বায়স্কোপ

ভুলে যেও না তুমি কে।

>>মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 08:19 PM
Updated : 19 Jan 2017, 08:19 PM

মোয়ানা ছোট্ট একটা মেয়ে। গোলগাল, মিষ্টি, ভীষণ কৌতূহলী আর অনেক পরোপকারীও। মোয়ানারা বাস করে সাগর ঘেরা একটা সুন্দর শান্তিময় দ্বীপে। নাম মটুনুয়ি। সেই দ্বীপের মানুষের যা যা লাগে সব কিছুর যোগান দেয় দ্বীপ। মোয়ানার বাবা সেই দ্বীপের সর্দার। দ্বীপে মানুষ খুব মজায় আর আনন্দে আছে। সবাই মিলে মোয়ানাকে তৈরি করছে পরবর্তী সর্দারের দায়িত্ব নিতে।

ছোট্ট মোয়ানার সারাদিনের কাজ দ্বীপময় ঘুরে বেড়ানো, দ্বীপের মানুষের এমনকি পশু পাখিদেরও দেখভাল করা, আর দাদীর গল্প শোনা। মোয়ানার দাদী ‘তালা’ আজব এক বুড়ি। সে বাচ্চাদের আজব আজব গল্প শোনায়। নিজের মতো সাগর-পাড়ে গিয়ে কী যেন কার সঙ্গে আলাপ করে আর পানির সামনে নাচতে থাকে। মোয়ানার দাদীর গল্পে থাকে সাগরের দেবী তি ফিতির কথা। তি ফিতি সাগরের তলায় থাকে। সাগরকে উর্বরা আর দ্বীপদের সজীব রাখে। সেই গল্পে একটা উপ দেবতাও থাকে। উপ দেবতারা ঠিক দেবতা নয়। তারা অর্ধেক মানুষ। তালার গল্পের উপ দেবতার নাম ‘মাউয়ি’। সে খুবই শক্তিশালী। তার আছে একটা বাঁকানো অস্ত্র। সেটা দিয়ে সে অনেক অসম্ভব কাজ করতে পারে। একবার মাউয়ির কী খেয়াল হলো সে ঠিক করলো দেবী তি ফিতির হৃদয় নিয়ে মানুষকে দিয়ে দিবে। সেই হৃদয় ছিল একটা সবুজ পাথর। এই পাথর তি ফিতির শরীর থেকে খুলে নেওয়ায় তিফিতির শক্তি শেষ হয়ে যায়। আর সমুদের একের পর এক দ্বীপ জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে থাকে। 

এভাবে মোয়ানার ভালোই দিন কাটছে। একদিন সে দেখল একটা কচ্ছপের বাচ্চা দ্বীপে আটকা পরেছে। মোয়ানা অনেক যত্ন করে বাচ্চাটাকে সমুদ্রে পাঠাল, আর কী আজব ঘটনা, সমুদ্র সরে গিয়ে মোয়ানাকে নিজের ভিতরে নিয়ে নিলো। সমুদ্র হলো মোয়ানার বন্ধু। ছোট্ট মোয়ানা ভাবল এটা কোনো স্বপ্ন কিন্তু এটা যে কী ছিল তা বুঝতে মোয়ানাকে বেশ বড় হতে হলো।

মোয়ানা যেহেতু বড় হয়ে গ্রামের সর্দার হবে তাই তার বাবা সর্দার ‘টুই’ তাকে বেশ প্রশিক্ষণের মধ্যে রাখছিলেন। কিন্তু কেন যেন সাগর পাড়ের মানুষ হয়েও মোয়ানার সাগরে নামা নিষেধ। মোয়ানা সাগরের কাছে গেলেই ওর বাবা ভীষণ রেগে যান। আর মোয়ানার দাদী আজব বুড়ি তালা শুধু মোয়ানাকে সমুদ্রের কাছেই নিতে চান।

সমুদ্রে না গিয়েও মোয়ানার দিন গ্রামে ভালোই কাটছিল। গ্রামের সর্দার হওয়ার জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত করছে। মোয়ানা যখন মোটামুটি বড় হয়ে উঠেছে আর গ্রামের মানুষকে কাজে কর্মে বেশ ভালোভাবে নির্দেশ দিচ্ছে এমন একদিন দেখা গেলো মোয়ানাদের দ্বীপের সব নারিকেলের ভিতরে ঝলসে গিয়েছে। সেদিন জেলেরা সাগর থেকে কোনো মাছও পেলো না। মোয়ানা খাড়ির ঐ পাড়ে গিয়ে মাছ খুঁজে দেখতে চাইলে ওর বাবা ওকে সবার সামনেই বেশ বকে দিলেন।

