চার-ছক্কার বিশ্বকাপ

১৬ মার্চ শুরু হচ্ছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারের খেলাগুলো হচ্ছে বাংলাদেশে। আর তাই স্টেডিয়ামগুলো বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সাজানো হয়েছে শহরের রাস্তাঘাটও। খেলা হবে দেশের তিন জেলার তিন স্টেডিয়ামে। ঢাকার শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও সিলেটের সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ১৬ মার্চ শুরু হয়ে বিশ্বকাপ শেষ হবে ৬ এপ্রিল। সেদিন জানা যাবে কে হবে টি-টুয়েন্টির নতুন চ্যাম্পিয়ন।

>> নাবীল অনুসূর্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2014, 01:40 PM
Updated : 15 March 2014, 01:40 PM

টি-টুয়েন্টি তো এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণ। অনেকে মনে করে, এই জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ আইপিএল। ভারতের এই টুর্নামেন্টটি চালু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণ কিন্তু চালু হয়েছিল তার আরও অনেক দিন আগে, ২০০৩ সালে। চালু করেছিল ইংলিশ এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।

আগে ইংল্যান্ডে একটা ওয়ানডে ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট হত। ২০০২ সালে শেষ বারের মতো টুর্নামেন্টটা আয়োজিত হয়। চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়ারউইকশায়ার। মূলত স্পন্সর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে টুর্নামেন্টটা বন্ধ হয়ে যায়। একদিনের খেলায় দর্শক সংকটও একটা বড় কারণ ছিল। তখন ইসিবির মার্কেটিং ম্যানেজার স্টুয়ার্ট রবার্টসন বিশ ওভার প্রতি ইনিংসের এই খেলার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটা পাসও হয়। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডে আয়োজিত হয় বিশ্বের প্রথম টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট- ‘টুয়েন্টি২০ কাপ’। সে বার চ্যাম্পিয়ন হয় সারে লায়ন্স।

২০০৪ সালে পাকিস্তানও একটি টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। তাতে চ্যাম্পিয়ন হয় ফয়সালাবাদ উলভস। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট চালু হয় অস্ট্রেলিয়াতেও। তখন টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ‘টুয়েন্টি২০ বিগ ব্যাশ’।

সে বছরেরই ১৭ ফেব্রয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ আয়োজিত হয়। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে মুখোমুখি হয় ট্রান্স-তাসমান দুই প্রতিদ্ব›দ্বী, অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড। দুই দলই ম্যাচটিকে খুবই হালকা ভাবে নিয়েছিল। জার্সি পরেছিল আশির দশকের জার্সির মতো।

অস্ট্রেলিয়া একপেশে ভাবেই জিতে নিয়েছিল ম্যাচটি। আর ফল নিশ্চিত দেখে ম্যাচের শেষ বলে ম্যাকগ্রা করেন আন্ডারআর্ম ডেলিভারি। মানে হাত না ঘুরিয়ে বল গড়িয়ে দেন। ’৮১ সালে এমনই একটি বল করার জন্য কুখ্যাত হয়ে আছেন সাবেক অসি খেলোয়াড় ট্রেভর চ্যাপেল।

সে দিন রসিকতায় আম্পায়ার বিলি বাউডেনও কম যাননি। ম্যাকগ্রা আন্ডারআর্ম বল করার পর বিলিও পকেট থেকে একটা লাল কার্ড বের করে ম্যাকগ্রাকে দেখিয়ে দেন!

২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজেও শুরু হয়ে যায় টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট। অ্যালেন স্ট্যানফোর্ডের আর্থিক সহায়তায় আয়োজিত টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ‘স্ট্যানফোর্ড ২০/২০’। প্রথম আসরে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় গায়ানা।

সে বছরেরই ৯ জানুয়ারি গ্যাবায় মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচেও দুই দল মজা করতে ছাড়ল না। সবার জার্সিতে প্রচলিত নামের বদলে লেখা হল ড্রেসিং রুমের ডাকনাম। যেমন পন্টিংয়ের জার্সিতে লেখা ছিল ‘পান্টার’, ম্যাকগ্রার জার্সিতে লেখা ছিল ‘পিজিওন’।

১৬ ফেব্রæয়ারি নিউ জিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ঘটল আরেক ঘটনা। টি-টুয়েন্টি ম্যাচ টাই হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগে নিয়ম ছিল, খেলা টাই হলে বোল-আউটে ফল নির্ধারিত হবে। সেই ম্যাচে দুই দলই নির্ধারিত ওভারে ১২৬ রান করে করলে, খেলা গড়ায় বোল-আউটে। আর বোল-আউটে ৩-০ তে ম্যাচ জিতে নেয় নিউ জিল্যান্ড।

এর পরের বছরেই বসে যায় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের বিশ্ব আসর। ২০০৭ সালের প্রথম সেই আসরটি বসে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ম্যাচ জেতে ভারত।

 

পরের বিশ্ব আসর বসে ইংল্যান্ডে, ২০০৯ সালে। চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। তারপর ২০১০ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে। চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ২০১২ সালে শেষ বিশ্ব আসর বসেছিল শ্রীলঙ্কায়। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মানে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারাই।

মাঝখানে দুই বছর বিরতির পর আবার হচ্ছে চার-ছক্কার বিশ্বকাপ। এবারের চ্যাম্পিয়ন কারা হবে? সেটা জানতে অবশ্য ৬ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সেদিনের ফাইনাল যে জিতবে, সে-ই তো হবে এবারের চ্যাম্পিয়ন!