রক্ষে নেই। বিল্লু এক দৌড়ে গিয়ে দাদুর ঘরে উঠে পড়ে, আর গিট্টু মাথা নিচু করে পড়ার ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।

একটু পর মা নাস্তা তৈরি করে গিট্টুকে ডাকে, বিল্লুকেও দেয় সকালের নাস্তা। বিল্লু খেয়েদেয়ে বসে থাকে পাশের বাড়ির বাবুটির মতো। তাই দেখে বাবা হাসে। মাঝেমধ্যে রসিকতা করে বলে, “কী বিল্লুবাবু! এক কাপ চা খাবে নাকি?”

বিল্লু চুপচাপ বসে থাকে। বাবার কথার জবাব দেয় না।

গিট্টু হেসে কুটিকুটি হয়ে বলে, “না বাবা ‍বিল্লু মনে হয় চা খাবে না।”

মা তখন ব্যঙ্গ করে বলে, “বাবু চা খাবে না, কফি খাবে মনে হয়!”

মাঝেমধ্যে মা আদর করে দুধ কফিও খেতে দেয়।

বিল্লু দু-এক চুমুক খেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে গিট্টু যখন বিকেলে খেলাধুলা করতে যায় তখন প্রায়ই বিল্লুকেও নিয়ে যায়। বিল্লু বসে বসে গিট্টুর চার-ছক্কা দেখে। কখনও-বা দুরন্ত গিট্টুর পায়ে বল দেখে সেও মাঠে ছুটে যায় উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে।

রেফারি লাল কার্ড দেখিয়ে বিল্লুকে মাঠের বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু বেশিকিছু বলতে পারে না। কারণ, গিট্টু টিমের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফরোয়ার্ড। টিমের ভরসা বলতে ৩ জনই গিট্টু, রনি আর জনি।

মাঝেমধ্যে অবশ্য ক্লাবের দাদু গিট্টুকে গাল ফুলিয়ে বলে, “গিট্টু, বিল্লুকে কেন মাঠে আনতে হবে? কাউকে বললেই তো পার, ভিডিও করে রাখতে। রাতে বাসায় গিয়ে বিল্লুকে দেখাবে।”

গিট্টু হাসে! “দাদু, ও তো ভিডিও দেখে মজা পাবে না। আচ্ছা দাদু, তুমিই বলো, আমরা যদি বিশ্বকাপের রেকর্ড করা খেলা দেখি তাহলে কি মজা পাই?”

দাদু গিট্টুর যুক্তি মেনে নেয়। কারণ লাইভ খেলা আর রেকর্ড করা খেলার মধ্যে রাতদিন তফাৎ। তা তিনি ভালো করেই জানেন।

“ঠিক আছে নিয়ে এসো; তবে একটা খাঁচার মধ্যে বন্দি করে নিয়ে এসো, যাতে গোল করার উত্তেজনায় ও মাঠে ছুটে না যায়, কেমন?”

গিট্টু আর কথা বাড়ায় না। বিল্লুকে নিয়ে চলে যায় বাড়িতে।

বিশ্বকাপ উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে। বিল্লুকে নিয়ে দল ভারি করেছে গিট্টু, তার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। বাবার ব্রাজিল, মায়ের স্পেন আর দাদুর এশিয়ার যে কোনো দেশ। যখন যে দল কোয়ালিফাই করে। এবার যেমন দক্ষিণ কোরিয়া।

রাতে বিশ্বকাপের খেলা দেখতে বসে গিয়েছে সবাই। বিল্লুকে কোলে নিয়ে গিট্টুও দেখে বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ।

গিট্টু খেলা দেখতে দেখেতে নিজের উত্তেজনাকে ধরে রাখতে পারে না। পারলে নিজেই লাফ দিয়ে চলে যায় খেলতে।

রেফারির বাজে সিদ্ধান্ত দেখলে বাবার রাগ আর ধরে না। এমনিতেই ব্রাজিল দলে এবার পুরনো কোনো তারকা খেলোয়াড় নেই, তাই বাবা খুব রেগে আছে কোচের উপর। তার উপর আবার রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত!

খেলা শুরু হয়ে গেছে। বাবা, মা, দাদু, গিট্টু আর বিল্লু বসে খেলা দেখছে। কেউ বল নিয়ে ডি বক্সের মধ্যে পৌঁছালেই বিল্লু লাফ দিয়ে টিভির কাছে চলে যায় বল ধরতে, কিন্তু লাভ হয় না, ফিরে এসে আবার গিট্টুর পাশে গিয়ে বসে।

খেলা চলতে চলতে হঠাৎ এক বিড়ালকে দেখা যায় দেয়াল বরাবর দৌড় দিতে। সঙ্গে সঙ্গেই বিল্লু তৎপর হয়ে ওঠে। এক দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলতে চায়। নাহ হল না! দুষ্টু বিড়ালটা আলমারির চিপায় ঢুকে পড়েছে। বিল্লু আবার এসে গিট্টুর পাশে বসে।

খেলা চলছে তো চলছে, বল নিয়ে দুদলেরই গলদঘর্ম অবস্থা। কিন্তু কোনো গোল হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়েছে, ইনজুরি টাইমের খেলা চলছে। প্রতিপক্ষ ব্রাজিল আর স্পেন। সবার মাঝেই উত্তেজনা বিরাজ করছে, বিশেষ করে বাবা আর মায়ের মাঝে। স্পেনের ডি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বার্নার্ড, নেইমার আর ফ্রেড, স্পেন ডিফেন্সে। বলে শট করল নেইমার; কিন্তু নাহ! এবারও হল না! ধরে ফেলল গোলকিপার।

বাবার মুখ ফ্যাকাশে, ইস! গোলকিপার বল ধরেই জোরে এক কিক করল। আক্রমণে এবার স্পেন, ডি বক্সের কাছাকাছি চলে এসেছে। ডি বক্সের বিশ ফিট দূর থেকে দিয়াগো কস্তার দুর্দান্ত এক কিক!

অমনি বাবা বলে উঠল, ওহ নো!

আর মায়ের উল্লসিত চিৎকার, গোল! গোল! গোল! সেই সঙ্গে বিল্লুর দৌড়!