এ কি কান্ড!

>>মাসুম আহমেদ আদিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2017, 05:21 AM
Updated : 19 July 2017, 05:21 AM

বই: একি কান্ড

লেখক: হুমায়ূন আহমেদ

প্রকাশকাল: ২০০৬

প্রকাশক: মাউলা ব্রাদার্স

মূল্য: ৭০ টাকা মাত্র।

গল্পটি টুকুনের। টুকুন একটি ছোট ছেলে, বয়স সাত বছর। তবে কয়দিন পরেই টুকুন আটে পা দিবে। টুকুন ছোট হলেও তার গল্প বলার ক্ষমতা খুবই দারুণ, সে অনেক অনেক অনেক অনেক গল্প বলতে পারে। নানান আজব আজব সব গল্প, সেসব গল্পের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনাই নেই।

টুকুনের গল্পে ওর বাবা মা খুবই বিরক্ত। বিশেষ করে সম্প্রতি টুকুন ‘কাক তার সঙ্গে কথা বলে’ গোছের একটা গল্প করছে এবং সেটাকে সত্য দাবী করছে। এটা নিয়ে বাবা-মা দুজনই টুকুনকে বেশ শাসন করেছেন। বাবা তো সাফ বলে দিয়েছেন এইসব গল্প বলা মোটেই যাবে না। তো টুকুনের গল্পের একমাত্র শ্রোতা মৃদুলা, টুকুনের শিশু বোন। মৃদুলা বিশেষ কথা বলতে পারে না, এ ছাড়াও সে খুবই শান্তশিষ্ট ফলে তার কথা বলার প্রয়োজনও হয় না। ফলে টুকুন মনের সুখে আবোল-তাবোল গল্প বলতে পারে।

টুকুনের বাবা রশিদ সাহেব ব্যাংকে চাকুরি করেন। এ কাজের ফাঁকে তিনি লেখালেখিও করেন। অনেকদিন থেকে তিনি একটা উপন্যাস লিখে শেষ করতে চাচ্ছেন। উপন্যাসের নাম "একি কান্ড"। কিন্তু লেখা আগাচ্ছে না, এর কারণও টুকুন। বাড়ি ফিরলেই টুকুনের মা টুকুনের বাবার কাছে টুকুনের নামে এতো এতো অভিযোগ করেন, টুকুন নাকি একটা কাকের সঙ্গে কথা বলে। নানান রকম কথা। এবং এ কথা ও সবাইকে বলে বেড়ায়। মুনা ও রশিদ সাহেব ভেবেই হয়রান, এই বয়সেই যদি টুকুন বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে অন্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, তাহলে বড় হয়ে কী করবে? এদিকে টুকুন কিছুতেই স্বীকার করতে রাজি না যে সে বানিয়ে বলছে। সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে একটা কাক সত্যিই তার সঙ্গে কথা বলতে আসে।

টুকুনের সবচেয়ে পছন্দের মানুষ ওর ছোটফুপি অপলা। একমাত্র ফুপিই টুকুনকে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। বাসায় কেউ বুঝতেই চায় না টুকুন যে এখন আর ছোট না, শুধু ছোটফুপি বুঝেন। অপলা এবার এম.এস.সি. পরীক্ষা দিবে। এতো বড় একটা মানুষ হয়েও সে কখনও বড় মানুষদের মতো নিজেকে আলাদা করে রাখে না। তিনি আসলেই মৃদুলার সঙ্গে পুতুল খেলে টুকুনের সঙ্গে ডাকাত-পুলিশ খেলে। এসব কারণেই টুকুন ওর ফুপিকে এতো পছন্দ করে।

