ঠিক তেমনই পৃথিবীর আরেক বৈচিত্র্য হচ্ছে এর ভূমির গঠনে। কোথাও খানাখন্দ একদম নিচু হয়ে গিয়েছে তো অন্য কোথাও ইয়া উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমির এই উঁচু অংশের নাম পর্বত।
পর্বত তো পর্বতই, তার আবার রকম-সকম কী! উঁহু, কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এমন কিছু পর্বতও আছে, যেগুলোর দিকে একবার তাকালে আর ইচ্ছেই হয় না চোখ সরাতে। এমনি কিছু পাহাড়ের গল্পই থাকছে আজ।
দক্ষিণ ভারতে অনেকটা জুড়ে হাজার বছর ধরে রাজত্ব করে আসছে নীলগিরি পর্বতমালা। এর অন্তত ২৪টি চূড়া ২,০০০ মিটার উঁচু। পর্বতটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১,১১৭ খ্রিষ্টাব্দে, এক রাজার দাপ্তরিক নথিপত্রে। ‘নীলগিরি’ নামে অবশ্য নয়, ‘নীলা’ নামে।
পর্বতটির প্রধান আদিবাসীদের মধ্যে আছে— টোডা, কুরুম্বাস, কোটা, ইরুলা, বাগাদা। পরে এক সময় এটা ইংরেজদের দখলে চলে যায়। ১৬০৩ সালে ফাদার ইনিনিসিও প্রথম এই পর্বত এলাকায় আসেন, চড়ে বসেন পর্বতচূড়োয়।। দেখা হয় টোডাদের সাথে।
নীলগিরির চূড়াগুলোর মধ্যে আঙ্গিন্দা, চিন্না দোদ্দবেট্টা, চোনোর বেট্টা অন্যতম। মোটমাট প্রায় ৩৯টি চূড়ো রয়েছে এর। আছে অনেক ঝর্ণাও। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত উত্তর কোলাকাম্বিয়া থেকে ঝরে পড়া অভঙ্গুর কোলাকাম্বিয়া ঝর্ণা। পর্বতটিতে প্রায় ২,৭০০ প্রজাতির ফুলগাছ রয়েছে। রয়েছে হরেক রকমের পশু-পাখি। সম্প্রতি ইউনেস্কোর শুভদৃষ্টিও পড়েছে নীলগিরি পর্বতের উপর।
সুপিরিয়র হৃদের পাশে বেড়ে ওঠা কতগুলো ছোট-ছোট পর্বত মিলে গড়ে উঠেছে পোর্চুপাইন পর্বতমালা। ১৯ শতকে কপার বা তামার খনি ছিল এখানে। তবে বেশিদিন খনিতে খনন চালিয়ে যেতে পারা যায়নি। তবে পোর্চুপাইনের আকর্ষণ কিন্তু তাতে ফুরিয়ে যায়নি। এখন এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মেঘের মতো সুন্দর হৃদটি।
২,৪৩০ মিটার এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই পর্বতমালার নামের অর্থ ‘বুড়ো মানুষ’। পেরুর বিখ্যাত এই স্থানটিতেই সম্ভবত ছিল ইনকা সভ্যতার রাজার প্রাসাদ। এই ইনকা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ১৫ শতাব্দীতে। আর সে কারণেই এই পর্বতমালার আরেক নাম- ‘ইনকা সভ্যতার হারানো নগরী’। সম্ভবত ১,৪৫০ সালে ইনকারা এই প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল।
এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে মাচু-পিচুকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের আওতায় আনা হয়। তবে অদ্ভূত সুন্দর এই স্থানটি এখন কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীই নয়, অতিরিক্ত পর্যবেক্ষকও একে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
মোরাইন হৃদ ঘিরে থাকা অপূর্ব সুন্দর দশটি পাহাড়ের চূড়ো মিলে গড়ে উঠেছে কানাডার এই ‘ভ্যালি অফ টেন পিকস’। লম্বা এই নামকরণ করেন এর আবিষ্কারক স্যামুয়েল লোয়েন। শুধু তাই না, তিনি এই দশটি চূড়ার জন্য আলাদা আলাদা নামও ঠিক করেছিলেন। পরে অবশ্য এর তিনটি পাল্টানো হয়। সে তিনটি ‘পিক’কে দেওয়া হয় নতুন নাম। যার একটির নামকরণ করা হয় আবিষ্কারক স্যামুয়েল লোয়েনের নামেই।
ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের সীমানা ছুঁয়ে পাক্কা ১,২০০ কিলোমিটার জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এই আল্পস পর্বতমালা। হাজার-কোটি বছর আগে জন্ম নেওয়া পর্বতমালার বেশিরভাগ চূড়াই ৪,০০০ মিটারেরও বেশি উঁচু। শুধু তাই না, ইউরোপের সংস্কৃতি আর আবহাওয়ার উপরও যথেষ্টই প্রভাব আছে এই পাহাড়ের।