বলছিলাম বেড়ানোর কথা। তোমরা যদি কখনও চীন দেশে বেড়াতে যাও তাহলে বেইজিং চিড়িয়াখানায় গিয়ে পান্ডা দেখতে ভুলবে না কিন্তু। ঢাকা থেকে বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট নেই। ঢাকা থেকে যেতে হয় চীনের কুনমিং শহরে। সেখান থেকে ট্রেনে বা প্লেনে বেইজিং।
তোমরা নিশ্চয়ই জান, চীনের রাজধানীর নাম বেইজিং। পৃথিবীর বিখ্যাত ও সুন্দর চিড়িয়াখানার মধ্যে বেইজিং জু অন্যতম। শহরের মধ্যেই বেইজিং জু। মূলত চীনের মিং সম্রাটদের আমলেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ তোমাদের শোনাব এই চিড়িয়াখানায় বেড়ানোর গল্প।
চিড়িয়াখানায় ঢুকে চোখ জুড়িয়ে গেল ভেতরের ল্যান্ডস্কেপে। দিনটা রোদেলা। অনেক গাছের পাতা ঝরে গেলেও কিছু গাছে পাতা রয়েছে।
চিড়িয়াখানায় প্রথম গেলাম পান্ডার আস্তানায়। গুন্ডাপান্ডা কথাটি প্রচলিত থাকলেও চীনের পান্ডারা মোটেই গুন্ডা নয়। বরং উল্টো। পান্ডা অত্যন্ত আদুরে ও নিরীহ গোছের প্রাণী। অবশ্য তেমন কোণঠাসা হলে পান্ডাও আক্রমণ করে বসতে পারে তবে তেমনটি সচরাচর ঘটে না।
পান্ডার জন্য বরাদ্দ বিশাল একটি এলাকা। চীনের জাতীয় পশু। একে নিয়ে চীনাদের আহ্লাদের সীমা নেই। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী বলে অবশ্য সারাবিশ্বে এদের কদর। চীন সরকার এদের সংরক্ষণে খুব উদ্যোগী।
পৃথিবীর খুব বেশি চিড়িয়াখানায় পান্ডা নেই। চীন সরকার পান্ডা বিক্রি করে না। অন্য চিড়িয়াখানাকে ভাড়া দিতে পারে। যেসব চিড়িয়াখানা চীন সরকারের কাছ থেকে পান্ডা ভাড়া নেয়, তারা প্রতিবছর পান্ডা বাবদ বেশ মোটা টাকা ভাড়া দেয়। ফলে পান্ডাকে রোজগারি প্রাণীও বলা যায়।
পান্ডা ভীষণ অলস। অমিশুকও। এরা একা থাকতে ভালোবাসে। ভেতরে দেখলাম কয়েকটি পান্ডা গাছের ডালে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। দুয়েকটি বাচ্চা পান্ডা খেলা করছে।
আমার খুব মজা লাগছিল পান্ডা ছানাদের দেখতে। দেখলেই সফট টয়েজ বলে মনে হয়। চীনে আদুরে পান্ডা বলে একটা কথা খুব প্রচলিত। বাচ্চাদের আদুরে পান্ডা বলে ডাকে বাবামায়েরা। চীনা ভাষায় পান্ডাকে বলে শিয়ান মাও। বেইজিং অলিম্পিকের মাসকটও ছিল পান্ডা। তোমাদেরও পান্ডা ছানা দেখে খুব ভালো লাগবে একথা জানিয়ে দিচ্ছি।
পান্ডার প্যাভিলিয়নের ভেতর বিক্রি হচ্ছে বেইজিং অলিম্পিকের ছবিওয়ালা পান্ডার নানা রকম স্যুভেনির। চাবির রিং, কলম, কলমদানি, ফুলদানি থেকে শুরু করে হরেক রকম জিনিস। পান্ডার সফট টয়েজও প্রচুর। কম দাম থেকে শুরু করে বেশি দামের জিনিস রয়েছে। পকেট বুঝে যার যা পছন্দের জিনিস কিনছে। আমিও ৩০ ইউয়ান দিয়ে একটা পান্ডা পুতুল কিনলাম। তোমরাও এখান থেকে পান্ডা পুতুল কিনতে পার।
বিশ্বের খুব কম চিড়িয়াখানাতেই গরিলা রয়েছে। বেইজিং জু তাদের অন্যতম। এখানে বেশ কয়েকটি গরিলা আছে। আরও আছে সিংহ, জাগুয়ার, ক্লাউডেড লেপার্ড, এশীয় ও আফ্রিকান হাতি, গন্ডার, হিপোপটোমাস, কালো ভালুক, মেরুভালুক, টাপির, সামুদ্রিক কচ্ছপ, পেঙ্গুইন, ক্যাংগারু, শিম্পানজি, মুন্টজাক, অ্যাডাক্স, জেবরা, ভোঁদর, লেমুর, ফ্লেমিংগো ইত্যাদি।
বিশ্বের পনের প্রজাতির সারসের মধ্যে তেরটি রয়েছে বেইজিং চিড়িয়াখানায়। আরও রয়েছে অসংখ্য জাতের পাখি, সাপ, ইত্যাদি। বেইজিং চিড়িয়াখানায় একটা বিশালাকার অ্যাকুরিয়াম রয়েছে। যেটি বিরাট এলাকা নিয়ে অবস্থিত। সেখানে রয়েছে ডলফিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী।
বললাম, “মামা, বিদেশে আছ, দেশের জন্য মন কাঁদে না?”
বাঘমামা উত্তর দিলেন, “হালুম, কাঁদো ভাগ্নি, কিন্তু তোমার মতোই পেটের দায়ে বিদেশে চাকরি করছি। তুমি হয়ত দেশে ফিরতে পারবে। কিন্তু আমার তো আর জীবনেও সুন্দরবনে ফেরা হবে না।”
বাঘমামার জন্য মনের কোণে ব্যথা নিয়ে অন্য এলাকার দিকে চললাম। লেকের পানি জমে কাচের মতো হয়ে আছে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, সেই বরফ জমা লেকের ভেতরে লাল-নীল মাছ দেখা যায়। তার মানে নিচের পানি এখনও জমেনি। বড় সুন্দর সেই দৃশ্য।
গরিলাদের রাখা হয়েছে কাচের বিশাল ঘরের ভেতর। ভেতরে গাছ, বাড়ি সবই রয়েছে। কাচের ঘরের ভেতর তাদের উপযোগী পরিবেশ।
তারপর গেলাম পেঙ্গুইন দেখতে। পেঙ্গুইনের ঘরও বিশাল। কাচের অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে রয়েছে মেরু এলাকার পরিবেশ। পানিতে ভাসছে বরফের চাঁই। তার মধ্যে সাঁতরে বেড়াচ্ছে ঝাঁকঝাঁক পেঙ্গুইন। দারুণ লাগল।
চিড়িয়াখানা এত বিশাল যে একদিনে তো দূরের কথা কয়েকদিনেও পুরো এলাকা দেখে শেষ করা সম্ভব না।
চীনে আজকাল অনেকেই বেড়াতে যাচ্ছেন। তোমরাও যেতে পার। আর গেলে বেইজিং চিড়িয়াখানায় পান্ডা, গরিলা এদের দেখে আসবে নিশ্চয়ই।