পোষ মানানোর পাঁচ সরীসৃপ

পোষা প্রাণীর শখ তো তোমাদের অনেকেরই আছে। কুকুর, বিড়াল, পাখি, খরগোশ তো পোষ মানেই। কিন্তু পোষা প্রাণী হিসেবে সাপ, গেকো কিংবা অন্য কোনো সরীসৃপের কথা ভেবে দেখেছো কখনো?

নাবীল অনুসূর্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2013, 05:34 AM
Updated : 16 Jan 2013, 05:42 AM

পোষা প্রাণীর শখ তো তোমাদের অনেকেরই আছে। তোমাদের অনেকেই কুকুর, বিড়াল পোষো। অনেকের বাসায় পোষা পাখিরা দিনরাত কিচির-মিচির করে। অনেকের বাসার ছাদে গেলে খরগোশও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পোষা প্রাণী হিসেবে সাপ, গেকো কিংবা অন্য কোনো সরীসৃপের কথা ভেবে দেখেছো কখনো?

হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই কিন্তু মানুষ সরীসৃপ পোষে। আর পোষা প্রাণী হিসেবে এগুলো খারাপও নয়, যেমন সুন্দর তেমনি নিরীহ। ভাবছো, বুঝি পাগল হয়ে গেছি; নইলে সাপ, কুমির- এদের কেউ নিরীহ বলে? আরে, যে সাপ বিষাক্ত, সে সাপকে পোষ মানাতে যাবো কেন! সেগুলোকে তো পোষ মানাবে সাপুড়েরা। তুমি পুষবে ছোট্ট সুন্দর দেখে নির্বিষ কোনো সাপ কিংবা শান্ত কোনো গেকো অথবা এমনি কোনো সরীসৃপ। পৃথিবীতে এরকম কত্তো সরীসৃপ আছে! আচ্ছা, আজকে এমনি কতোগুলো পোষ মানানোর উপযোগী সরীসৃপের গল্পই বলা যাক, কেমন?

 

চিতা গেকো
শুরুতেই তো দুটো পোষা সাপের গল্প বললাম। কিন্তু সরীসৃপ মানেই কি সাপ নাকি! এবার তাহলে পোষা যায় এমন একটা গেকোর গল্প বলি। এই গেকোর নামটাই শুধু ভয়ংকর- চিতা গেকো। গায়ে চিতাবাঘের মতো ছোপ ছোপ দাগ থাকে তো, তাই সম্ভবত এমন নামকরণ করা হয়েছে। আদতে কিন্তু এটা একেবারেই খুদে; লম্বায় হয় ২০-২৮ সেন্টিমিটার, ওজন হয় ৪৫-৬৫ গ্রাম। আর তাই ওদের জন্য বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। এই চিতা গেকো আবার নিশাচর প্রাণী; মানে দিনে ঘুমায়, রাতে খায়-দায় ঘুরে বেড়ায়। কী কী খায়? ঝিঁঝি পোকা, মাকড়সা এমনি সব পোকামাকড়।

তবে চিতা গেকো পালতে গেলে একটা ব্যাপারে খুব সাবধান! না, আগেই ভয়ে আঁতকে উঠো না। ওর লেজটা বেশ ভঙ্গুর, সহজেই ভেঙ্গে যায়। সে ব্যাপারে বেশ করে খেয়াল রেখো। তবে টিকটিকি গোত্রীয় প্রাণী কিনা, লেজ খসে গেলে আবার গজায়; তবে সুন্দর বলেই তো পুষছো, লেজ খসে গেলে যে ওটার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে, সে কী আর তুমি চাইতে পারো?

নীল জিভের স্কিঙ্ক
ভাবছো, স্কিঙ্ক আবার কী প্রাণী! স্কিঙ্ক এক ধরনের সরীসৃপ; অনেকটা টিকটিকি গোত্রীয় প্রাণী আর সাপের মাঝামাঝি। এই স্কিঙ্কদেরই একটি গোত্র এই নীল জিভের স্কিঙ্ক। বুঝতেই পারছো, মানুষ কেন এই স্কিঙ্ক পুষতে চায়; এর জিভ যে পুরোই নীল!

এই স্কিঙ্ক পোষাও খুব সহজ, তাই পোষ্য হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। দৈর্ঘ্যে হয় ১৭-২৪ ইঞ্চি। বাঁচে প্রায় ২০ বছর। আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। ওখানে এদেরকে বেয়ার্ডেড ড্রাগনও বলা হয়। সবই খায়, মানে সর্বভূক। তবে ওদের প্রিয় খাবার কি জানো? ছোট ছোট পাথর! আর ওদের সম্পর্কে সবচেয়ে মজার তথ্য কী জানো? ওরা টিকটিকি গোত্রীয় অন্যান্য প্রাণীদের মতো ডিম পারে না; স্তন্যপায়ীদের মতো সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়!

