শেয়াল-ভূত

এক ছিল জেলে। সে খুবই ভাগ্যবান। প্রতিদিন অনেক অনেক মাছ উঠত তার জালে। জেলেবউ ছিল বুদ্ধিমতী, সে সবসময় বেশি বেশি করে মাছ বাড়িতে জমা রেখে দিত, যাতে যে কোনো সময় বিক্রির জন্য বাজারে পাঠানো যায়।

দেবাশীষ দেব>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2014, 10:30 AM
Updated : 7 April 2014, 10:30 AM

কিন্তু কিছুদিন থেকে জেলেবউ খেয়াল করল, প্রতিরাতে একটা বড় শেয়াল এসে সবচেয়ে ভালো মাছটি খেয়ে যায়। তাই সে ঠিক করল, পাহারা দেবে। সঙ্গে থাকবে মোটা একটা লাঠি।

একদিন জেলেবউ আর আরেকজন মহিলা সুতো কাটছিল। হঠাৎ পুরো ঘর একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজাও খুলে গেল ঝপাৎ করে। যেন তুফানের ধাক্কা লেগেছে।

ভেতরে ঢুকল একটি বড় আকারের লাল শেয়াল। ঘরে ঢুকেই শেয়ালটি সোজা চুলার দিকে হেঁটে গেল। এরপরই তাদের দিকে ফিরে খেঁকিয়ে উঠল। তখন সেখানে মাছ বাছাইয়ের কাজ করছিল একটি ছোট্ট মেয়ে।

ছোট্ট মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, “এই শেয়াল, এই ফাজলামির অর্থ কী? কেন এমন করছ?”

“কীভাবে আরেকজনকে সম্মান করতে হয় তা তোমাকে শেখাতে এসেছি।”

বলেই শেয়ালটি একেবারে মেয়েটির ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল। আঁচড়ে মেয়েটির হাত রক্তাক্ত করে দিল।

“এরপর, কোনো ভদ্রলোক দেখা করতে এলে, তার সঙ্গে সম্মান দেখিয়ে কথা বলার কথা আশা করি তোমার মনে থাকবে।”

কথাটা বলেই শেয়াল দরজা বন্ধ করে বের হয়ে গেল।

ভয়ে ও ব্যথায় মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। ছুটে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা তো বন্ধ।

পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, এক লোক তার চিৎকার শুনে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করল। কিন্তু দুয়ার আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছে শেয়ালটি। ভেতরে যেতেই দেবে না। লোকটির হাতে ছিল একটি লাঠি। তাই দিয়ে শেয়ালকে মেরে বসল এক ঘাঁ। কষে একটা ঘুষিও মারল।

কিসের কী! বিশাল ওই শেয়ালের তাতে কিছুই হল না। উল্টো সে তখন লোকটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাতে-মুখে আঁচড়ে-কামড়ে একাকার করে দিল। আতঙ্কে লোকটি পড়িমরি করে দিল দৌড়।

আর কে পেছন ফিরে তাকায়! এবার শেয়ালটি টেবিলে রাখা মাছগুলোর দিকে এগিয়ে গেল।

“এখন আমার রাতের খাওয়ার সময় হয়েছে। আশা করি, আজকের মাছটাও ভালো হবে। আমাকে বিরক্ত করবে না কেউ। কোনো হইচই করবে না।”

বলেই লাফিয়ে টেবিলে উঠে, সবচেয়ে ভালো মাছটি খাওয়া শুরু করল। আর থেকে থেকে জেলেবউয়ের দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠছে।

জেলেবউ রাগে ও ক্ষোভে চিৎকার করে উঠল, “লোভী পশু! তুমি এই মুহূর্তে এখান থেকে দূর হও।”

সঙ্গে সঙ্গে হাতের সাঁড়াশি দিকে জোরে এক বাড়ি মারল শেয়ালের গায়ে।

কিন্তু সে আঘাতে শেয়ালের কিছুই হল না। সে মন দিয়ে মাছ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে যাচ্ছে। মহিলাকে কিছুই বলল না। এবার জেলেবউয়ের সঙ্গে যোগ দিল সঙ্গে থাকা মহিলাটিও।

এবার চিৎকার দিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করল শেয়ালটি। খামচে-কামড়ে-আঁচড়ে দুজনের হাত ক্ষত-বিক্ষত করে দিল। আতঙ্কে ওরা দুজনই ছুটে বের হয়ে গেল ঘর থেকে।

কিছুক্ষণ পর ফিরে এল জেলেবউ। হাতে এক বোতল পানি। ওই পানি ছিল পুরোহিতের মন্ত্রপুত। সে উঁকি দিয়ে দেখে, শেয়াল তখনও মাছ খাওয়ায় ব্যস্ত।

জেলেবউ এবার চুপিচুপি টেবিলের কাছে গেল। তারপর সে মন্ত্রপুত পানি ছিটিয়ে দিল শেয়ালের গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুরো উঠোন কালো ধোঁয়ায় ভরে গেল। কেবল কালো ধোঁয়া! তার মাঝে শুধু শেয়ালের জ্বলন্ত চোখ দুটো শুধু দেখা যাচ্ছে।

আস্তে আস্তে ধোঁয়া মিলিয়ে গেল। উঠোন খালি। শেয়ালটির কোনো অস্তিত্বও আর দেখা গেল না।

সেই শেষ। এরপর থেকে জেলেবউয়ের মাছ আর কেউ খায় না। সেই লোভী শেয়ালটিকেও আর দেখা যায়নি এ তল্লাটে।

আয়ারল্যান্ডের রূপকথা