ঈদ মানে আনন্দ

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব দুটি; দুই ঈদ-- ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহা। তবে আনন্দে-উৎসবে ঈদুল ফিতরেই যেন আনন্দ হয় বেশি।

>> মেহেদী বাবুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2013, 11:45 AM
Updated : 12 August 2013, 11:45 AM

দীর্ঘ একমাস রোজা রেখে, সংযমের সাধনা করে, তবেই মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। তাই ঈদে আনন্দটাও একটু বেশি-ই হয়। আর ছোটদের জন্য ঈদের দিনে আনন্দেরও যেন শেষ নেই। ঈদের সকালে নতুন কাপড় পড়ে নামাজ পড়া, তারপর বড়দের কাছ থেকে সালামি আদায় করা, মায়ের তৈরি সেমাই-পায়েস খাওয়া, আত্মীয়-স্বজন আর রাজ্যের যত বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া-- সে এক বিশাল আনন্দ।

কিন্তু এই উৎসবের নাম ‘ঈদুল ফিতর’ কেন? এই ‘ঈদুল ফিতর’ আরবি শব্দ। ‘ঈদ’ অর্থ খুশি বা আনন্দ। আর ‘ফিতর’ অর্থ উপবাস ভাঙা। পুরো একমাস উপবাস করার পর, মানে রোজা রাখার পর মুসলমানদের জন্য যে দিনটি মাসব্যাপী রোজা রাখতে পারার তৃপ্তি আর আনন্দ বয়ে আনে, সেই দিনটিই ঈদুল ফিতর।

হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাস হয় ২৯ বা ৩০ দিনের। আর এই রমজান মাস শেষেই, শাওয়াল মাসের ১ তারিখে পালন করা হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আগের রাতকে ইসলামি পরিভাষায় বলা হয় ‘লাইলাতুল জায়জা’ বা পুরস্কারের রজনী। আর এই রাতকেই চলতি বাংলায় বলা হয় ‘চাঁদরাত’। হিজরি সন চাঁদনির্ভর হওয়ায়, শাওয়াল মাস এসেছে কি না, মানে ঈদ কবে হবে, সেটা নির্ধারণ করা হয় চাঁদ দেখে। শাওয়াল মাসের চাঁদ, অর্থাৎ সূর্যাস্তের সময় চিকন একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলেই বোঝা যায়, পরদিন ঈদ।

হযরত মুহম্মদ (স.) ইসলাম ধর্মের শেষ নবী। মুসলমানরা তার উম্মত বা অনুসারী। তার আগের নবীদের অনুসারীরাও রোজা রাখতেন। কিন্তু তাদের জন্য রোজার শেষে কোনো ঈদ ছিল না। মহানবীর (স.) সময় থেকেই ঈদ পালন শুরু হয়। আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, দ্বিতীয় হিজরি সনের ১ শাওয়াল, ইংরেজি ৬২৪ সালের ৩১ মার্চ মদিনায় মুসলমানরা প্রথমবারের মতো ঈদ পালন করেন। আর মক্কায় প্রথম ঈদ পালিত হয় আরও পরে, ৮ম হিজরিতে, ইংরেজি ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে; মক্কা বিজয়ের ঠিক ১১ দিন পর।

এ তো গেল পৃথিবীর প্রথম ঈদ পালনের কথা। বাংলাদেশের অন্তর্গত ভ‚-ভাগে প্রথম ঈদ পালন করা হয় সুলতানি আমলে। অবশ্য এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছিল ৬৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকেই। কিন্তু তখনই এই অঞ্চলে ঈদ পালন শুরু হয়নি। ঈদ পালনের রীতি মূলত চালু হয় স্বাধীন সুলতানি আমলে। ধারণা করা হয়, তাদের আমলেই প্রথম ঢাকা শহরে পবিত্র ঈদ উল-ফিতর ও ঈদ উল-আজহা পালন শুরু হয়।

মোটামুটি তখন থেকেই রাজধানী শহর ঢাকায় ঈদ পালন শুরু হয়। তখন অবশ্য ঢাকা রাজধানী শহর ছিল না। আর এখনকার মতো এত ঈদের জামাতও হত না। আগে ঢাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হত প্রধানত চকবাজার মসজিদ আর ধানমন্ডির ঈদগাহ ময়দানে। এছাড়াও বড় বড় জামাত হত আরও কয়েকটা জায়গায়-- গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা ময়দানে, আরমানিটোলা ময়দানে, বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে।

ঈদের আমেজ মূলত শুরু হয় রমজানের একেবারে শুরু থেকেই। সবার আগে শুরু হয় ঈদ উপলক্ষে নতুন জামাকাপড় কেনা। এই আনন্দটা আবার ছোটদেরই সবচেয়ে বেশি। ঈদের আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে বাড়ি ফেরার আনন্দ। সপরিবারে ঈদ পালন করার জন্য মানুষ ঈদের সময় নাড়ির টানে নিজেদের গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করে। এ সময় বাস, ট্রেন আর লঞ্চে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড় হয়।

ঈদ উৎযাপন শুরু হয় সকালবেলা ঈদের নামাজ পড়ার মাধ্যমে। নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়ে সবাই দলে দলে ঈদগাহে যায় ঈদের নামাজ আদায় করতে। নামাজের পর সবাই সবার সঙ্গে কোলাকুলি করে, আর একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়, ‘ঈদ মুবারক’ বলে। এভাবেই শুরু হয় ঈদ উৎসব।

তারপর সবাই সেমাই, পায়েস, ফিরনি খাওয়ায় মেতে ওঠে। ছোটরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঈদের সালামি আদায়ে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় দল বেঁধে ঘুরতে যায়। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় ছোটবড় অনেক মেলাও বসে। ছোটরা এসব মেলায় যায় আনন্দ করতে। এসব মেলায় সাধারণত বিভিন্ন রকম খেলনার পসরা বসে। থাকে হরেক রকম খাবার। অনেক মেলায় নাগরদোলা, চরকি, পুতুল নাচ, যাত্রা ইত্যাদিরও আয়োজন থাকে।

ঈদের দিনগুলোর অন্যতম মজা হচ্ছে ঘুরতে যাওয়া। সপরিবারে অথবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে অনেকেই কোথাও না কোথাও ঘুরতে যায়। তবে ঘোরাঘুরির মজাটা যেন ছোটদেরই বেশি। মা-বাবার সঙ্গে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়া চাই-ই চাই। নইলে যেন ঈদের আনন্দটাই মাটি!

ঈদের দিনগুলো অত্যন্ত আনন্দের হলেও, সবার জন্যই কিন্তু ঈদ আনন্দ বয়ে আনতে পারে না। আমাদের আশপাশে অনেক গরিব-দুখি মানুষ আছে, যারা ঈদের দিনেও ভালোমতো খেতে পায় না, নতুন জামাকাপড় কেনার সামর্থ্যও থাকে না তাদের। কিন্তু ধনী-গরিব সবাই মিলেমিশেই আনন্দে-উৎসবে ঈদ উৎযাপন করা উচিত। আর তাই যাদের উপর ধার্য হয়েছে, তাদের জাকাত দিতে হয়, ফিতরা দিতে হয়। যাতে গরিবরাও ঈদে আনন্দের উপলক্ষ পায়, হাসিমুখে ঈদ পালন করতে পারে। সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ পালন করতে পারলে তবেই ঈদের দিনটি প্রকৃত আনন্দ বয়ে আনতে পারবে। নইলে আর কীসের ঈদ?