বিগ ফ্রেন্ডলি জায়েন্ট (বিএফজি)

মেয়েটির নাম সোফি। বয়স দশ বছর। এ বয়সের বাচ্চা মেয়েদের জীবন যেমন হাসি, আনন্দে ভরপুর হয়, সোফির জীবনটা সেরকম নয়। সোফির জীবনটা বেশ কষ্টের আর বঞ্চনার। এর কারণ সোফির যে বাবা মা নেই। তাই এত আদর ভালোবাসা দেওয়ার লোকও নেই। সোফি থাকে লন্ডনে একটা অনাথ আশ্রমে। সে আশ্রমে সব কিছুতেই খুব কড়াকড়ি আর নিয়ম ভাঙ্গলে আর আস্ত রাখে না কেউ।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2017, 08:34 AM
Updated : 18 June 2017, 09:42 AM

সোফির রাতে ঘুম আসে না। এই বয়সেই ওর সঙ্গী হয়েছে অনিদ্রা রোগ। এই অসম্ভব রোগে ভুগে সোফি কিছুতেই রাতে ঘুমাতে পারে না। তবে রাতে জেগে থাকা বা আলো জ্বলিয়ে রাখা কোনোটাই ঐ আশ্রমে চলে না। এ জন্য সোফিকে খুবই বকাঝকা করা হয়। একদিন রাতে যখন সোফি লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়ছিল তখন বাইরে একটা কিসের শব্দ হয়। সোফি কৌতূহল বশে গিয়ে দেখে বিশাল একটা মানুষের হাত। সোফি ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। ও ঘরে ফিরে শুয়ে পরে কিন্তু বিশাল মানুষ ঠিকই ওকে দেখে ফেলে আর ওকে ঘরের ভিতরে থেকে তুলে নিয়ে যায়।

শহর পেড়িয়ে মাঠ, মাঠ পেড়িয়ে সাগর, সাগর পেড়িয়ে মেঘ, মেঘ পেড়িয়ে আঁধার এরকম অনেক ঝঞ্ঝা পেরিয়ে সোফিকে নিয়ে বিশাল মানুষটি আসে একটি অন্য অদ্ভুত দেশে। অদ্ভুত একটা ঘরে, সেখানে লোকটির বিছানা একটি বিরাট জাহাজ, ঘরটাও বিশাল অদ্ভুত। সোফি ভাবে এই দৈত্য তো অবশ্যই আমাকে খেয়ে ফেলবে। তবে দৈত্য ওকে অভয় দিয়ে জানায় ও ভালো দৈত্য। ও মানুষকেও খায় না। তাই সোফি চাইলে ওকে বন্ধু বড় দৈত্য বা বিগ ফ্রেন্ডলি জায়েন্ট বলতে পারে। সোফি ছোট করে ওর নাম দেয় বিএফজি।

বিএফজি খুব ভালো দৈত্য। আগেই তো বলেছি ও অন্য দৈত্যদের মতো মানুষদের খেয়ে ফেলে না। ও একটা আজব সবজি খেয়ে বেঁচে থাকে। সেটাও হয় শুধু দৈত্যপুরিতেই। ওর বিছানা একটা আস্ত জাহাজ। আর ওর কাজ কী জানো? মানুষকে স্বপ্ন দেওয়া। সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন এই স্বপ্ন ধরে আনতে এসব স্বপ্ন ধরে আনতে একদিন বিএফজি আর সোফি ঘর থেকে বের হয়। তবে দৈত্যপুরির অন্য দৈত্যরা যারা মানুষ ধরে খায় তারা বিএফজিকে অনেক বিরক্ত করে।  ওদের কাছে থেকে নিজেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সোফি কোনোক্রমে বেঁচে যায়। এরপরে ওরা দুজনে স্বপ্নপুরিতে যায় স্বপ্ন ধরতে। সেসব স্বপ্ন নিয়ে ওরা আবার লন্ডন ফিরে যায় সবাইকে স্বপ্ন দিতে। এটাই তো বিএফজির কাজ।

লন্ডন গিয়ে ওরা আবিষ্কার করে সোফির কম্বলটা ওর সঙ্গে নেই। বিএফজি বুঝে যায় খারাপ দৈত্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় এটা হারিয়ে গিয়েছে। তার মানে অরা সোফির কথা জানে। অরা এখন সোফিকে খুঁজে পেলে খেয়ে ফেলবে। বিএফজি সোফিকে বাঁচানোর জন্য ওকে তার ওর অনাথ আশ্রমে ফেরত রেখে যায়। তবে সোফি এটা মানতে রাজি না। সে জোর করে বিএফজির সঙ্গে আবার রওনা হয়।

বাড়ি ফিরে বিএফজি আর সোফি দেখে দুষ্ট দৈত্যরা বাড়িঘর তছনছ করে ফেলেছে। বিএফজির যত জমিয়ে রাখা স্বপ্ন, স্বপ্ন মিলানোর যন্ত্রপাতি সব ভেঙ্গেচুরে সোফিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সোফি নিজেকে লুকাতে লুকাতে একটা ঘর খুঁজে পায় যেখানে ওর বয়সী একটা ছেলের জিনিসপত্র সাজানো। ও বাচ্চাটাও আগে বিএফজির সঙ্গে থাকতো তবে দুষ্ট দৈত্যরা ওকে খেয়ে ফেলেছে।

সোফি আর বিএফজি মিলে বুদ্ধি আটে ওরা ব্রিটেনের রাণীর সাহায্য নিবে। কীভাবে নিবে, এই বিশাল দৈত্যকে দেখলে রাণীর সৈন্যরাই বা কী করবে আর সোফির মতো ছোট ঘর পালানো মেয়েকেই বা কে বিশ্বাস করবে এটা জানতে হলে তোমাদের দেখতে হবে স্টিভেন স্পিলবার্গের সিনেমা বিএফজি।

বিএফজি সিনেমাটা যদিও ২০১৬ সালে মুক্তি পায় তবে এই সিনেমাটার গল্প রোয়াল ডাল সেই ১৯৮২ সালেই লিখে গিয়েছেন। আর রোয়াল ডালের গল্প মানেই তো অন্য কিছু, সবার শোনার বাইরে সবার জানার বাইরে একটা পৃথিবীর গল্প। সেটা যদি স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো পরিচালকের হাতে সিনেমা হয় তবে সেই সিনেমা না দেখে বসে থাকা সম্ভবই না। বিএফজির অসাধারণ দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখে ফেলতে পারো এই সিনেমাটি।