মোয়ানার মা তাকে বুঝালেন বাবা তার মঙ্গল চান। কিন্তু পাগলী বুড়ি তালা মোয়ানাকে এক অন্য গল্প বলল। সেই তি ফিতি আর মাউয়ির গল্প। তালা মোয়ানাকে একটা জলপ্রপাতের পিছনে নিয়ে গিয়ে অনেক দিন আগে তাদের পূর্বপুরুষেরা কীভাবে সাগরে ভেসে বেড়াতো সেখান থেকে এই দ্বীপ খুঁজে বের করেছেন সেই গল্প বলল। সঙ্গে বলল মোয়ানার সাগরের সঙ্গে গভীর সংযোগের কথা। মোয়ানাকে সাগর বেছে নিয়েছে তি ফিতির হৃদয় প্রতিস্থাপন করার জন্য। এখন মোয়ানাকেখুঁজতেই গিয়ে মাউয়িকে খুঁজতে হবে এভাবে মোয়ানা আর মাউয়ি মিলে তি ফিতির হৃদয় জায়গামতো বসিয়ে দিলেই এভাবে আর দ্বীপগুলো ঝলসে যাবে না।

সর্দার টুই যথারীতি মেয়েকে সাগরে যেতে বাধা দেন। এদিকে তালা মৃত্যুশয্যায় বসে মোয়ানাকে তি ফিতির হৃদয় দিয়ে মোয়ানাকে পালিয়ে যেতে বলেন। মোয়ানা রাতের বেলা একটা ক্যানু পালিয়ে যায়। তারা দেখে তাকে খুঁজে বের করতে হবে মাউয়ি কোথায় থাকে!

ক্যানু একটা বিশেষ ধরণের নৌকা যা দিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়া যায়। তবে মোয়ানা মোটেই নৌকা চালাতে পারে না। সে নৌকা চালানো শিখেইনি। এর মধ্যে সমুদ্রে উঠে বিশাল ঝড়। কোনোক্রমে তার মুরগি ‘হেইহেই’ কে নিয়ে মোয়ানা ভেসে থাকতে চায়, কিন্তু কোথা থেকে বিশাল এক ঢেউ এসে মোয়ানাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

সকালে যখন মোয়ানার জ্ঞান ফিরে তখন সে নিজেকে একটা খালি দ্বীপে আবিষ্কার করে। সমুদ্রর সঙ্গে কিছুক্ষণ অভিমান করার পরে মোয়ানা বুঝতে পারে এটা আসলে মাউয়ির দ্বীপ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মাউয়ি আসে। মটুসটু আর লম্বা চুলের অসীম শক্তিশালী মাউয়ি। তবে মাউয়ি মোটেই দেবতা বা উপদেবতাদের মতো না। মাউয়ি খুবই মজার বেশি কথা বলা কারও কথায় কান না দিয়ে নিজেই সব বলে যাওয়া গোছের মানুষ। তার উপরে, সে নিজের প্রশংসায় নিজেই পঞ্চমুখ। মোয়ানা কী চায় না চায় এটা শুনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার নেই। সে শুধু মোয়ানার ক্যানুটা চায় কারণ এই দ্বীপে সে আটকা পরে আছে একটা নৌকার অভাবে বের হতে পারছে না। 

মাউয়ি মোয়ানাকে বলতে গেলে অগ্রাহ্য করেই নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পরে। তবে নৌকা নিয়ে আর মাউয়ি যাবে কই সেই সমুদ্রেই তো। সমুদ্র যে মোয়ানার বন্ধু। মাউয়ি না মোয়ানাকে পিছু ছাড়াতে পারে না ওর থেকে বাঁচতে পারে। সমুদ্র ঠিক মাউয়িকে বন্দি করে ফেলে। এদিকে ওরা সমুদ্রে পরে ‘কাকামোরা’ নামের কতগুলো নারিকেল জলদস্যুর কবলে। সেই জলদস্যুর দলও তি ফিতির হৃদয় চুরি করে নিতে চায়।

মোয়ানা অসম্ভব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেই জলদস্যুদের হাত থেকে সবুজ পাথরটি রক্ষা করে। এরপর সমুদ্র আর মোয়ানা মিলে মাউয়িকে বলতে গেলে কাবু করেই রাজি করিয়ে ফেলে তি ফিতির হৃদয় ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু সে হৃদয় ফিরিয়ে দিতে হলে মাউয়িকে খুঁজে বের করতে হবে তার বাঁকানো অস্ত্র, যেটা আছে দৈত্যদের আস্তানায়। সেই অস্ত্র ফিরে পেলেই মাউয়ি যুদ্ধ করতে পারবে  লাভা দৈত্য তে কা’র সঙ্গে। এ যুদ্ধে ওরা তখনই জিততে পারবে যখন তারা জানতে পারবে তারা আসলে কে, কী তাদের কাজ!

এখন কথা হলো চঞ্চল মাউয়ি কতক্ষণ এই সমস্ত ঝামেলা সহ্য করবে আর মোয়ানাও এত বড় যুদ্ধ কীভাবে জিতে যাবে।

এগুলো জানতে পাবে মোয়ানা নামের সিনেমাটিতে। ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেটেড স্টুডিওর তৈরি এই সিনেমাটি ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে।  ২০১৬ সালনের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়ার পরে এই সিনেমাটি ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ব্যবসা করেছে। তবে অর্থের মূল্য না গিয়ে যদি লোক প্রিয়তার কথা বলি তবে IMDb রেটিং ১০ এর মধ্যে ৮ আর রটেন টমেটোতে ৯৫%। তাহলে বুঝতেই পারছ এই সিনেমাটা কত জমজমাট আর মজাদার হবে।