হালুম ছাড়া সিংহ

আচ্ছা তোমরা কি সুকুমার রায়ের বাবু ‘রাম সাপুড়ে’ ছড়াটি পড়েছিলে? সেখানে একটা সাপের আবদার করা হয়েছিল তার কথা মনে আছে কি? ঐ যে—

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2017, 07:15 AM
Updated : 30 Jan 2017, 07:17 AM

যে সাপের চোখ নেই,

     শিং নেই নোখ্‌ নেই,

ছোটে না কি হাঁটে না,

     কাউকে যে কাটে না,

করে নাকো ফোঁস ফাঁস,

     মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ,

নেই কোন উৎপাত,

     খায় শুধু দুধ ভাত-

আজ আমরা সেরকম একটা সিংহের সঙ্গে পরিচিত হবো। সেই সিংহের না আছে কেশর না করে গর্জন। এই উৎপাত না করা শুধু দুধভাত খাওয়া সিংহের নাম হলো, কুগার। পাহাড়ে থাকে বলে কেউ কেউ এদের পাহাড়ি সিংহও বলে। আমেরিকায় সবাই এদের ডাকে ‘পুমা’ নামে।

পুমাদের বাস আমেরিকা মহাদেশে একদম কানাডা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত। সবখানে পুমাদের পাওয়া যায়। কানাডা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত না ভূপ্রকৃতি এক রকমের না আবহাওয়া। তাই সেখানে খাবারও নানান রকমের পাওয়া যায়। এতে পুমাদের কোনো সমস্যা হয় না। তৃণভূমি হোক কি পাহাড়, শীতল হোক কি একটু উষ্ণ, পুমারা দিব্যি নিজেদের অবস্থা মতো ব্যবস্থা করে নিতে পারে।

উত্তর আমেরিকার পুমাদের মূল খাবার হরিণ। তবে অন্য ছোট প্রাণীও ওরা খায়। যেমন, ইঁদুর খরগোস ইত্যাদি খাওয়া তো পুমাদের জন্য ডাল-ভাত। তবে অন্য বাঘ বা বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের মতো ওদের গন্ধ শোঁকার ক্ষমতা এত বেশি নয়। ওরা বলতে গেলে ভালো করে কোনো কিছুর গন্ধই পায় না। তবে পুমাদের দেখার ক্ষমতা আর শোনার ক্ষমতা অসাধারণ। তার চট করে শিকারকে খুঁজে বের করতে পারে একদম না শুঁকেই। তাও আবার ভোর বেলায় এমনকি সন্ধ্যার আবছা আলোতেও।

পুমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ তাদের চোখ বা কান নয় কিন্তু। পুমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ হলো পুমাদের পা। এগুলো এতই শক্তিশালী যে ওরা একবার একটা লাফ দিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ ফিট দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশে মহিলার মানুষের গড় উচ্চতা হয় পাঁচ ফিট। মানে আট বা নয়জন মহিলার উচ্চতার সমান দূরত্ব পুমারা হাসতে খেলতে পার করে ফেলতে পারে। 

গন্ধ শোঁকার ক্ষমতা কম থাকার কারণে পুমাদের শিকার করার সময় একটু সাবধানী হতে হয়। তারা শিকারকে সাবধানে খুঁজে বের করে চুপ করে এক জায়গায় বসে নজর রাখতে থাকে। এই সময়টা শিকারকে কিছুতেই তার উপস্থিতি বুঝতে দেয় না। যখনই শিকার হাতের নাগালের মধ্যে আসে তখন দেয় ঝাপ। শিকারকে মেরে ফেলার পরেই কিন্তু পুমারা খাবারটা একেবারে সবটুকু খেয়ে ফেলে না। যা খাওয়ার খেয়ে তখনকার মতো খেয়ে চলে যায়। খাবারকে রেখে যায় পাতার নিচে কখনও কখনও মাটির নিচে ঢেকে-ঢুকে। এভাবে পুমারা একটা শিকারকে কয়েকদিন নিয়ে আরাম করে খায়।

আগেই বলেছি পুমারা তেমন তর্জন গর্জন দেয় না। তবে মহিলা পুমারা মাঝে মধ্যে যদি পুরুষ পুমা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখে তখন তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে উঠে যেন অন্যরা তাকে বাচাতে আসতে পারে।

মহিলা পুমাদের একসঙ্গে দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত বাচ্চা হয়। এই জন্মদানের কাজ হয় কোনো গুহার ভেতরে। জন্মের সময় বাচ্চাগুলোর শরীরে ছোপ ছোপ দাগ থাকে। নয় মাস মতো বয়সে এসে এই ছোপ ছোপ দাগ শরীরে মিলিয়ে যায়। জন্মের সময় বাবু পুমাগুলোর চোখ নীল থাকে। ১৬ মাস বয়সে এসে ওদের চোখও নীল থেকে হলুদ হয়ে যায়। এভাবে যখন একটা বাচ্চা পুমা ১৮ মাস বয়সে এসে পৌছায় সে নিজের কাজ নিজে নিজে করার ক্ষমতা অর্জন করে, তাই তখন সে মায়ের গুহা ত্যাগ করে নিজে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন শুরু করে।

যদিও পুমাদের লোকে পাহাড়ের সিংহ বলে তবুও ওদের চেহারা আর গড়নের সঙ্গে বাঘের মিল বেশি। শুধু একটু ছোট আর নাদুসনুদুস। ওদের ওজন হয় ৬৪ থেকে ২৬৫ পাউন্ডের মতো। দৈর্ঘ্য হয় তিন থেকে পাঁচ ফুট।  একটা পুমার জীবনকাল মাত্র ৯ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত হয়।