প্রমিতির কামড়ানো রোগ

কদিন ধরে কামড় শিখেছে প্রমিতি। কথায় কথায় সে এখন কামড়ায়। এই নিয়ে কেউ কিছু বলতেও পারে না।

আশিক মুস্তাফাআশিক মুস্তাফা
Published : 17 April 2014, 10:50 AM
Updated : 17 April 2014, 10:50 AM

যে-ই কিছু বলতে যাবে তার হাতে-গায়ে যখন যেখানে পারবে সেখানেই কচ করে কামড় বসিয়ে দেবে। তার বড়বোন আনুশকা বলে, ‘অ্যাই প্রম, এদিকে আয়, তোকে রেডি করে দিই। আব্বু আসলে আমরা বেইলি রোড যাব। ফুচকা খাব। আইসক্রিম খা...।’

আনুশকার কথা শেষ না হতেই প্রমিতি এসে তার বাম হাতের পেটে কচ করে কামড় বসিয়ে দেয়। আনুশকা ‘ও-মা-গো’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। রান্নাঘর থেকে মা দৌড়ে আসেন। বলেন, ‘কী রে সোনা, কী হয়েছে?’

আনুশকা কিছু বলার আগেই প্রমিতি বলে, ‘কিচ্ছু হয়নি, আমি কামড় দিয়েছি।’

মা ‘কই, দেখি... দেখি’ বলে যেই বাম হাতটা টেনে বের করলেন। অমনি দেখলেন ইঁদুরের মতো এই টুকুন চারটি দাঁত বসে আছে হাতে। মা হাতটা ডলে দিলেন আর ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে হাতে ঘষে দিলেন। বরফ না দিলেও হত। তবু দিলেন। কারণ, আনুশকা ব্যথা পেলে বরফ লাগাতে পছন্দ করে তাই তাকে খুশি করতেই হাতে বরফ ঘষে দিলেন।

একটু পর হাত ঠান্ডা হয়ে এল। ব্যথাও চলে গেল। মা তার  কাজে মন দিলেন। এদিকে আনুশকা রেডি হচ্ছে তার মতো করে। বাবা আসলেই তারা বেরুবে। প্রমিতি এসে চুপচাপ আনুশকার পাশে বসল। আনুশকা তাকিয়েও না তাকানোর ভান করে কাপড় পরতে থাকে। প্রমিতি বলে, ‘এই জামাটায় তোমাকে এলসার মতো লাগছে।’

ও শোনো, তোমরা যারা এলসাকে চেনো না, তাদের বলি, এলসা আনুশকার মতোই মমতাময়ী একটা মেয়ে। তার ছোটবোনের নাম অ্যানা। তোমরা যারা অ্যানিমেশন মুভি ফ্রোজেন দেখেছ, তারা তো চেনই ওদের। আর যারা মুভিটি দেখোনি তাদের বলি, পাহাড়ের মাঝে একটা সমুদ্র ঢাকা দ্বীপদেশ, সেই সুন্দর দেশটার নাম অ্যারানডেল। সেই দেশেরই ছোট্ট দুই রাজকন্যাÑ এলসা আর অ্যানা। অ্যানা খুবই চঞ্চল, একেবারে প্রমিতির মতো। আর এলসা থাকে চুপচাপ। ঠিক আনুশকার মতো। সে বড্ড মায়া করে তার ছোট বোনটাকে।

তো প্রমিতির মুখে এলসার কথাটা শোনার পর আনুশকার আবার মায়া জেগে উঠল ছোটবোনের প্রতি। একটু আগে কামড়ানোর ব্যথা পুরোই ভুলে গেল। তাকে কাছে টেনে কপালে আদর দিল। তার জন্য জামা নিল। গায়ে যেই পরাতে যাবে অমনি হাতে আবার কামড় বসিয়ে দিল।

আনুশকা এবারও চেচিয়ে উঠল। তবে আগের মতো ব্যথা পায়নি। মা দৌড়ে এলেন। বরফ ঘষলেন হাতে। তখন বাবাও এলেন ঘরে। কিছু বলতে হয়নি তাকে। তিনি অবস্থা দেখেই বিষয়টা বুঝে নিলেন। কাউকে কিছু না বলে প্রমিতিকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে গেলেন তিনি। গিয়ে বসলেন গাড়িতে।

একটু পর আনুশকা আর মাও নামলেন। গাড়ি বেইলি রোড পার হতেই প্রমিতি তার বাবার কাঁধে কামড় দিয়ে দিল। বাবা সহ্য করলেন। কিছু বলেননি। তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হল। সব খুলে বলা হল। ডাক্তার আঙ্কেল বললেন, ‘মা, আমাকে একটা কামড় দাও তো।’ ওমা, সে সত্যি সত্যিই ডাক্তার আঙ্কেলের ডান হাতের তর্জনীতে কামড় বসিয়ে দিল প্রম। আঙ্কেল বড় হওয়ায় চিৎকার করেননি ঠিকই তবে ব্যথা পেয়েছেন; এটি তারা বুঝতে পেরেছেন তার কপালের বটা চামড়ার দিকে তাকিয়ে। কামড় দিয়ে প্রম চুপ করে বসে থাকে।

ডাক্তার আঙ্কেল টেবিল থেকে প্রমকে একটা চুইংগাম দিয়ে বললেন, ‘মা এটা কামড়ে কামড়ে খাও।’

প্রম চুইংগামটা প্যাকেট থেকে বের করে ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের মতো কোঁৎ করে গিলে ফেলে।

কামড়ানো রোগ দেখা দেখা দেওয়ার পর এই প্রথম সে কোনো কিছু গিলে খেল। ডাক্তার কোনো ওষুধ দেননি। এত্তগুলো চুইংগাম দিয়ে বললেন। ‘সবাই হাতে, পকেটে চুইংগাম রাখবেন। সে কামড়াতে আসলেই একটা চুইংগাম হাতে ধরিয়ে দেবেন। এভাবে কিছুদিন গিলে খাওয়া শিখলে কামড়ানো রোগ সেরে যাবে!’

তোমরা যদি প্রমের মমতাময়ী বড় বোন আনুশকার খোঁজ পাও তো তার কাছে জেনে নিও যে, আসলেই কামড়ানো রোগ থেকে প্রম সেরে উঠল কি না!