হেইডি

মেয়েটির নাম হেইডি। ছোট, চঞ্চল, ঠিক যেন একটা ছোট্ট চড়ুই পাখি। সারাদিন খিলখিল হাসি আর আনন্দ করার এ মেয়েটিকে দেখলে কারও বোঝার উপায়ই নেই ওর জীবনে কী হয়েছে। হেইডি যদিও বয়সে খুব ছোট তবু ওর বাবা মা কেউ নেই। হেইডি থাকে ওর খালা ডেটের সঙ্গে। তবে এই জীবনও খুব স্থায়ী নয়। হেইডির খালা যাবেন শহরে কাজের সূত্রে, হেইডিকে সেখানে দেখার কেউ নেই। হেইডির একমাত্র আত্মীয় হেইডির দাদা অল্পহি। যেমন কটমটে তার নেম তেমনিই একটা মানুষও তিনি।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2017, 09:54 AM
Updated : 11 July 2017, 09:54 AM

হেইডির দাদা বাস করেন আল্পস নামক একটি পর্বতমালার উপত্যকা এলাকায়। সেখানে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড় আছে। বিস্তীর্ণ তৃণভূমির সেই পাহাড়ের মধ্যে একটি পাহাড়ের ঢালে তার বাড়ি। হেইডির দাদা খুবই অসামাজিক মানুষ। আশেপাশে এলাকার মানুষেরা যখন একটা গ্রামের মতো জায়গায় বসতি গড়েছে হেইডির দাদা থাকেন। লোকে বলে হেইডির দাদা নাকি কম বয়সে মানুষ খুন করেছিলেন। তবে মানুষ খুন করুক কী না করুক হেইডির দাদার শীতল আচরণ হেইডির মতো চঞ্চল একটা প্রজাপতিকে অস্বস্তি বোধ দিতে যথেষ্ট।

হেইডি মেয়েটি আসলেই একটি প্রজাপতি। খালার চলে যাওয়ায় সে তো ব্যথিত নাই বরং, আল্পস পর্বতমালার ধারে গড়ে উঠা এই বিশাল তৃণভূমিতে আসতে পেরে হেইডি খুবই খুশি। সারাদিন ওর আনন্দ আর খিলখিল হাসিতে পুরো এলাকা মুখরিত থাকে। ওর দাদা অল্পহির অনেকগুলো ছাগল আছে। এই ছাগল দেখার জন্য একটি ছোট্ট ছেলেও আছে; নাম পিটার। পিটার হেইডির থেকে মাত্র এক বছরের বড়। পিটারের সঙ্গে ছাগলদের পিছু দৌড়ে খুব ভালো সময় কাটে হেইডির। এত্ত প্রাণবন্ত আমুদে মেয়েটিকে ভালো না বেসেও থাকতে পারে না হেইডির কাঠখোট্টা দাদা আল্পহি।

আল্পস পর্বতের কোলে নিখুঁত সুখী জীবনে হেইডির কেবল দুইটিই দুঃখ। এক হেইডি স্কুলে যেতে পারে ন। এইখানে গ্রামে একটি স্কুল আছে বটে তবে সেখানে হেইডির আর যাওয়া হয় না। হেইডির আরেকটি দুঃখ হচ্ছে যখন শীত নামে আর চারিদিক বরফে ঢেকে যায় তখন পিটার বাড়ি চলে যায়। এমন দীর্ঘ শীতের একঘেয়েমি সময় হেইডির কাটতে চায় না কিছুতেই।

হেইডি তারপরও যখন ওর জীবনে বেশ খাপ খাইয়ে নিচ্ছিল হঠাৎ ওর খালা ডেটে ফিরে আসেন আর হেইডিকে ফ্রাঙ্কফুর্ট নিয়ে যান। ফ্রাঙ্কফুর্ট জার্মানির একটি বিশাল শহর। সেখানে বড় বড় পর্বতের মতো উঁচু উঁচু দালান, রাস্তা ভর্তি গাড়ি, আর সব মানুষ সারাক্ষণ ব্যস্ত।

ফ্রাঙ্কফুর্টে হেইডির সঙ্গী হয় ক্লারা নামে একটি বড়লোকের মেয়ে। তবে ক্লারার জীবনও বেশ কষ্টের, ছোটবেলায় ক্লারাও হেইডির মতো তার মাকে হারিয়েছে। ওর বাবা আছেন তবে সারাক্ষণই ব্যবসার কাছে বাইরে বাইরে ঘুরেন। এত দুঃখের উপরেও বড় দুঃখ ক্লারা নিজের পায়ে হাঁটতে পারে না, ওকে চলাচল করতে হয় একটা হুইলচেয়ারে করে। হেইডি যদিও নিজের পায়ে হাঁটতে পারে তবুও এই বন্দি জীবন এই দালানকোঠা এই কেদার দস্তুর জীবনের সহবত মেনে চলা হেইডির জন্য কষ্টকর হয়ে উঠে, হেইডি স্বপ্ন দেখে আবার আল্পস পর্বতের কোলে ফিরে যাওয়ার, যেখানে আছে সবুজ প্রান্তর আর ওর প্রজাপতির মতো মনটা। কীভাবে হেইডি আবার ফিরে যাবে সেটা নিয়েই গল্প হেইডি।

হেইডির সিনেমাটা যদিও ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছে তবে গল্পটা এত নতুন নয়। সেই ১৮৮১ সালে সুইস লেখক জোহান স্পিরি হেইডি নামে উপন্যাসটি লিখেছেন। এত বছরে হেইডিকে নিয়ে অন্তত গোটা বিশেকেরও বেশি টিভি সিরিয়াল এবং সিনেমা হয়েছে। অনেকে সরাসরি হেইডিকে গল্পে না নিলেও এর মূলভাব রপ্ত করে সিনেমা ও সিরিয়াল বানিয়েছে। অবশেষে অ্যালেন জিস্পনর ২০১৫ সালে হেইডিকে নিয়ে আরেকটি সিনেমা বানিয়েছেন, তবে হেইডির প্রতি লোকের ভালোবাসা এতেও কমেনি। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া হেইডি সিনেমার আইএমডিবি রেটিং ১০ এর মধ্যে ৭.৪, রটেন টমেটোতে ১০০% এবং কমনসেন্স মিডিয়াতে ৫ এর মধ্যে চার। শুধু তাই নয় ২০১৭ সালে হেইডিকে নিয়ে আরও একটি টিভি সিরিজ আসছে।