শতবর্ষ পেরুনো জাদুকর

১৯০০ সাল। আমেরিকার শিকাগো থেকে মে মাসের ১৭ তারিখে জর্জ এম হিল কোম্পানি একটি বই প্রকাশ করে। লেখক এল ফ্রাংক বাউম ছোটদের রূপকথা গোছের বই। সেখানে একটা ছোট মেয়ে আছে, তার কুকুর আছে, আর আছে আজব আজব সব চরিত্র। অন্য সব রূপকথার গল্পের মতো এইখানেও অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। তবে এইসব অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনা ছিল বইটি কিছুদিনের মধ্যেই বইটির প্রথম এডিশনের ১০ হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেলো। তবে এটাই গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হয়, গল্প তখন কেবলই শুরু।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 10:09 AM
Updated : 26 Feb 2017, 10:09 AM

এত কথার মধ্যে আমি যে কথাটি এখনও বলিনি তা হলো বইটির নাম। তখনকার সময়ে তো বটেই এখনকার যুগেও এই বইটি চিনে না বা পড়েনি এমন লোকের সংখ্যা পাওয়া দায়! একশ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও “দ্যা উইজার্ড অফ ওজ” শিশু সাহিত্য সবচেয়ে আলোচিত একটি বই।

গল্পটা শুরু হয় ছোট্ট মেয়ে ডরথিকে নিয়ে। ওর বাড়ি আমেরিকার ক্যানসাস নামক রাজ্যে। সেখানে ডরথি ওর দুষ্টু কুকুর টোটোকে নিয়ে ওর চাচা আর চাচীর সাথে বাস করে একটা কৃষিভূমিতে। সারাদিন ডরথি আর টোটো ক্ষেতে মাঠে দৌড়ে বেড়ায় আর অনেক অনেক আনন্দে থাকে। একদিন ডরথির চাচা চিৎকার করে ডরথি আর টোটোকে মাটির নিচের ঘরে লুকাতে বলে। ওদের বাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে ভয়ানকে একটা ঘূর্ণিঝড়।

ডরথি দৌড়ে আগে টোটোকে বাচাতে যায়। কিন্তু দুষ্টু টোটোর জন্য ডরথির ঘরে ঢুকতে দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণ ঘূর্ণিঝড় ডরথিদের বাড়িতে চলে এসেছে। মাটির নিচের ঘরে ঢোকার আগেই ঘূর্ণিঝড় ঘরসহ ডরথি আর টোটোকে উড়িয়ে নিয়ে যায় বহু দূরে।

ঝড় যখন থামে তখন ডরথি নিজেকে অজানা একটা জায়গায় খুঁজে পায়, দরজা খুলে বের হতেই খুব সুন্দর একজন মহিলা ডরথিকে ওজ নামের এক রাজ্যে স্বাগত জানায়। এই সুন্দর মহিলার নাম গ্লিন্ডা। সে একজন পরী। গ্লিন্ডা ডরথিকে অনেক ধন্যবাদ জানায়, ডরথি নাকি পুবের ভয়ানক কোন ডাইনীকে মেরে ফেলেছে। ডরথি অবাক হয়ে দেখে ওর বাড়ির নিচে পরে সেই ডাইনী মরেছে। ও আসলে কিছুই করেনি।

পুবের ডাইনীর উপর সবাই খুব রেগে ছিল। এক্ষণ সে মরে যাওয়ায় ডরথিকে গ্লিন্ডা অনেক অভিনন্দন জানায়। সাথেও এও জানায়, পুবের ডাইনীর সুন্দর রূপালী জুতাখানি এখন থেকে ডরথির। তবে ডরথি এইসব কিছুই চায় না। সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। গ্লিন্ডা অবশ্য ডরথির বাড়ির পথ সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না। তবে গ্লিন্ডা ডরথিকে পরামর্শ দেয় হলুদ পথ ধরে পান্নার রাজপ্রাসাদে যেতে। সেখানে ওজ রাজ্যের জাদুকর থাকে। গ্লিন্ডার মতে শুধু সেই ডরথিকে সাহায্য করতে পারবে অন্য কেউ নয়।

