পাখিদেরও আছে নাকি মন

যদিও আগের মতো পাখি এখন আর নেই; তারপরও আমরা আমাদের চারপাশে পাখি নেহাত কম দেখি না। কিন্তু কী কী পাখি দেখি? হাতে গোনা ৫-৬ রকমের পাখিই শুধু দেখতে পাই। কাক, চড়ুই, শালিক, কবুতর... এই তো! তাও আবার একটু ছায়া ঘেরা গাছগাছালি থাকলে তবেই দেখা যায় পাখিদের। কিন্তু এই বাংলাদেশেই যে কত ধরনের পাখি পাওয়া যায়, তা জানা না থাকলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। অনেক জাতের পাখিই কমতে কমতে একেবারে শূন্যে এসে ঠেকেছে। এখন সে সমস্ত পাখিদের দেখার জন্য ছুটতে হয় গহীন কোনো বনে, বিস্তির্ণ কোনো জলাধারের পারে, চরাঞ্চলে কিংবা বড় বড় নদীতে নৌকা নিয়ে ভেসে থাকতে হয় দিনের পর দিন।

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষার>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2013, 01:06 PM
Updated : 17 Dec 2013, 01:10 PM

নাম: পাখিদেরও আছে নাকি মন

লেখক: ইনাম আল হক

প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০১৩

ভাষা: বাংলা

প্রকাশক: বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব

মূল্য: ৪৫০ টাকা

আজ আমরা যে বইটি নিয়ে কথা বলব, সে বইটি পাখিদের নিয়ে লেখা। তবে কথা হল, বইটিতে খুব ভারী ভারী কোনো তত্ত্বকথা নেই। সাদা চোখে যেভাবে পাখি দেখা যায়, লেখক তারই বর্ণনা দিয়েছেন মজা করে। এ দেশের ৩শ’ প্রজাতির পাখি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কেবল শিকারির হাতে নয়, আমরা যেভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলেছি তার ফলেও পাখিরা খাদ্য আর আশ্রয়ের অভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর যারা আছে, তাদের ধরন-ধারণের পরিচয় লেখক দিয়েছেন অসাধারণভাবে, যা সবার কাছেই উপভোগ্য হবে।

পাখি নিয়ে লেখা বই। কিন্তু একে আমরা ভ্রমণকাহিনিও বলতে পারি অনায়াসে। অদেখা বাংলার অখ্যাত যত চর, বিল, বাদা আর বনে গিয়ে লেখা এ এক অনন্য ভ্রমণকাহিনি। আর এই পাখি দেখতে গিয়ে পদে পদে বিপদের শিহরণ; ডাকাত, পুলিশ আর শিকারির মুখে পড়ার গল্প। বনদস্যু, প্রহরী ও পাখিবিক্রেতার কথোপকথন থেকে জানা যাবে অজানা অনেক কিছু। চকাচকির চোখে বাংলাদেশ, কাকের নেত্রে বঙ্গভবন আর হোমা পাখির দৃষ্টিতে ইরান দেখার বিবরণ আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায় নানা বিষয়।

বইটিতে ভাগ করা হয়েছে তিনটি অংশে-- পাখির প্রাণ, পাখির মন আর পাখির অস্তিত্ব। শীতকালটা আমাদের দেশে পাখি দেখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশের পাখিগুলো অনেকটা পথ পেরিয়ে আমাদের দেশে আসে শীত থেকে একটু বাঁচার আশায়। আর আমরা সেসব পাখিকে ধরে ধরে খেয়ে ফেলছি। অতিথি বলেও একটুও দয়া দেখাচ্ছি না। সেই সঙ্গে উজার করে ফেলছি ওদের থাকার জায়গাগুলো। পরের বছর এ দেশে ওরা যখন আবার আসবে নতুন কোনো সঙ্গী নিয়ে, আমাদের সম্পর্কে কেমন বিচ্ছিরি ধারণা নিয়ে আসবে, ভাবো তো একবার! লেখকের বলা গল্পে এ ঘটনাগুলোও উঠে এসেছে দারুণভাবে।

পাখিরাও কিন্তু দারুন ফ্যাশন সচেতন আর গ্ল্যামারাস। ওদের গ্ল্যামার আর ফ্যাশন জগতের অবিশ্বাস্য অনেক কথা উঠে এসেছে বইটিতে। পাখিদের ভাব-ভালোবাসার ছবিটাও আঁকা হয়েছে নিপুণ হাতে। পাখিদের মাঝেও আছে দ্রৌপদী, ক্যাসানোভা আর রোমিও-জুলিয়েট। পাখির পোশাক দিয়ে জেন্ডার বিশ্লেষণ করা হয়েছে দারুণ মুন্সিয়ানার সঙ্গে। পাখির পোশাকে জেন্ডার স্টেটমেন্ট অংশটা পড়লে তুমিও খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারবে, পাখিটা পুরুষ নাকি স্ত্রী। পাখি দেখা আর পাখি গোনা-- দুটো কাজই লেখক করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। অনেকেই ভাবতে পারে, পাখি আবার গোনে কীভাবে? তার বর্ণনাও আছে বইয়ের বিভিন্ন গল্পে।

১৬৪ পৃষ্ঠার বইটির প্রতিটি পাতায় পাওয়া যাবে হরেক রকম পাখির ছবি। আর কোনটা কোন পাখি, তার তালিকা পাওয়া যাবে বইয়ের শেষে। বইটিতে ১৫০ প্রজাতির পাখির ছবি আছে। অল্প কটা বাদে সবগুলো ছবি তুলেছেন লেখক নিজেই। গ্লসি আর্ট পেপারে ছাপা, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব থেকে প্রকাশিত বইটির দাম ৪৫০ টাকা।