বিদ্যাসাগরের চটি

ডাক্তার বলে দিয়েছেন বাবা আর বাঁচবেন না। বড় জোর এক মাস। এখন তার পছন্দসই খাবার খাওয়াতে নিষেধ নেই। তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে যেন আমরা অবহেলা না করি।

>> কাজী কেয়াবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2014, 12:38 PM
Updated : 19 March 2014, 12:38 PM

বাবা ফুল ভালবাসেন। তার শোবার ঘরটা ফুল দিয়ে সাজানো হল। রঙিন টব কিনে আনা হল। টবে নানা রঙের ফুল-ফোটা গাছ।

বাবা মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসেন। কিন্তু নিজের তেমন বিশেষ পছন্দের খাবার নেই। যা জোটে তা-ই-সই। পেট ভরলেই হয়।

তারপরও আমরা বুঝতাম, বাবারও কিছু পছন্দের খাবার আছে। কথাচ্ছলে বাবা প্রায়ই দাদিমার রান্নার প্রশংসা করতেন, “আহা, কী যে মজার রান্না করতেন মা! নারকেলের দুধ দিয়ে হাঁসের ডিম। গলদা চিংড়ির কোর্মা-- কী অপূর্ব স্বাদ! সে স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে রে!”

ডাক্তার বলেছেন তার পছন্দের খাবার খাওয়াতে। তাই আমাদের অদেখা দাদিমার রান্নার মেন্যুটা বিবেচনা করে বাবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করি।

বাবা খেতে পারে না। দুই চামচ ভাতও গলা দিয়ে যেতে চায় না।

“আর না...!”

হাতের ইশারায় আর দিতে নিষেধ করেন। পানি খাওয়াই নল দিয়ে। মনে হয় না বাবা আর মাসখানেকও বাঁচবেন। তবু তার মুখের মৃদু হাসি শীত সকালের মিষ্টি রোদকণার মতো আমাদের মন রাঙিয়ে তোলে।

“বাবা পাখির গান শুনবে?”

বাবা হাসেন, “পাখি কই? সব তো হারিয়ে গেছে।”

“না, বাবা-- এখনও পাখি আছে। আমাদের খড়ের গাদায় অনেক চড়–ই জুটেছে। খিড়কি পুকুরের গাছতলায় কালো দুটো তিলেঘুঘু এসে বসেছিল। জানো বাবা, তোমার প্রিয় নীলকণ্ঠ দেখেছিলাম পশ্চিমের কাঠ বাদাম গাছে।”

“তাই?”

বাবার চোখ জোড়া খুশিতে নেচে ওঠে। বাবার খুশি-খুশি মনটাকে আরও উসকে দিতে ঘরের কোণায় রাখা গতকাল সন্ধ্যায় কিনে আনা মিউজিক্যাল বার্ডটার বোতাম টিপে দিলাম গোপনে।

“কিচ কিচ কিচ কিচ...” ডাকতে শুরু করল নকল চড়–ই দুটো।

বাবা কপাল কুঁচকে কান পেতে শুনতে থাকেন। তারপর হাসেন। আমার দিকে তাকান। আবার মৃদু হেসে মাথা নেড়ে আমাকে কাছে ডাকেন। বাবার কাছে এসে বসি আমি।

বাবা আমার গায়ে হাত বুলিয়ে হেসে বলেন, “তোরা আমাকে খুশি করতে চাস, তাই নারে?”