প্লাস্টিক ব্যাগকে না বলার দিন

কিছুদিন আগের ঘটনা। নরওয়ের পশ্চিম উপকূলের বার্গেন নামক একটি জায়গায় একটি তিমি মাছ সৈকতে আটকে যায়। সমুদ্রতটে তিমি মাছদের আটকে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটা ভয়ানক ঘটনা কারণ জলজ প্রাণীরা তো আর পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। এদিকে তিমি মাছেরা যে রকমের বড় হয় চাইলেই ওদের পানিতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। এতে অনেক শক্তি, মানুষ, যন্ত্র, কৌশল ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। স্থানীয় মানুষেরা তাও চেষ্টা করছিলেন এটাকে পানিতে নামিয়ে দেওয়ার কিন্তু তাও লাভ হয় না, মাছটি আবার মরেই ভেসে উঠে।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2017, 08:36 AM
Updated : 3 July 2017, 08:36 AM

এভাবে একটা প্রাণী মরে গেলে সমুদ্র গবেষকরা সেটা অন্বেষণের চেষ্টা করেন প্রাণীটা কেন মরে গেল। তো এই মরা তিমিটিকে নিয়ে যাওয়া হল একটি গবেষণাগারে প্রাণী বিজ্ঞানীরা তিমিটির উপর নানান রকমের গবেষণা করে যখন ওর পেটে হাত দিলেন তখন তারা বিস্ময়ে বাকরূদ্ধ হয়ে গেলেন।

তিমিটির পাকস্থলীর যতই ভিতরে হাত দেওয়া হচ্ছিলো বিজ্ঞানীরা একটাই জিনিস খুঁজে পাচ্ছিলেন সেটা হচ্ছে, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগ। বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন মাপের একের পর এক পলিথিন বের হয়ে আসছিল আর বিজ্ঞানীরা অবাক বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলেন। সর্বমোট ৪ কেজি পলিথিন এই হতভাগ্য তিমিটির পেট থেকে বের হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত পলিথিন এই তিমিটিকে কে খেতে দিল? জবাবটা হচ্ছে আমরা, আমি তুমি আমরা সকলে এই কাজটার জন্য দায়ী।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে আমরা যে জিনিসগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর উচ্ছিষ্ট অংশ আমরা পরিবেশে ফেলে দেই। পরিবেশের নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে আবার পরিবেশের অংশ করে নেয়। তবে প্লাস্টিক পলিথিনের মতো শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধনযুক্ত পদার্থের জন্য এই নিয়ম খাটে না। এগুলোর প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে এতই বেশি সময় লাগে যে ততদিনে এগুলো আমাদের মাটি পানি বাতাসের অনেক ক্ষতি করে দেয়। শুধুমাত্র এই কারণে যে পরিমাণ জীবের প্রাণ নাশ হয়। একটা যুদ্ধেও ততখানি হয় না।

আমরা যে তিমিটির কথা বললাম এটি একটিমাত্র ঘটনা। এরকম হাজার হাজার প্রাণী প্রতিদিন পলিথিনের প্যাকেটের কারণে প্রাণ দেয়। অনেক মাটির দূষণ হয় যেখানে উদ্ভিদ জন্ম নিতে পারে না।

প্লাস্টিক ব্যাগের এহেন ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এনভায়ারমেন্ট কনভারসেশন নামে একটি সংস্থা জুলাইয়ের ৩ তারিখকে বিশ্ব প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিন হিসেবে পালন করে থাকে। আর সবাইকে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যাবহার না করার পরামর্শ, উপদেশ, অনুরোধ করে থাকে। এ দিনটা পালন কিন্তু এক জন্য করতে হবে না যে আজকের দিনই শুধু আমরা প্লাস্টিক ব্যাক ব্যবহার করব না। বরং আজকে একটা দিন যেদিন আমরা সচেতনভাবে নিজেরা প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার ত্যাগ করব পাশাপাশি অন্যদের এটা ত্যাগের বিষয়ে সাহায্য করব। আর প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ রাখার চেষ্টা করব সারা বছর ধরে।

প্লাস্টিক ব্যাগ বাদ দেওয়ার জন্য আমরা কিছুটা প্রাচীন উপায় অনুসরণ করতে পারি। যেমন আমরা আগের দিনের মতো কাপড়ের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে পারি। যখনই কিছু কিনব নিজেদের সেই ব্যাগ বের করে জিনিস নিয়ে আসব প্লাস্টিক ব্যাগ নিবো না। আবার সবাইকে আগ্রহী করার জন্য সুন্দর একটা কাপড়ের ব্যাগ নিজেরাই তৈরি করতে পারি। সেই ব্যাগে আমাদের নাম লেখা থাকতে পারে, সুন্দর কোনো ছবি আঁকা বা সেলাই করাও হতে পারে। আমরা যখন এই ব্যাগ নিয়ে ঘুরব সবার তাক লেখে যাবে আর অন্যরাও এমন ব্যাগ ব্যবহারে সচেষ্ট হবে।

আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস সেই তিমিটার মতো হাজার হাজার প্রাণীর জীবন বাঁচাবে। মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবী আমাদের একার না। আমরা সবাই একটা শৃঙ্খলের মধ্যে রয়েছি যার নাম বাস্তুসংস্থান। এই চক্রে প্রতিটা প্রাণী এবং তার প্রতিটি উপাদান যেমন মাটি পানি বায়ুও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকাও দায় হয়ে যাবে। তাই নিজেদের স্বার্থেই আমাদের পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।