 

ক্যামেলিওন
ক্যামেলিওন পুরোই আলাদা জাতের সরীসৃপ। ওদের এই নামকরণটাও খুব মজার। ইংরেজি ক্যামেলিওন শব্দটা এসেছে ল্যাটিন নাম ‘ক্যামেলিও’ থেকে। সেই ল্যাটিন নামটা আবার এসেছে এর গ্রিক নাম থেকে। গ্রিক নামটা ভাঙলে দু’টো শব্দ পাওয়া যায়, যাদের অর্থ দাঁড়ায়- মাটির বুকের সিংহ (Lion on the ground)। উহু, এই গ্রিক নামটাও মূল নাম না; গ্রিক নামটা এসেছে অ্যাক্কাদিয়ান ভাষা থেকে; অ্যাক্কাদিয়ান নামটি ইংরেজি করলে দাঁড়ায়- ground Lion। কি, ভাবছো, নামের ইতিহাস না হয় জানা গেল, কিন্তু এই ক্যামেলিওনকেই তো চিনলাম না? আরে, ট্যাঙ্গেলড সিনেমাতেই তো রাপুনজেলের একটা পোষা ক্যামেলিওন ছিল! এবার খুব মনে পড়েছে, না?

এখন এই ক্যামেলিওন পোষা সরীসৃপ হিসেবে কেন এতো জনপ্রিয় জানো? বললে তো তুমিও ক্যামেলিওন পালতে চাইবে! তাও বলি। প্রথমত, ওরা গিরগিটির মতো গায়ের রং পাল্টাতে পারে। ওরা মূলত গায়ের রং লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা আর গোলাপি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ওরা ওদের দুটো চোখ আলাদা আলাদা করে নাড়াতে পারে। আর তৃতীয়ত, বিশেষ আকৃতির লম্বা জিহ্বা। সব মিলিয়ে, ওরা দেখতে ভীষণ সুন্দর।

তবে ওদের পোষা বেশ কষ্টকর। পশুপালনের জগতে তুমি যদি শিক্ষানবীশ হও, মানে নতুন নতুন পশুদের পোষ মানাতে শুরু করে থাকো, তবে ক্যামেলিওন না পোষাই ভালো। ওদের যেমন ভীষণ যত্ন  নিতে হয়, তেমনি ওদেরকে বেশ বড়োসড়ো জায়গাতেও রাখতে হয়। খাবার নিয়ে অবশ্য তেমন চিন্তা নেই। মাছি, ঝিঁঝিপোকা, এইসব খায় ওরা। পাওয়া যায় আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাতেও।

এতোক্ষণ তো পোষ মানানোর উপযোগী পাঁচটি সরীসৃপের গল্প শুনলে। কোনোটা পছন্দ হয়ে গেছে নাকি? উহু, এতো তাড়াতাড়ি পছন্দ করাটা বোধহয় ঠিক হবে না। খুঁজে-পেতে দেখো, আরো কত্তো পোষ মানানোর উপযোগী সরীসৃপ আছে। সেগুলো হয়তো আরো বেশি সুন্দর, তোমার আরো বেশি পছন্দ হবে। তবে অবশ্যই দু’টো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবে; প্রথমত, যে প্রাণীকে পোষ মানাবে, সেটা যেন কোনোভাবে তোমারই ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। আর দ্বিতীয়ত, তুমি যে প্রাণীকে পোষ মানাচ্ছো, সত্যি সত্যিই তুমি সে প্রাণীটার সব চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা। ধরো, তুমি বল পাইথনই নিয়ে এলে। কিন্তু সেটাকে তো আর ভাত খাইয়ে রাখতে পারবে না, ওকে চাহিদামতো ইঁদুর বা তেমনি কোনো প্রাণী খেতে দিতেই হবে। নইলে ও যে না খেয়ে মারা পড়বে। আর যদি কোনভাবে বেঁচেও যায়, দেখতে আর তেমন সুন্দর নাদুসনুদুস থাকবে না। বল পাইথনটিরও ভীষণ কষ্ট হবে, আর সেই শুকনো হাড়-জিরজিরে বল পাইথন দেখতেও সুন্দর লাগবে না। সে কী আর ভালো হবে?

তবে আব্বু-আম্মুকে রাজি না করিয়ে আবার কিছু পালতে যেয়ো না যেন। পরে আব্বু-আম্মু বকে দিলে, আমার দোহাই পেড়ে কিন্তু কাজ হবে না, সে আগেই বলে রাখছি, হুহ!