স্পিরিটেড আওয়ে

লোকটার নাম হায়াও মিয়াজাকি। তার স্টুডিওর নাম গিবলি। স্পিরিটেড সিনেমায় অবশ্য তিনি কোনো চরিত্র নন। তিনি হলেন এই সিনেমার স্রষ্টা। অ্যানিমেটেড মুভির জগতের সম্রাট বলা যায় তাকে। যখনই কোনো সিনেমা তৈরি করেন তখনই একদম জাদু মন্ত্রে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখেন। তার ঝুলিতে অনেক অনেক মনোমুগ্ধকর সিনেমা আছে তবে স্পিরিটেড আওয়ে একদম সবার থেকে আলাদা এবং অনন্যও।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 02:30 PM
Updated : 22 Feb 2017, 02:30 PM

গল্পটি শুরু হয় চিহিরো নামে একটি মেয়েকে নিয়ে। চিহিরোর বাবার অফিসে বদলী হয়েছে। তাই অদেরকেও বাড়িঘর বেঁধে ছেঁদে রওনা হতে হয়েছে অন্য একটি শহরের উদ্দেশ্যে। চিহিরো একটু ভীতু ধরণের আগের শহর ছেড়ে আসার কারণে সে একটু দুঃখীও। এদিকে চিহিরোর বাবা গাড়ি চালাতে চালাতে পথ ভুল করে অদ্ভুত একটা স্টেশনের সামনে গাড়ি নিয়ে আসে।

শুরুতেই বলেছি চিহিরো একটু ভীতু আর খুব সাবধানী। এমন জনমানব শূন্য স্টেশন দেখে সে ঘাবড়ে গেলো। আর এটা যে ভীতিকর কিছু না তা বোঝাতে চিহিরোর বাবা মা নিজেরা ভিতরে চলে গেলেন। স্টেশনের ঐ পাড়ে বিরাট খোলা মাঠ। সেই মাঠ ধরে বাবা-মা দৌড়ে বেড়াতে লাগলেন। মাঠের পরেই একটা শহর। সেই শহরটাও খুব অদ্ভুত।

সুন্দর সাজানো-গোছানো একটা শহর। সেখানে খাওয়ার দোকান আছে। চারিদিকে রান্না হচ্ছে। কেমন যেন একটা উৎসবের প্রস্তুতি। কিন্তু শহরটায় একটা জরুরী জিনিস নেই এই বিষয়টাই চিহিরোকে খুব অস্বস্তি বোধ করাচ্ছে। তবে চিহিরোর বাবা মা খুবই দারুণ আছে। শহরটায় যে একটিও মানুষ এমনকি অন্য কোনো পশু পাখিও নেই এইসব তাদের মোটেই বিচলিত করছে না। এসব বলে বলে বিরক্ত হয়ে চিহিরো একটু দূরে আগায়। ফিরে এসে দেখে কী আজব কাণ্ড! বাবা মা যেন ওকে চিনতেই পারছে না। তারা এক মনে খেয়েই যাচ্ছে। ঠিক তক্ষুনি সূর্য ডুবে গেলো আর কী যেন কীভাবে চিহিরোর বাবা মা মানুষ থেকে শূকরে পরিণত হলেন।

পাগলের মতো এদিক সেদিক ছুটতে ছুটতে চিহিরো একজন মাত্র মানুষকে খুঁজে পেলো। ওর বয়সেই একটা ছেলে। তার নাম হাকু। এরকম আজব একটা পরিবেশে মানুষ দেখেও চিহিরো বেশ ভয় পেলো। তবে ভয়ের অনেক কিছু তখনও জানা ওর বাকি ছিল। হাকুর কাছে চিহিরো জানতে পারলো এটা কোনো সাধারণ গ্রাম নয়। এটা প্রেতপুরী। জগতের যত ভূত প্রেত আছে তারা এই গ্রামে বেড়াতে আসে। এটি আসলে প্রেতদের সরাইখানা।

প্রেতরাই মোহবলে চিহিরোর বাবা মাকে শূকর বানিয়ে রেখেছে। যদি চিহিরো তাদের মুক্ত করতে না পারে তবে তাদের দিয়েই প্রেত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হবে। হাকু নিজেও মন্ত্রবলে বন্দী। হাকুর মতো আরও অনেক বন্দী আছে যারা এই সরাইখানার অতিথিদের সেবা করে। বলতে পারো তারা সরাইখানার কর্মচারী। তাদেরও এই জীবন থেকে কোনো মুক্তি নেই।

হাকু যদিও চিহিরোকে সবার মধ্যে লুকিয়ে ফেললো তবুও প্রেতরা ঠিকই একজন মানুষের গন্ধ পেয়ে গেলো। এদিকে কথায় কথায় হাকু শুধু উধাও হয়ে যায়। এমন বৈরী পরিবেশে বাবা মাকে নিয়ে বিপদে পরা চিহিরো কীভাবে উদ্ধার পাবে তাই নিয়ে আজব এই গল্প স্পিরিটেড আওয়ে।

এই গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে গল্পের চরিত্রগুলো। এমন অদ্ভুত চরিত্র আবার তারা যখন খুশি যা খুশি করে বসতে পারে। আর ভেবে দেখো এমন আজব জায়গায় যেখানে আশেপাশে সবাই ভূত প্রেত দৈত্য দানো সেখানে একটা ছোট্ট মেয়ের কেমন দশা হতে পারে! এরকম টান টান উত্তেজনা নিয়ে সিনেমা স্পিরিটেড আওয়ে যেখানে প্রতিটা মোড়ে দাড়িয়েই মনে হবে এই বুঝি সব গেলো! ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে তবে একটুও আকর্ষণ কমবে না সে আমি হলফ করে বলতে পারি।