দুধ-ভাত

‘ছোট বন্ধু’ রাজনের এটা একটা বিরাট সমস্যা যে সবাই ওকে দুধ-ভাত মনে করে। এই বিষয়টা নিয়ে ও অনেক ভেবেছে খেলাধুলার সঙ্গে দুধ-ভাতের সম্পর্কটা কোথায়। আসলে ভাত খাওয়ার সময় তো শুধু দুধভাত কেউ খায় না। মাছ মাংস সবজি দিয়ে খায় আসল ভাত। তারপর স্বাদের জন্য খাওয়া হয় দুধভাত। দুধভাত খেলেও হয়, না খেলেও সমস্যা নেই।

রাসয়াত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2017, 10:08 AM
Updated : 18 March 2017, 10:08 AM

রাজনকে সবাই বলে ‘ছোট বন্ধু’। সে সবার ছোট। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট, খেলার সঙ্গীদের মধ্যেও সবার ছোট। এই ছোট হওয়ার প্রধান সমস্যা হলো, সব কাজে তাকে হতে হয় দুধ ভাত। তা এই দুধ ভাত কি সব সময় খাওয়া যায়? তাই খেলতে গেলেও সবসময়ে রাজনের ভাগ্যে খেলা জুটে না। এই তো সেদিন ‘মাংস চোর’ খেলা হলো। বলা হলো রাজন দুধ ভাত, সে নাকি দুই দলেই খেলবে। এটা কি কোনো কথা হলো! 

ঠিক এমন ঘটনা রাজনের সঙ্গে নিয়মিত ঘটে। আরেকদিন খেলা হলো ক্রিকেট। বলা হলো, রাজন নাকি দুই দলে শুধু ব্যাটিং করবে! এদিকে ওভার শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পরে কোনো দলেই আর তাঁর ব্যাটিং করা হলো না। এর থেকে তো দুই দলে ফিল্ডিং করলেও ভালো ছিল। অন্তত মাঠে থাকা যেতো বসে থাকতে হতো না। কিন্তু এই ছোট মানুষের যন্ত্রণা গুলো কে শুনে বল তো! অথচ রাজনকে দুধভাত হিসেবে না নিয়ে ঠিকঠাক ভাবে নিলে রাজন কি আর খেলতে পারত না!! সে কি ব্যাট হাতে রান নিতে পারবে না? সে কি ফিল্ডিং করতে পারবে না? ছোট বলে কি ওর হাত পা নেই? বুদ্ধি নেই?

রাজন অনেক কষ্ট করে চিন্তা করেও মনে করতে পারল না তাকে কখনও কোনো খেলায় নেওয়া হয়েছে কি-না, যেখানে সে দুধভাত না। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারল না। অথচ পাড়ার বিপ্লব ভাই সব খেলায় ক্যাপ্টেন থাকেন। কী যে ভালো লাগে দেখতে ! মনে হয় আহা, যদি হতে পারতাম বিপ্লব ভাইয়ের মতো ক্যাপ্টেন!

একদিন রাজন গিয়ে সাহস করে বিপ্লব ভাইকে বলল, বিপ্লব ভাইয়া, বিপ্লব ভাইয়া, আজ কিন্তু আমি আর দুধভাত থাকব না, আজ আমায় খেলায় সিরিয়াসলি নিতে হবে। বিপ্লব ভাই বলেন, সে কী রে! তুই তো ছোট! তোকে কীভাবে সিরিয়াসলি নিবে! তুই দুধভাত। আগে বড় তো হ!

কত বড় হব বলেন? আমার তো মনে হয় আমার বয়সে আপনি দুধভাত থাকতেন না। আর খেলতে না নিলে খেলা শিখব কীভাবে!

তাও তো ভাল বলেছিস। আচ্ছা ঠিক আছে তুই খেল। তুই মুরগী ভাত।

আজকে দুধভাত থেকে পদোন্নতি পেয়ে ‘মুরগী ভাত’ হয়ে গেল রাজন। কিন্তু ব্যাটিং এ নামার সুযোগ আর মেলে না। রাজনের আগ পর্যন্ত সবাই ব্যাটিং পেয়ে ওভার শেষ করে ফেলল। রাজন আজ মুরগী ভাত হলেও বোলিং এর সময় তাকে কেউ বোলিং দিল না। আর ফিল্ডিং-এর সময় মিস ফিল্ড হওয়ায় বিপক্ষ দল ২-৪ টা রান বেশি পেল, একটু গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচও ফসকে গেল। বিপ্লব ভাই তখন রেগে গিয়ে বললেন, তোকে খেলতে নেওয়াই ভুল হয়েছে তুই দুধভাতই ঠিক ছিলি।

রাজনের সেদিন খুব মন খারাপ হলো। বাসায় ভালমতো ঘুম হলো না। বিছানায় শুয়ে বালিশের চারদিক এপাশ ওপাশ করতে লাগল। পরেরদিন সকালে লজেন্স কোম্পানি থেকে লোক আসল। রাজন খুব অবাক করে বলল আমি কি লটারি পেয়েছি? লজেন্স কোম্পানির লোকেরা বলল, অনেকটা তাই রাজন। তুমি একটি অফার জিতেছ। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে খেলার অফার। মাঠে চলে আসো, সে তোমাকে ৩ টি বল করবে , তুমি তাকে ৩ টি।

রাজন নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। প্রস্তুত হয়ে সে মাঠে গিয়ে দেখে আসলেই সাকিব আল হাসান সেখানে, নেটের মধ্যে বল করছে। রাজন কে প্যাড পরিয়ে দেওয়া হলো। প্রথম বল করল সাকিব, খুবই আস্তে, দুধভাত  টাইপের বল। রাজন বলল, এ কী এভাবে কেন! আমি কি দুধভাত নাকি?

সাকিব বলে, রাজন তুমি তো ছোট! আমি ঠিকভাবে বল করলে তুমি ব্যথা পেতে পারো।

রাজন বলল, না হবে না, সিরিয়াস বল করেন।

সাকিবের বাকি ২ বলে রাজন ২ বার আউট হয়ে গেল। তারপরেও রাজন খুব খুশি , বলল আমি দুধভাত না।

সাকিব বলল, আচ্ছা আস আমি তোমাকে আরেকটা বল করি।

সাকিবের পরের বলটা ছিল আর্মার, এই বলটা রাজন চিনে, টিভিতে অনেকবার দেখেছে, কী করে যেন রাজন ব্যাট দিয়ে ঠেকিয়ে দিল।

সাকিব খুব জোরে হাততালি দিল। বলল, এটাকে আমরা বলি কনফিডেন্স।

রাজনও খুব খুশি, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে দূর থেকে বিপ্লব ভাইও তালি দিচ্ছেন।

সাকিব চলে যাওয়ার আগে রাজনকে বলে গেলেন, জান আমিও একসময় দুধভাত ছিলাম। সবাই শুরুতে দুধভাত থাকে। কিন্তু চেষ্টার কারণে মানুষ অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। তুমিও পারবে।

পরেরদিন থেকে বিপ্লব ভাই রাজনকে ঠিকমত খেলায় নিত। বর্তমানে রাজন পাড়ার দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান।