তুষার পড়ে, কীভাবে পড়ে?

আমাদের দেশ বাংলাদেশ একটা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ। আমাদের দেশে আসলে কখনও তুষারপাত হয় না। তবে যেসব দেশ শীত মণ্ডলের দেশে সেখানে শীতে তুষারপাত হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। যেসব দেশ পৃথিবীর দুই মেরুতে অবস্থিত সেগুলোতে বলতে গেলে বছরের অর্ধেক সময়ই তুষারপাত হয় যখন তুষার পরে না তখনও সে জায়গাগুলো বরফে আবৃত থাকে। একই অবস্থা বড় উঁচু পর্বতমালা গুলোর। এগুলো এভাবে তুষার আবৃত থাকে মনে হয় যেন এগুলোর রঙই সাদা।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2017, 12:48 PM
Updated : 16 Jan 2017, 12:48 PM

এখন কথা হলো শীতের দেশে তুষার পরে আমাদের দেশে কেন পড়ে না। এর কারণ কি শুধুই তাপমাত্রা? জবাব হলো, হ্যাঁ শুধুমাত্র ওদের তাপমাত্রা অনেক নীচের দিকে চলে যায় বলেই ওদের দেশে তুষার পরে। কারণ তুষার এবং বৃষ্টি তৈরির পদ্ধতি আসলে একই। শুধুমাত্র তাপমাত্রার কারণে সেখানে রুষার পরে আর আমাদের বৃষ্টি।

এখন তো তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে আরে আমাদের দেশেও তো বরফ পরে, কেন বৃষ্টির সঙ্গে শিল পড়ে না? তাহলে তুষারের আমাদের দেশে পড়তে সমস্যা কই?

সমস্যাটা হলো টাইমিং। আচ্ছা এবার বিষয়টা খুলেই বলি।

পানি চক্রটা হলো অনেকটা এরকম, সূর্যের তাপে যতরকমের জলাশয়ের পানি বা পানির উৎস আছে তা থেকে পানি বাষ্পে পরিণত হয়। এরপর সেই বাষ্প বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে যায়। বাষ্পের সঙ্গে অনেক ধূলি কণাও থাকে, এই ধূলিকণাগুলোকে আশ্রয় করে বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে ঠাণ্ডা হওয়া বাষ্পরা মেঘ তৈরি করে এই মেঘ ঠাণ্ডা এবং ঘনীভূত হয়। এরপর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একদিন মাটিতে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে।

তুষারের ক্ষেত্রেও এটাই হয় শুধু পার্থক্য হচ্ছে জলীয়বাষ্প যে পরিবেশে গিয়ে জমাট বাঁধে তার থেকে তুষারের জমাট বাধার পরিবেশ অনেক বেশী শীতল হয়। এক্ষেত্রে আগে ধূলিকণাটিই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আগে বরফ হয়ে যায়। তারপর সেই বরফের গায়ে জলীয়বাষ্পের অণু যুক্ত হয়। সেই অণুর আর বরফ হওয়া ছাড়া উপায় কী থাকে বলো?

এভাবে শীতের দেশে জলীয়বাষ্প পানি না হয়ে সোজা বরফ হয়ে যায়। বরফ হতে গিয়ে বরফ কুচির খুব দারুণ কিছু আকার নেয় যেটাকে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন স্নো ফ্লেক্স। সে কথায় পরে আসি আগে বলি শীল কেন তুষার নয়। শীলের ক্ষেত্রেও আসলে বরফ হয় তবে এই ক্ষেত্রে বাষ্প ধূলিকণার উপর ভর করে শুরুতেই বরফ হয় না, আগে পানিই হয়। এরপর এই পানি মেঘের মধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে বরফ হয়। তাই শিলা বৃষ্টিতে দেখবে আস্ত আস্ত বরফ পরে যেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি নেই।

এখন বলি বরফ কুচির সুন্দর আকৃতি নিয়ে। বরফ কুচি বা স্নো ফ্লেক্সের আকৃতি খুবই সুন্দর হয়। অধিকাংশই ষড়ভুজ বা হেক্সাগন আকৃতির হয় এবং খুবই সুন্দর একটা নকশা তৈরি করে। বলতে পারো এটা প্রকৃতির একটা শিল্পকর্ম। এরকম কিছু বরফ কুচি নিয়ে বরফের ধুলোর মতো তৈরি হয়। বরফ পরে যেটা অনেকটা আমাদের বৃষ্টির মতোই তবে খুব হালকা আর নরম।

স্নো ফ্লেস্কের আকার ষড়ভুজ হওয়ার পেছনে দারুণ একটা বিজ্ঞান আছে। তোমরা যখন বড় হবে তখন পানির অণুর গঠন সম্পর্কে পড়বে। সহজভাবে যদি বলি, পানির অণু দুই পরমাণু হাইড্রোজেন আর এক পরমাণু অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এখন ওদের বন্ধটা অনেকটা এমন হয় H=O=H এটা আদতে দেখতে কোণ আকারে থাকে। এখন এই অণুর সঙ্গে অন্য একটা পানির অণুকে যুক্ত হতে হলে এমনভাবে জোড়া দিতে হবে যেন একটা ষড়ভুজ তৈরি হয়। সেই ষড়ভুজে নতুন করে পানির অণু যুক্ত হতে হলে সেই ষড়ভুজের কোণায় কোণায় একটা করে অণু বন্ধন তৈরি করে। আর এভাবেই তৈরি হয় অনন্য সুন্দর একটা নকশা। যেটা খালি চোখে দেখা যায় না তবে অতসী কাঁচের তলায় ঠিকমতো দেখা যায়।

স্নো ফ্লেক্সের আকার কেমন হবে তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞানীরা বলেন কোনো একটা স্নো ফ্লেক্স অন্যটার মতো দেখতে নয়। এর কারণ মূলত প্রতিটি স্নো ফ্লেক্সের পতনের পথ আলাদা হয়। তাদের অণুর পরিমাণও আলাদা থাকে, তাছাড়া তাপমাত্রারও তারতম্য হয়। ফলে প্রতিবারই নতুন এবং অনন্য সুন্দর একটা স্নো ফ্লেক্স পাওয়া যায়।

তবে তুষার দেখতে যতই সুন্দর হোক। শীতের দেশগুলোতে বরফে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্থবির হয়ে যায়। তখন তারা অপেক্ষা করে কবে বসন্ত আসবে।