জানালা বন্ধ করা হল। অবশেষে যাত্রীদের অনেকেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। কাকলি থেকে মহাখালি ফ্লাইওভারের উপর গাড়ি উঠতেই বাতাসের বেগ আরও প্রবলভাবে বোঝা গেল। আকাশের পশ্চিমপাশটা যেন অভিমানী নারীর মুখভার করে রাখার দৃশ্য। আর ঈশান কোণে চোখ রাখা দায়। সেখানে এমন গম্ভীর রাগের মাতম, বুক কেঁপে ওঠে।
হঠাৎই চলে গেলাম ফেলে আসা শৈশবে। বৈশাখের এমন ঝড়োদিনে কত প্রহর কেটেছে ট্যাঙ্গন নদীর খাড়িতে। কত হয়েছে বেপরোয়া ‘ঘুড্ডিযুদ্ধ’। কখনও লাটাইয়ের সুতা ছাড়তে ছাড়তে গুড্ডি মানে ঘুড়ি ঈশানের কালো শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছে। তারপর হয়ত হঠাৎ মনে পড়েছে, “এরে মরেছি, সময় যে অনেক হল! মা বুঝি চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছেন। বাসায় ফেরার পর ঝাঁঝালো বকুনি তো থাকছেই, সঙ্গে দু-চারটা চড়-চাপরও থাকছে নিশ্চিত!”
এই শোক নদীর আবার আছে নানা ইতিহাস। কেউ কেউ বলে এই নদীর পাশেই এক বৃদ্ধার বসতি ছিল। সে ছিল ভিন্ন উপজাতির। আর তাই দুষ্টু প্রতিবেশিরা তাকে প্রয়োজন মতো পানি নিতে দিত না। তাকে সব সময় অনেক কমকম পানি দিত। আর একদিন এই পানির অভাবেই তার মৃত্যু হয়। তখন তার স্মৃতি স্বরূপ সৃষ্টি হয় এই নদীর। ‘শোক’ নামের এই নদীর উৎপত্তি হল কীভাবে? সে আরেক ইতিহাস।
শৈশব ফেলে এসেছি বহু আগে, বহু দূর। কিন্তু ঘুড্ডিযুদ্ধের সেই উন্মাদনা-- সেই আনন্দ এখনও মনকে মাঝে মাঝে নিয়ে যায় সেই ট্যাঙ্গন নদীর খাড়িতে, ফসল কেটে ফেলা ন্যাড়া ক্ষেতে। ভাবতে ভাবতে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়। গন্তব্যে পৌঁছে যাই। তারপর কাজ। কাজ শেষে বাড়ি।
ঘুড্ডিযুদ্ধের দিন শেষ। তবে সে সব দিনের স্মৃতিময় সোনালি মুহূর্তগুলো সব জীবন্ত মনের মাঝে। কখনও এলোপাতারি কখনও সাজানো-গোছানো যান্ত্রিক জীবনের সঙ্গী হয়ে আছে সব সময়। ঠিক যেমন থাকত আমার ‘লাটাই, ঘুড্ডি আর ঘুড্ডিযুদ্ধ।’
আলোকচিত্র : বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সৌজনে্যে