উঁহু

অদ্ভুত এক গ্রামে অদ্ভুত আবোলতাবোল সব লোকদের নিয়ে জমজমাট এক গল্প

>>মাসুম আহমেদ আদিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2017, 11:24 AM
Updated : 17 Jan 2017, 03:41 PM

বই: উঁহু (অদ্ভুতুড়ে সিরিজ)

লেখক: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

প্রকাশকাল: ২০০৯

প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১০৩

মূল্য: ১৮০ টাকা

তোমরা তো ইতিমধ্যেই শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের সঙ্গে পরিচিত হয়েছো। সেখানে সব অদ্ভুত, এমনকি ভূতেরাও অদ্ভুত। মাঝেমধ্যে আবার সেখানে সায়েন্স ফিকশনও চলে আসে সেগুলোও খুব অদ্ভুত।  আজ এমন একটা অদ্ভুত গল্পই বলবো। গ্রামের গ্রামটার নামও খুব অদ্ভুত, পায়েসপুর।

সুখেই দিন কাটছিল পায়েসপুর গ্রামবাসীর। সে গ্রামের মানুষগুলো নিজ নিজে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বসে রিটায়ার্ড দারোগা রাধাগোবিন্দ নিজের আত্মজীবনী "দারোগার দীর্ঘশ্বাস" লিখছেন। হারাধনবাবু প্রতিদিন একটা করে জিনিস হারাচ্ছেন। হলধর ঘোষ নিত্যনতুন বিদঘুটে যন্ত্র আবিষ্কার করছেন। তার আবিষ্কৃত অটো-মিস্ত্রি, অটো-ইস্ত্রি, অটো-ঝি, ইন্ধনহীন-রন্ধন একটাও অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখেনি।

হলধর ঘোষের বাড়িতে প্রতিদিন সকালে গ্রামের বুড়োদের আড্ডা বসে। তার আবিষ্কার দেখার জন্য কেউ আসে না, চা আর চিড়ে ভাঁজা পাওয়া যায় বলেই আসে। আড্ডাতে কদিন ধরেই নগেনবাবুর মন খারাপ। তিনি আড্ডায় থেকেও যেন নেই। কারও সঙ্গে দুদিন ধরে কোনও কথা বলেনি। যেন মৌনব্রত পালন করছেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন মনের ভুলে বলে বসলেন "৭৫ বছর পর ফিরে এলো"। আর যায় কোথায়, সবাই চেপে ধরল কী হয়েছে বলার জন্য। বাধ্য হয়ে তিনি বললেন।

আজ থেকে ৭৫ বছর আগে নগেনবাবুর বয়স যখন ১০, তাদের সংসারে ছিল টানাপড়েন। তিন বেলা খাওয়া জুটত না। তখন একদিন এক সাধুবাবা তাদের বাড়িতে এসে তার বাবার সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ কথা বলেন। যাওয়ার সময় একটা প্রদীপ দিয়ে বলে যান, এই প্রদীপ তোমার ভাগ্য ফিরাবে। আমি ৭৫ বছর পর এটা ফেরত নিতে আসব। তারপর থেকে আস্তে আস্তে তাদের দিন ফিরতে লাগল। নগেনবাবু কখনও প্রদীপটা ধরেও দেখেননি। বাবার কথামত সিন্ধুকে রেখে দিয়েছিলেন। দুদিন আগে ছেলেবেলায় দেখা সেই সাধুবাবা হাজির। প্রদীপের খোঁজ করতে গিয়ে নগেনবাবু দেখেন সিন্ধুক খালি। চুরি গেছে প্রদীপ।

একথা শুনে সাধুবাবা রেগে গেলেন। বলে গেলেন সাত দিনের মধ্যে প্রদীপের ব্যবস্থা না করলে নগেনবাবু ঝাড়ে নির্বংশ হয়ে যাবেন। বাড়ি থেকে বের করে দেয়াতে দানু পায়েসপুর এসে উঠেছে। দানু খুব লম্বা, রোগা আর ঢ্যাঙা। নগেনবাবুর মেয়ের বাড়িতে কাজ করে, বিনিময়ে মাথা গোজার ঠাই আর একটু খাদ্য পেয়েই খুশি। পাড়ার ফুটবল ক্লাবে প্লেয়ার শর্ট থাকায় একদিন দানুকে নামানো হয়। লম্বা দানু দৌড়াতে গিয়ে বারবার পড়ে যায়, ফের উঠে আবার দৌড়ায়। হেড করলে বল বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ওর কাণ্ডকারখানায় সবাই হেসে খুন। তারপরও কীভাবে যেন দুটা গোল দিয়ে দেয় দানু। আন্তঃজেলা লিগের খেলাতেও হাবিবপুরের বিপক্ষে পায়েসপুরের হয়ে খেলতে নামে দানু। সেদিনও পাঁচ গোল দিয়ে জিতিয়ে আনে পায়েসপুরকে।

এদিকে গ্রামের পালোয়ান বটেশ্বরের পেল্লায় শরীর। সারা শরীরে পেশী কিলবিল করে। লোকে খুব সম্মান করত আগে। কিন্তু দানু গ্রামে আসার পর থেকে তার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। সবাই বটেশ্বরকে না দেখার ভান করলে কী হবে? একদিন সেই প্রদীপ ওয়ালা সাধুবাবা বটেশ্বরকে প্রদীপের দৈত্য ভেবে ধরে নিয়ে যায়। তাকে বাঁচাতে রাধাগোবিন্দ দারোগা বের হলে, তাকেও আটকে রাখেন সাধুবাবা। গ্রামের সবচেয়ে লম্বা লোক বলে দানুকেও ধরে নিয়ে আটকে রাখে। বয়স হওয়াতে সাধুবাবা আসলে ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না তিনি কোনটা আসল দৈত্য।

নগেনবাবুর বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া প্রদীপ এমন একজনের হাতে পড়ে, যে দৈত্যের সাহায্যে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে চায়। তার কাছ থেকে প্রদীপ উদ্ধার করতে না পারলে নিস্তার নেই। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে? এসব জানতে পড়তে হবে 'উঁহু' বইটি।