গ্লিন্ডার দেখানো পথ অনুসরণ করে ডরথি আর টোটো রওনা হয় ওজ রাজ্যের জাদুকরের সাথে দেখা করতে। পথে তার দেখা হয় একটা কাকতাড়ুয়ার সঙ্গে। কাকতাড়ুয়ার মনে খুবই দুঃখ কারণ তার বুদ্ধি নেই। তাই মস্তিষ্ক চাইতে সেও রওনা হয় ডরথিদের সাথে। তিনজনের এই দলের সামনে পরে নিষ্ঠুর এক কাঠুরে। সে আবার টিনের তৈরি। কাঠুরে খুবই নিষ্ঠুর কারণ তার হৃদয় নেই। কাঠুরেও সঙ্গী হয় এই দলের।

চারজনের দলটি যখন হলুদ পথ দিয়ে প্রাসাদ-মুখী হয় তখন তাদের আক্রমণ করে বসে একটা সিংহ। তবে এ সিংহও যেমন তেমন সিংহ নয় সে একটি ভীতু সিংহ। ডরথিই উল্টো সিংহকে পরামর্শ দেয় ওদের সাথে যোগ দিয়ে ওজের জাদুকরের কাছে গিয়ে সাহস চাইতে। সবাই মিলে সব বাধা বিপত্তি পার করে পান্নার প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছায়।

পান্নার প্রাসাদে ওজের জাদুকর ওদের সব দাবীই শোনের এরপর তিনি শর্ত দেন যদি ওরা পশ্চিমের ডাইনীকেও মেরে আসতে পারে তবেই ওদের সব কিছু দেওয়া হবে।

ডরথি আর তার দল আবার রওনা হয় পশ্চিমের দিকে। কিন্তু পশ্চিমের ডাইনী পুবের ডাইনীর চেয়েও ভয়ানক। সে ডরথিদের দলকে দেখেই বুঝে ফেলে ওদের উদ্দেশ্য কী! তাই জলদি তার বানর সৈন্য দিয়ে ডরথিদের তুলে নিয়ে এসে বন্দী করে। এখন কীভাবে ডরথি এই ডাইনীর থেকে নিজেদের রক্ষা করবে আর কীভাবেই বা বাড়ি ফিরে যাবে এই নিয়ে জমজমাট গল্প “দ্যা উইজার্ড অফ ওজ”।

বইটি যখন বের হয় তখন কিন্তু বইটির নাম “দ্যা উইজার্ড অফ ওজ” ছিল না। এল ফ্রাংক বাউমের লেখা আর ডাব্লিউ ডাব্লিউ ডেনসলো’র আঁকা চমৎকার ছবি ওয়ালা বইটির নাম ছিল, "দ্যা ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অফ ওজ” প্রথম এডিশনের বইটির গল্পটা যেমন আনন্দদায়ক ছিল ছবিগুলোও ছিল ঠিক সেরকম আকর্ষণীয়। ছোট্ট ডরথি, তার কুকুর টোটো, বুদ্ধিহীন কাকতাড়ুয়া, হৃদয়হীন টিনের কাঠুরে আর ভীতু সিংহের অসাধারণ চিত্রকলা বইটিকে নিয়ে যায় সাফল্যের এই চূড়ায়। শুরুতে তো জনপ্রিয় ছিলই, ১৯৩৯ সালে এই কাহিনী নিয়ে একটি গীতি চলচ্চিত্র তৈরি হয়। সেই চলচ্চিত্রটির নামই মূলত ছিল, দ্যা উইজার্ড অফ ওজ। এর পর সেটা এতই জনপ্রিয় হয় যে বইটির নামও উইজার্ড অফ ওজ হয়ে যায়।

সারা পৃথিবীতে এই বইটির এখন অনেক রকমের প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে, অনেক অনেক ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। তবে যে জিনিসটির আবেদন মোটেই কমেনি তা হলো গল্পটির আকর্ষণ। আজও ছোট কোনো ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে বড় কোনো পরিণত একটা মানুষ এই গল্প পড়তে পারে এক নিঃশ্বাসে।