ডেন্টিস্টদের দিন

দাঁতে ব্যথা হলে ব্যথার চেয়েও যে ভাবনায় আমরা বেশি উদ্বেগ করি তা হলো, এখন ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে। ডেন্টিস্টের চেয়ারে আলোর নিচে বসে উপর থেকে মুখোশ পরে যন্ত্রপাতি নিয়ে এগিয়ে আসা ডেন্টিস্টের মুখ যেন ভৌতিক কোনো সিনেমার দৃশ্য। তবে ডেন্টিস্টরা যদি না থাকতেন তবে ব্যথার ভূত জীবনেও পিছু ছাড়ত না, কে জানে দাঁতটাই হয়তো ফেলে দিতে হতো!

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2017, 05:01 AM
Updated : 6 March 2017, 05:01 AM

প্রাচীনযুগে যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান এত উন্নত হয়নি, মানুষ আলাদা আলাদা অসুখের জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসকের কাছে যায় না কারণ এত গভীরভাবে কোন অসুখের কথা মানুষ জানেই না, প্রায় তখন থেকে দাঁতের চিকিৎসকদের পেশাটা মূল চিকিৎসা থেকে আলাদা করে ভাবা হতো। বলতে পারো বিশেষায়িত বিভাগের মধ্যে দাঁতের বিভাগই প্রথম নিজেদের গুরুত্ব এবং অবস্থান তৈরি করে।

দাঁতের স্বাস্থ্য সব সময়ই মানুষের জন্য একটা সমস্যার বিষয় ছিল। তো সমস্যা তৈরি হলে হলে যেটা হয় আর কি সবার সে বিষয়ে একটা আগ্রহের জায়গাও তৈরি হয়। সবাই সেই সমস্যা সমাধান করতে চায়। প্রাচীন সব সভ্যতার নিদর্শনের সাথে দন্ত চিকিৎসার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে যেমন, মিশরের মমিদের দাঁতে শৈল চিকিৎসার নিদর্শন আছে।

পৃথিবীর প্রথম ডেন্টিস্ট যার কথা ইতিহাসে লেখা আছে তার নাম, হ্যাসি রা (Hesy Ra)। ধারণা করা হয়, খৃষ্টপূর্ব ২৬০০ সালের দিকে প্রাচীন মিশরে তিনি বাস করতেন এবং মানুষের দাঁতের চিকিৎসা করতেন। 

যখন দাঁতের চিকিৎসা মোটামুটি গোছানো কোনো পেশার রূপ পায়নি সেই সময়টা আসলেই কঠিন ছিল। সেই সময় নাপিতদের চুল দাড়ি কাটার পাশাপাশি দাঁত তোলার কাজটাও করতে হতো। যখনই কারও দাঁত বেশী ঝামেলা করত, চট করে নাপিতের কাছে চলে যেত, নাপিত কোনো কিছু না ভেবে টুক করে দাঁতটা তুলে ফেলত।

টুক করে দাঁত তোলার কথাটা আসলে একটা উপমা। দাঁত কিছুতেই টুক করে তোলা যায় না এটি আমাদের শরীরের কংকালের সাথে সংযুক্ত থাকে। মানুষ মরে গেলে যখন চামড়া মাংস সব পচে মাটির সাথে মিশে আয় তখন দাঁত দিব্যি হাড়ের সাথে লেগে থাকে। বুঝতেই পারছ, এর বাধন কত শক্ত। তখন না ছিল অজ্ঞান করার সঠিক ওনো ব্যবস্থা, না ছিল কোনো সঠিক যন্ত্রপাতি। তাই দাঁত তোলা কাজটা খুব কঠিন ছিল আর যার দাঁত তোলা হতো তার দুর্ভোগের কথা আর নাই বলি। দাঁত তুলতে গিয়ে মরে যাওয়াও বিরল ছিল না।

এ যুগে এসে দাঁতের চিকিৎসা অনেক সহজসাধ্য হয়েছে। দাঁতের ডাক্তাররা অনেক গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ তৈরি করেছেন যা আমাদের এই কষ্টগুলো লাঘব করেছে। পাশাপাশি সারা পৃথিবীতে থাকা ডেন্টিস্টরা নিজেদের মধ্য একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন, তারা একে অপরের আবিষ্কৃত পদ্ধতি নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করতে পারেন। তাই এক জায়গার উন্নতি ম্যানে সব জায়গারই উন্নতি। আবার এখন দাঁতের চিকিৎসা মানেই দাঁত তুলে ফেলা না। দাঁতের নিয়মিত দেখাশোনা করা, দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নতি করা ইত্যাদি বিষয়েও তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দাঁত তোলার মতো কঠিন অবস্থা আমরা এড়াতে পারছি সহজেই। 

তো এই দিনটি আমরা কীভাবে উৎযাপন করতে পারি? খুব জরুরী প্রশ্ন। এ দিন উৎযাপন করতে হলে প্রথমেই এখন পর্যন্ত যে কয়জন চিকিৎসক আমাদের দাঁতের চিকিৎসা করেছেন, আমাদের দাঁতকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। এরপর তাদের এই কঠিন কাজকে সহযোগিতা করার জন্য নিজের দাঁতের বিষয়েও যত্নশীল হতে হবে। সম্ভব হলে আজকে বা এ সপ্তাহেই কোনোদিন একবার দাঁত দেখিয়ে আসা যায়। কারণ সচেতনতা সব সময়ই সমস্যাকে দূরে রাখে।