কাকের বিষয়টাও ফুপি বেশ ভালোভাবে নিলেন। কাক কী করেন না করেন জিজ্ঞেস করলেন। যদিও ফুপি পড়ার চাপে দম ছাড়তে টুকুনদের বাসায় এসেছিলেন, তবুও টুকুনের এই কর্মে তার দম বের হয়ে যাওয়ার জোগাড়। টুকুনের সব কথা মেনে নিলেন যদিও তিনি ভান করলেন উনি মানেননি। উনি ঠাট্টা করে বলেন, কাক কি মানুষ যে তোর সঙ্গে কথা বলবে? এসব মিথ্যা বলা ছেড়ে দে।

ফুপির কথায় টুকুনের খুব মন খারাপ হয়। তা দেখে অপলা বলেন, সামনে তো তোর জন্মদিন তোর কাক নিশ্চয় তোর জন্য গিফট নিয়ে আসবে? কী গিফট নিয়ে আসে আমাকে জানাবি।

টুকুন উৎসাহে পুরো ফুটতে থাকে জন্মদিন নিয়ে। এদিকে কী এক কারণে এবার টুকুনের জন্মদিনে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না, এটি নিয়ে ওর ভীষণ খারাপ। টুকুন ভেবেছিল হয়তো সন্ধ্যার পর একে একে সবাই হাজির হবে। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও কেউ আসলো না। এমনকি ছোট ফুপিও না! বাবা পর্যন্ত বাসায় ফিরলেন খালি হাতে!

টুকুন মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে। এমন সময় কাকটা আসল। টুকুনের সঙ্গে কথা বলল। যাওয়ার সময় টুকুন কে একটা গিফট দিয়ে গেল। গিফটটা কাকের মতোই অদ্ভুত। সেটি নাকি একটা হচ্ছে "ঝ্যাং-এর বাচ্চা"। ঝ্যাং এর বাচ্চা আবার কী? এটি নাকি একটি বিশেষ প্রাণী তার বৈশিষ্ট্যও বিশিষ্ট। ঝ্যাং-এর বাচ্চাকে কেউ দেখতে পায় না। মধ্যে মধ্যে অনুভব করতে পারে। ঝ্যাং এর বাচ্চার খাবার হচ্ছে কাগজ। টুকুন দৌড়ে গিয়ে ছোটফুপিকে ফোন করে জানায় কাকটা ওকে একটা ঝ্যাং এর বাচ্চা দিয়ে গেছে। অপলার মন খারাপ হয়ে যায় এটা শুনে। এতোদিন ছিল কাকের অত্যাচার এখন আবার ঝ্যাং-এর বাচ্চা যুক্ত হয়েছে। সে আচ্ছামতো বকে দেয় টুকুনকে। টুকুন মন খারাপ করে বসে থাকে।

রশিদ সাহেব ছেলের অবস্থা দেখে একটা কেক নিয়ে আসেন। ৮ টা মোমবাতি জ্বালিয়ে টুকুন কে বাবা বলেন, "মনে মনে কিছু একটা চাও, তারপর এক ফুঁ তে যদি সবগুলা মোম নেভাতে পার তাহলে তোমার চাওয়া পূর্ণ হবে।" টুকুন চোখ বন্ধ করে মনে মনে চাইতে থাকে সে যেন ঝ্যাং এর বাচ্চাকে দেখতে পারে এবং ফুঁ দেয়। চোখ মেলে দেখে সবগুলা মোম নিভে গেছে এবং একটা চেয়ারে ঝ্যাং-এর বাচ্চা বসে আছে। সে আনন্দে চিৎকার করে উঠে। ঐ তো ঝ্যাং-এর বাচ্চা ঐ তো ঝ্যাং-এর বাচ্চা।

এরপর সবাই মিলে লেগে পরে ঝ্যাং-এর বাচ্চার অস্তিত্ব ভুল প্রমাণ করতে। টুকুন, মৃদুলা আর ঝ্যাং এর বাচ্চার অদ্ভুত সব কাজের বিবরণ জানতে তোমাদের পড়তে হবে এ কি কান্ড! বইটি। এত কান্ড পড়তে পড়তে নিমিষেই কখন বইটি শেষ হয়ে যাবে টেরই পাবে না।